স্বাভাবিকভাবেই করোনায় চারিদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারিভাবে চলছিল লকডাউন। এমন অবস্থায় অসমের এক হিন্দু দম্পতিকে কাছে টেনে নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বেলডাঙার এক মুসলিম পরিবার। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মির্জাপুর মোল্লাপাড়ার ঘটনা এটি। প্রায় এক মাস ধরে মোল্লাপাড়ার ফারুক আবদুল্লাহর বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন অসমের মিঠুন দাস ও তার স্ত্রী মৌমিতা দাস।
অসমের গোয়ালপাড়ার মিঠুন দাসকে কলকাতায় ডাক্তার দেখানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তার স্ত্রী মৌমিতা। দুই নাবালক সন্তানকে প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে ২৩ মার্চ রওনা দেন এই দম্পতি কলকাতার পথে। কিন্তু বেলডাঙায় যখন এসেছেন, তার আগেই লকডাউন ঘোষণা হয়ে গেছে। এ কারণেই আটকে পড়েন দাস দম্পতি।
মিঠুন তার ব্যবসার জন্য এর আগে বেলডাঙায় এসেছিলেন কয়েকবার। সেইসূত্রে পৌঁছে যান মির্জাপুরের মোল্লাপাড়ায়। এলাকাটায় মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। করোনা, লকডাউন, মানুষের সন্দেহ অবিশ্বাস —এতে কী করবেন ভেবে পান না মৌমিতারা। তখনই ফারুক আব্দুল্লাহ নামে মিঠুনের স্বল্প পরিচিত একজন এগিয়ে আসেন। নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। বলেন, ‘নিশ্চিন্ত থাকুন।’ ফারুক আবার এলাকার গ্রাম প্রধান আশিয়া বিবির ভাইপো। এরপর মৌমিতা বিডিও বিরূপাক্ষ মিত্রের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করে বলেন, ‘আমাদের জন্য কিছু একটা করুন। এখানে নিশ্চিন্তে থাকলেও দুই সন্তান প্রতিবেশির বাড়িতে রয়েছে, তারা খুব কষ্টে আছে।’ বিডিও এবং থানার ওসি দুজনেই যান মৌমিতার কাছে। খাবারের প্যাকেট তুলে দিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনাদের অসমে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে না। লকডাউন উঠে গেলে আমরা ফেরার ব্যবস্থা করে দেব। কোনও চিন্তা করবেন না। আমরা সব ধরনের সাহায্য করব।’
গ্রাম প্রধান আশিয়া বিবি, তার স্বামী ইসরাফিল শেখ এবং ফারুখ মিঠুন মৌমিতাকে বলেন, ‘কোনো চিন্তা নেই, ভয় নেই। এক মাস কেন, দরকার হলে একবছর আমরা রাখব।’ মৌমিতা এবং মিঠুন চোখের জল আড়াল করে বলেছেন, ‘কে বলবে আমরা বিপদের সময় অপরিচিত গ্রামে আছি। এদের ভালোবাসা কোনোদিনও ভুলব না।’ পরে বিডিও বিরুপাক্ষ বলেন, ‘পঞ্চায়েত এবং গ্রাম যেমন ঐ দম্পতির পাশে আছে, বেলডাঙার প্রশাসনও ওদের সঙ্গে আছে।’ করোনার এই সময়ে সম্প্রীতির এমন চিত্র বাংলাতেই দেখা যায় বলে গর্ব করেন তিনি।
সংবাদ সূত্র: আজকাল পত্রিকা, কলকাতা