প্রতিদিন ৩৫০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মাঝে খাবার বিতরণ করবে ‘খালসা এইড’

খালসা এইড
sikh volunteers
স্বেচ্ছাসেবীরা রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার রান্না করছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিতে কক্সবাজারের টেকনাফে পৌঁছেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিখদের একটি সংগঠন–খালসা এইড। সংগঠনটি প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষকে খাওয়াবে বলে দ্য ইনডিপেনডেন্ট ও হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে।

খালসা এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমরপ্রীত সিং বলেন, আমরা ৫০ হাজার মানুষকে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে (বাংলাদেশে) আরও তিন লাখের বেশি শরণার্থী রয়েছেন। তারা পানি, খাবার ও আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন যাপন করছেন। বৃষ্টি হলে তাদের কোথাও যাওয়ারও জায়গা নেই।

আমরপ্রীত বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য লঙ্গরখানা খুলেছি। সেখানে তাদের খাবার ও আশ্রয় দেওয়া হবে। আমরা শামিয়ানা দিয়ে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতির তুলনায় শরণার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে, সব ব্যবস্থা করতে আমাদের আরও সময় লাগবে।’

বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তার দেওয়ার কথা জানিয়ে আমরপ্রীত বলেন, সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত লঙ্গরখানা চালাতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি সবাই যেন খেয়ে ঘুমাতে যেতে পারেন।

ভাত সবজী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য
ভাত এবং সবজি প্রতিটি মিলে দেওয়া হচ্ছে। রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুজন স্বেচ্ছাসেবী।

টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাহায্য করছে খালসা এইডের সদস্যরা। এই ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অবস্থা বর্ণনা করে আমরপ্রীত সিং বলেন, ‘এদের কষ্টের কথা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তিনটি শহরতলি এলাকায় গ্রাম রয়েছে সর্বমোট ৪৭১ টি। এর মধ্যে ১৭৬টি গ্রাম এখন জনমানবশূন্য। অন্য ৩৪টি গ্রাম থেকেও কিছু কিছু রোহিঙ্গা পালিয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। চলমান সেনা অভিযানে গ্রামগুলোর বাসিন্দারা পালিয়ে গেছে।

রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও তল্লাশিচৌকিতে গত ২৫ আগস্ট রাতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এর জেরে সেখানে নতুন করে সহিংস সেনা অভিযান শুরু হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে গত কয়েক সপ্তাহে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

রাখাইনে সহিংসতা চলতে থাকায় প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ঢল থামছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে বছর শেষে বাংলাদেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আসতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘের দুটি সংস্থা।

কক্সবাজার ঘুরে এসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার সংখ্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পরিচালনা ও জরুরি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মেদ আবদিকার মোহামুদ ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহকারী হাইকমিশনার জর্জ ওকোথ ওব্বো বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

শরণার্থীদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে আবদিকার মোহামুদ বলেন, ‘আমরা দেখছি প্রায় ৪ লাখ লোক এর মধ্যেই এসেছে। এই সংখ্যা বাড়তে থাকায় আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার লোক আসছে। দুই সপ্তাহ আগে আমরা ৭০-৮০ হাজার লোকের কথা বলেছিলাম। কাল আমরা বলেছি ৩ লাখ ৭৯ হাজার। আজ বলছি ১০ হাজার বা তার বেশি।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘তবে কি আমরা আশা করছি আরও বিপুল সংখ্যায় লোকজন আসবে? সংখ্যাটি কি ৬ লাখ, ৭ লাখ নাকি ১০ লাখ?


সূত্র: দ্যা ইনডেপেনেডেন্ট, দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও প্রথম আলো