বাংলাদেশ এবং কোলকাতা নষ্ট করেছে একই মহাজনেরা, তবু কেন কোলকাতা বেশি নষ্ট?

সেভেন সিস্টার্স

ফলোআপ নিউজ একশোজন ব্যবসায়ীর ওপর একটি কেস স্টাডি নির্মাণ করছে, যারা বাংলাদেশ লুটেপুটে এবং নষ্ট করে গিয়ে এখন কোলকাতায় লুটপাট চালাচ্ছে। তারা দুই বাংলার মধ্যে দস্যুবৃত্তির সেতুবন্ধন হিসেবেও কাজ করছে। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী থেকে পেশাজীবি সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আছে।

চোখ রাখুন।

মহাজনপ্রথা, বর্ণপ্রথা, কুসংস্কার এবং গ্রাম্য আধিপত্যবাদ—মোটা দাগে এই চারের মধ্যে ডুবে ছিলো ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজ। কোনোকালেই ‘ইসলাম’ এ অঞ্চলে হিন্দু মহাজনিপ্রথার তুলনায় বড় সমস্যা ছিলো না, হই হই করলেও এখনো নয়। ইসলাম ধর্মকে এ অঞ্চলে জায়গা দিয়েছিলো শাসকশ্রেণিই, কিন্তু মুসলিমরা নিজেরাই যখন শাসক হয়ে উঠতে চেয়েছে, তখন থেকেই হিন্দু শোষক এবং শাসকেরা অসুবিধা বোধ করেছে। তার আগ পর্যন্ত নিম্নবর্গের তথা বিদ্রোহী হিন্দুদের ঘায়েল করতে মুসলিমরাই হয়ে উঠেছিলো তাদের মূল ভরসার জায়গা, লাঠিয়াল। সাথে বৌদ্ধদের মহাত্মাবাদ ঠেকিয়ে রাখার বিষয়টিও ছিলো। ভারতবর্ষে আগমনের পর ইসলাম প্রথম দুইশো থেকে তিনশো বছর এভাবেই ছিলো, সাথে ছিলো সুফিবাদ। রাজনৈতিক ইসলাম তখন ছিলো না।

এরপর থেকে তারা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠে এবং সফলতা পায়। এই সফলতার মধ্যে হিন্দু মহাজনিপ্রথার প্রভাব শুরুতে না থাকলেও কালে কালে তা একই মুদ্রার এপিঠওপিঠ হয়ে ওঠে, এবং সেটি সবচেয়ে পরিষ্কার রূপ পরিগ্রহ করেছে বাংলায়। বাংলাদেশে হিন্দু মহাজনেরা শাসন হারালেও শোষণের তরিকা বন্ধ করেনি কখনো, বরং তাদেরই ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে মুসলিম শাসকগোষ্ঠী, যারা একইসাথে শোষক এবং কোলকাতা-বাংলাদেশ-এর শোষণ-নির্যাতনের পাহারদার। হিন্দু মহাজনেরাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় লঘ্নিকারক। তাদের প্রতিশোধস্পৃহা খুবই সর্পীল পথে তারা বাস্তবায়ন করে, এবং তারা এখনো সেই পুরনো ইতিহাসের ধারক— দুর্বল এবং প্রতিদ্বন্দ্বী হিন্দুরাই তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু, কিছু মুসলিম তাদের লাঠিয়াল মাত্র।

অবশেষে মুসলিমরা প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার মতো একটা শক্তিশালী শ্রেণি হয়ে উঠেছে হয়তো, যারা আসলে ঐ হিন্দু শোষকগোষ্ঠীরই অবতল দর্পণের প্রতিবিম্ব। এই প্রতিবিম্বের ওপর তাদের (হিন্দু শোষক শ্রেণির) আর নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ফলে রাজাদের যুদ্ধে উলুখাগড়া না হয়ে প্রাণ-প্রৃকতির জন্য কণ্ঠ মিলিয়ে কাজ করার জন্য এটাই উত্তম সময়। মানবতার জন্য, বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে ডানপন্থা এবং বামপন্থ হাত মেলাতে হবে, হাতে হাত রেখে রাজাদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হটিয়ে দিয়ে সাম্যের ভারতবর্ষ নির্মাণ করতে হবে। ডানপন্থার মুঠোতে যে বিদ্রোহী ঈশ্বর, বিপরীতে বামপন্থার মুঠোতে যে বিদ্রোহী নিরীশ্বর —দু’টিই আসলে একই শোষক ঈশ্বরের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। কোনো হাতের দখল যেন ওরা না নিতে পারে, নিয়ে আছে কিন্তু! ওরা কালে কালে বাম-ডানে যে যুদ্ধটা বাঁধিয়ে দেয়, সেটি ওদের নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র। তাই হাতে হাতে আর বিবাদ নয়। আসো, শোষকের বিরুদ্ধে একসাথে উচ্চকিত হই ঝেড়ে ফেলে সব ভয়।

বণিক, যে দস্যু তুমি পাঠিয়েছিলে বঞ্চিত মানব বধে, সব দেখে দেখে দেবতা হয়ে উঠেছে সে সঞ্চিত ক্রোধে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কোলকাতার সাংবাদিক সাদউদ্দিন ভাইয়ের নিচের এ সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়।