পৃথিবী যত খারাপ থাকে যুক্তরাষ্ট্র তত ভালো থাকে

বিধ্বস্ত পৃথিবী
পৃথিবীর অনেক জায়গা খারাপ থাকলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক সময় আরো শক্তিশালী বা সমৃদ্ধ হয়ে যায়। এর পিছনে কতগুলো যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

বিধ্বস্ত পৃথিবী

১. ডলারের বিশ্বমুদ্রা হিসেবে ভূমিকা

  • পৃথিবীর সংকট (যুদ্ধ, অর্থনৈতিক ধস, মুদ্রাস্ফীতি) হলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে মার্কিন ডলার কেনে।

  • এতে ডলারের দাম বাড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সস্তায় অন্য দেশের সম্পদ বা পণ্য কিনে নেওয়ার সুযোগ তৈরী হয়।

  • মার্কিন সরকার সহজে ঋণ নিতে পারে, কারণ, সবাই মার্কিন বন্ড কিনতে চায়।


২. জ্বালানি ও কাঁচামালের বাজারে নিয়ন্ত্রণ

  • সংকটের সময় তেল, গ্যাস, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে।

  • যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় কোম্পানি (ExxonMobil, Chevron, Cargill) এসব জিনিস উৎপাদন ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।

  • দাম বাড়লে তাদের লাভ বাড়ে, ফলে মার্কিন অর্থনীতি শক্তিশালী থাকে।


৩. অস্ত্র রপ্তানি থেকে লাভ

  • যুদ্ধ, সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে অস্ত্র কেনার চাহিদা বাড়ে।

  • যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। তারা মিত্রদের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে।


৪. বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ বাজার

  • অন্য দেশে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলে ধনী লোকেরা টাকা তুলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজার বা রিয়েল এস্টেটে ঢালে

  • এতে ওয়াল স্ট্রিট আরো শক্তিশালী হয়, ডলারের চাহিদা বাড়ে।


৫. মেধা পাচার (Brain Drain)

  • সংকটে থাকা দেশ থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানীরা ভালো জীবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।

  • এতে যুক্তরাষ্ট্র বিনামূল্যে মেধাবী কর্মী পেয়ে যায়, তাদের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ে।

কিছু বাস্তব উদাহরণঃ


উদাহরণ ১: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯–১৯৪৫)

  • ইউরোপ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো, শহর-শিল্প ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো।

  • কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তাদের মাটিতে কোনো বড় ধ্বংস দেখেনি।

  • তারা অস্ত্র, খাদ্য, জ্বালানি বিক্রি করে ভয়ানক লাভ করেছিলো।

  • যুদ্ধ শেষে ইউরোপ পুনর্গঠনের জন্য মার্শাল প্ল্যান দিয়ে সাহায্য দেখিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলো সেখানে বড় বাজার দখল করে।


উদাহরণ ২: ১৯৭০-এর তেলের ধাক্কা

  • মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় তেলের দাম বেড়ে যায়।

  • যুক্তরাষ্ট্র নিজের তেল উৎপাদন বাড়ায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ায়।

  • আমেরিকান ডলারকে তেল বাণিজ্যের একমাত্র মুদ্রা বানিয়ে (Petrodollar System) তারা বিশ্ব অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ আরো শক্ত করে।


উদাহরণ ৩: ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট

  • প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তারা সবচেয়ে আগে ঘুরে দাঁড়ায়।

  • অন্য দেশগুলো (গ্রীস, স্পেন, ল্যাটিন আমেরিকা) দীর্ঘ মন্দায় ছিলো, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে টেক জায়ান্ট (Apple, Google, Amazon) তখন আরো বড় হয়ে যায়।

  • অনেক দেশের টাকা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে।


উদাহরণ ৪: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (২০২২ থেকে)

  • ইউরোপ রাশিয়ান গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ছিলো, কিন্তু যুদ্ধের পর তারা গ্যাসের নতুন উৎস খুঁজতে বাধ্য হয়।

  • যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে নিজস্ব LNG (Liquefied Natural Gas) বিক্রি করতে শুরু করে – বিশাল বাজার পায়।

  • একইসাথে অস্ত্র শিল্পের বিক্রি হঠাৎ বেড়ে যায় (জ্যাভলিন, HIMARS, গোলাবারুদ)।


উদাহরণ ৫: কোভিড-১৯ মহামারি

  • মহামারি বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি ধ্বংস করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানি (Zoom, Amazon, Microsoft) অতিরিক্ত লাভ করেছে।

  • ভ্যাকসিন তৈরি ও বিক্রির বাজারে আমেরিকান কোম্পানিগুলো (Pfizer, Moderna) বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।


এগুলো দেখায়, যখন পৃথিবীর বাকি অংশ সংকটে থাকে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত সেটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে ডলার, প্রযুক্তি, অস্ত্র, জ্বালানি ও রাজনৈতিক ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে নেয়।