উল্লেখ্য, দ্য উইক ম্যাগাজিনে এনসিপি-এর যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ তাসনিম জারার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় ৯ জুন ২০২৫ তারিখে এবং ম্যাগাজিনটি শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে।
The Week (দ্য উইক) মূলত একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাপ্তাহিক সংবাদ-সারসংক্ষেপ ম্যাগাজিন। এর মূল শক্তি হচ্ছে— সারা সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে বড় বড় মিডিয়ায় যা প্রকাশিত হয়, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ, তুলনা, ও ব্যাখ্যা এক জায়গায় সাজিয়ে তুলে ধরা।

তাহলে প্রশ্ন: “দ্য উইক আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম?”
এটি “মূল সংবাদ উৎপাদনকারী মিডিয়া” নয়, বরং “সংবাদ বিশ্লেষণ ও সারসংক্ষেপ প্রদানকারী মিডিয়া”।
একে সরাসরি “BBC”, “Reuters”, “Al Jazeera”, “New York Times”–এর সমমানে ধরা যায় না।
কিন্তু নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠীর মধ্যে এর জনপ্রিয়তাভাগ রয়েছে।
এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
| কারণ | ব্যাখ্যা |
|---|---|
| ১) তথ্যের সারসংক্ষেপ | যারা অনেক নিউজ পড়তে না পেরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সারমর্ম জানতে চান, তাদের জন্য এটি কার্যকর। |
| ২) বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির তুলনা | একই বিষয়ের ওপর ডানপন্থী, বামপন্থী, কেন্দ্রপন্থী মিডিয়ার প্রতিবেদন— সব একসাথে বিশ্লেষণ করে। |
| ৩) নিজস্ব মতামতে কঠোর নয় | এটি নিজে খুব বেশি “সম্পাদকীয় অবস্থান” চাপিয়ে দেয় না; বরং বিভিন্ন মিডিয়ার বক্তব্য পাশাপাশি দেখায়। |
| ৪) নীতিনির্ধারক ও শিক্ষিত পেশাজীবীদের মধ্যে জনপ্রিয় | ব্যবসায়ী, গবেষক, কূটনীতিক, নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এর পাঠকসংখ্যা তুলনামূলক বেশি। |

তাহলে প্রভাবের দিক থেকে দ্য উইক-এর অবস্থান কোথায় দাঁড়ায়?
- Mass audience (সাধারণ জনগণ)-এর মধ্যে এর প্রভাব কম।
- Opinion leaders / educated urban audience-এর মধ্যে প্রভাব স্পষ্ট।
- এটি discourse framing–এ ভূমিকা রাখে, অর্থাৎ কোন বিষয়গুলো সপ্তাহের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ— সে বিষয়ে ধারণা দেয়।

এক লাইনে সারমর্ম
The Week “বড় মিডিয়ার খবর” বিশ্লেষণ করে, তাই এটি নিজে খুব বড় মিডিয়া নয়, কিন্তু যারা নীতি, গবেষণা ও বিশ্লেষণে আগ্রহী তাদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ন রেফারেন্স ম্যাগাজিন।
দ্য উইক-এর ৭ নভেম্বর (২০২৫) সংখ্যা শেখ হাসিনাকে যে বয়ানে তুলে ধরতে চেয়েছেঃ
দ্য উইকের কাভার স্টোরিতে শেখ হাসিনাকে এমন একজন নেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যিনি বাংলাদেশকে গত দেড় দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও স্থির নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার শাসনদর্শনের মূল দুই স্তম্ভ হলো উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা। তার দাবি, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িকতার জায়গায় তিনি আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোকে তিনি উন্নয়নের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন।
বাহিরের চাপ, বিশেষ করে পশ্চিমা গণতন্ত্র-বিষয়ক সমালোচনার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশ নিজেই নির্ধারণ করবে। তিনি মনে করেন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন অনেক সময় ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। এ কারণে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বিদেশি চাপকে তিনি “অপ্রত্যাশিত হস্তক্ষেপ” হিসেবে দেখেন।
পররাষ্ট্র নীতিতে তিনি ভারতকে বাংলাদেশের আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে গুরুত্ব দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমানা ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও জ্বালানি সহযোগিতা—এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করছে। একইসঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ মানবতার কারণে আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান বিশ্বশক্তিই করতে পারে।
শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, “আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না, মানুষের জন্য করি।” দ্য উইক এটিকে তার প্রচারমূলক রাজনৈতিক ভাষার কেন্দ্রীয় স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিরোধী দল দুর্বল হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা কমে গেছে, যা গণতন্ত্রের জন্য প্রশ্ন তৈরি করলেও তার অবস্থান শক্তিশালী করেছে।
সব মিলিয়ে, দ্য উইক শেখ হাসিনাকে এমন এক নেতা হিসেবে তুলে ধরেছে, যিনি উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রিত স্থিতিশীলতার সমন্বয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা নির্ধারণ করছেন।

