মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্টের দাবি— খুন হওয়া বাবা-ছেলে সিপিএম-এর সমর্থক ছিলেন। বামফ্রন্ট বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছে, এসডিপিআই এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ইন্ধনে এই হিংসা ছড়ায়। বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জের ঘটনা এটি।
– কোলকাতা প্রতিনিধি

ওয়াকফ হিংসায় মুর্শিদাবাদে প্রাণ হারিয়েছেন হরগোবিন্দ দাস এবং তার ছেলে চন্দন দাস। এই নিয়ে বিজেপি সরব হয়েছে। আর এরই মাঝে মুর্শিদাবাদ জেলা বামফ্রন্ট দাবি করলো, খুন হওয়া বাবা-ছেলে সিপিএম সমর্থক ছিলেন। এদিকে বামফ্রন্ট বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছে, এসডিপিআই এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ইন্ধনে এই হিংসা ছড়ায়। বামফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘১১ এপ্রিল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে এস.ডি.পি.আই, ডব্লুউ.পি.আই, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংগঠন এবং তৃণমূল কংগ্রেস এই জমায়েতের ইন্ধন যোগায়। সুতি ২ নম্বর ব্লক এর সাজুর মোড়ে এবং সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ানে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের খন্ড যুদ্ধ শুরু হয়।আন্দোলনকারীরা আন্দোলনের নামে হিংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়।’
এদিকে পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বামফ্রন্টের তরফ থেকে বলা হয়, “আগাম খবর থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেরকম কোনো ভূমিকা গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশ প্রশাসন সঠিক ভূমিকা পালন করলে এই ধরনের ঘটনা হয়ত ঘটত না। কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ প্রশাসন। দীর্ঘক্ষণ আন্দোলন চলার পর শেষের দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে গুলি ছোড়ে বলেও শোনা যায়। সেই গুলিতে কয়েকজন জখম হয়েছে বলে জানা যায়। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ইজাজ সেখ নামে একজন মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয় এবং পরে সে মারা যায়। ১২ এপ্রিল দুপুরে ধুলিয়ানে একই পরিবারের ২ জন হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস মারা গেছে। এরা দু’জনেই সিপিআই(এম) সমর্থক ছিলেন। জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে মৃত পরিবারের সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।’
এরপর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ‘১২ এপ্রিল সকালে ধুলিয়ান বাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে বিজেপি’র নেতৃত্বে একটা মিছিল বের হয়। আগেরদিন এই ধরনের ঘটনার পর কেন মিছিলের অনুমতি দেওয়া হলো? ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামশেরগঞ্জ ব্লকের পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে রেষারেষি বাড়তে থাকে। দীর্ঘক্ষণ চলার পরেও প্রশাসনের ভূমিকা ভালো ছিলো না। প্রথম দিনের শেষের দিকে বিএসএফ-কে নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু ১২ তারিখ সকাল থেকে কোনো অজ্ঞাত কারণে বিএসএফ ছিলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে সবার মধ্যে। প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিজেপি – তৃণমূলের বাইনারি রাজনীতির সুযোগ করে দিতেই প্রশাসন নীরব থেকেছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের অপদার্থতার কারণে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার কারণে বিপদে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই ইস্যুতে আন্দোলনকে চাপা দিতেই বিভাজনের রাজনীতিতে মেতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আমরাও শুরু থেকেই ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি নিয়ম মেনে।’
এরপর প্রশাসনের কাছে বামফ্রন্ট দাবি জানায়, ‘এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত সামরিক বাহিনী নিয়োগ করে সামশেরগঞ্জ ও সুতি-২ ব্লকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দলমত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলার কাজে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। অবিলম্বে জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনকে জেলা স্তরে এবং প্রতিটি ব্লক স্তরে দ্রুত সর্বদলীয় সভা ডাকতে হবে। এই ঘটনায় মৃত ৩ জনের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।’