‘ঈদ মিছিলে ঈদ শোভাযাত্রায় মূর্তিবাদী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে বলে হেফাজতে ইসলামের অভিযোগ

ঢাকা

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ মিছিলে মূর্তিবাদী সংস্কৃতি ঢোকানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান।

ঢাকা
ঈদ শোভাযাত্রার একটি মূর্তি (বামে), হেফাজতে ইসলামের লোগো (ডানে)।

বিবৃতিতে তারা বলেন, সুলতানি বা মুঘল আমলের কয়েকশ বছরের পুরানো ঐতিহ্য ‘ঈদ মিছিল’ ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানদের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের যাত্রা শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সারা দেশে শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ঈদ মিছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত ঈদ মিছিলে বিভিন্ন প্রতিকৃতির সমাহার ঈদের মূল আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামে দুই ঈদ প্রবর্তনের ইতিহাস না জেনে ঈদ মিছিলে এসব সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তারা আরও বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটো উৎসব পালন করা হতো। যা ছিল ইসলামের তৌহিদি চেতনার বিপরীত। তখন পৌত্তলিক সংস্কৃতি থেকে মুক্ত থাকতে মুসলমানদের জন্য ইসলাম দুই ঈদের প্রবর্তন করে। অথচ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত ঈদ মিছিলে মঙ্গলশোভাযাত্রার মতো মূর্তিবাদী সংস্কৃতির আড়ম্বর দেখা গেল।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত পুরস্কারের দিন। যা মুসলমানদের জন্য আনন্দের দিন। সে আনন্দ উৎসব হতে হবে ইসলামের তৌহিদি চেতনা ও বিধান অক্ষুণ্ন রেখে। কোনো প্রাণী বা মানুষের মূর্তি বা ভাস্কর্য বানানো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। এই মৌলিক বিধান অক্ষুণ্ন রেখেই ঈদ উদযাপনকে সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত করতে হবে। মূর্তিবাদী সংস্কৃতি নয়, তৌহিদি চেতনার মধ্যেই বাংলাদেশের মুসলমানদের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ নিহিত।

তারা বলেন, সবশেষে আমরা নতুন বাংলাদেশে মুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশে ঈদ উদযাপনে ভূমিকা রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ঢাকায় সুলতানি আমলের আদলে ঈদ আনন্দ শোভাযাত্রা হয়েছে। সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠের সামনে থেকে এই আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন বহু মানুষ। শোভাযাত্রাটি আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হয়। ঈদের জামাত শেষ হতেই বেজে ওঠে ব্যান্ডপার্টির বাজনা, বাজতে থাকে ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে’।

সুলতানি আমলে (১২০৪-১৫৭৬) ঈদ আনন্দ আয়োজনে রাজা ও প্রজাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকত। মোগল আমলে (১৫৭৬-১৮৫৭) ওই সাংস্কৃতিক প্রবাহ আরও বেগবান হয়। মোগল সম্রাট শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের সময় ঈদের শোভাযাত্রা ও মেলা বর্ণাঢ্য রূপ নেয়, যেখানে কাব্যপাঠ, সংগীতানুষ্ঠান ও পুতুলনাট্য পরিবেশিত হতো।