Headlines

“নির্মূল কমিটির এতদিনের দাবী বাস্তবায়িত হয়েছে “

১১ মার্চ ২০১৭ তারিখে জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ বাংলাদেশের “জাতীয় গণহত্যা দিবস” ঘোষণার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে ।

এর আগে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র নের্তৃবৃন্দ ‘২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস’ জাতীয় সংসদে উত্থাপনের জন্য মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে তাঁর বাসভবনে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানায়।

এ বিষয়ে লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, “একাত্তরের মার্চ মাসেই ঘটেছিল পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যা। এই দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের আন্দোলন করেছি। সংসদে বির্তকের পর তা পাস হতে যাচ্ছে। আশা করি এরপর থেকে গণহত্যা নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ থাকবে না।”

২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করায় জাতীয় সংসদ, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির অারো বলেছেন, ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বরের আগে তা করা হলে আমরা জাতিসংঘের স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতাম।

শনিবার ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে জাতীয় সংসদে ঐতিহাসিক প্রস্তাব পাশ হয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য বাঙালি হত্যার ঘটনার পটভূমিতে দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় সংসদ।

রোববার এক প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার কবির চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এই দিনের জন্য আমাদের দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে বিষয়টিতে অনেক দেরি হয়ে গেলো। কারণ এই দিবসকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সুযোগটা আমরা ইতোমধ্যে হারিয়েছি।’

“দু’বছর আগ পর্যন্তও এ সুযোগটি ছিলো। তখনও ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এই দিবসটির ন্যায্য দাবিদার ছিলাম আমরা।”

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর পালিত হয়। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা।’

“এটি জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তাদের নিজ জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব আছে। গণহত্যার উস্কানি বন্ধ করা ও গণহত্যা ঘটলে তা প্রতিরোধ করা এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।”

শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ‘২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের আগে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, আমরা এই ৭১’ এর গণহত্যার স্মরণে কোনো দিবস পালন করি কি না? তখন আমাদের জবাব দিতে হয়েছে ‘না’। তখন আমাদের শুনতে হয়েছে, ‘‘যে দিবস তোমরা তোমাদের দেশে পালন করো না, তা কিভাবে সারা বিশ্বের মানুষ পালন করবে?’’ অথচ সবদিক থেকেই আমাদের উপর চালানো গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি রাখে। এখন আর সে সুযোগ নেই। আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি।’

“তবে এই গণহত্যার তথ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে সবার কাজ করার সুযোগ আছে। পাশাপাশি চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা এবং বিচারের রায় বাস্তবায়ন করতে দেশের নাগরিক সমাজকে কাজ করতে হবে। সবাই ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করছে, আসলে বিষয়টি হবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার স্বীকৃতি।”

মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পরেও এদেশে ‍মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে গবেষণা এবং একাডেমিক কার্যক্রমের পরিধি সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি দেখেছি, সেখানে আমাদের দেশের গণহত্যা নিয়ে পড়ানো হচ্ছে। বিশ্বের বহু দেশেই মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা নিয়ে পড়াশোনা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে একাডেমিক এবং গবেষণা কার্যক্রম নেই।’

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডি সেন্টার নামে একটি কার্যক্রম অল্প পরিসরে শুরু হয়েছে কযেকবছর আগে। কিন্তু সারা দেশে এ কার্যক্রম বাড়াতে তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এখন উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব বিষয়কে বাদ দেয়া হচ্ছে। পাঠ্য বইয়ের সাম্প্রদায়িকীকরণ হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।”

উল্লেখ্য, উগান্ডা, বসনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই গণহত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিলো তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো পায়নি বাংলাদেশ। এমনকি এ নিয়ে এতদিন দেশের মধ্যেও অনেক বিতর্ক হয়েছে। জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ-এর গণহত্যা স্বীকৃত হওয়ার মধ্য দেশে অবক্ষয়ী সে বিতর্কের অবসান হল।

বাংলাদেশ কেন এখনো ৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি?  বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহবায়ক ডক্টর এম.এ হাসান বলেন, বাংলাদেশ যখন সৃষ্টি হয় তখন আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনি বাংলাদেশের গণহত্যা এবং এই নিপিড়ন নির্যাতন বন্ধ করার ব্যপারে।

বিবিসির সাথে আলপচারিতায় তিনি আরো বলেন-

তিনি আরও বলেন, সাথে সাথে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। সেটা হলো বাংলাদেশে তখন এই ঘটনাগুলো ঘটার পরে বাংলাদেশের সরকার ও বাংলাদেশের তখনকার অবস্থান মিলিয়ে তেমন একটা প্রস্তুতি ছিল না যে এই বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কথা বলবে।
তার মানে বাংলাদেশে যে হত্যাকা- ঘটেছে তা বিশ্বের কাছে জানাতে আমাদের কিছু ব্যর্থতা কাজ করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না বিষয়টা ঠিক এইভাবে বলা যাবে না। কারণ,আন্তর্জতিক মিডিয়াতে বাংলাদেশের গণত্যার বিষয়ে বেশ ফলাও করে প্রকাশ করেছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু লন্ডনের মাটিতে নেমেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চেয়েছেন। কিন্তু দেশের মধ্যে যেটা করণীয় ছিল অর্থাৎ সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা, এটিকে গণহত্যা বলে প্রমাণ করা এবং সেই প্রমাণগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখানো। তাই আমার মনে হয় এই জায়গাগুলোতেই আমাদের দুর্বলতা ছিল। এর প্রধান কারণ,আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অভাবে এত বড় গণহত্যা এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি বলে আমি মনে করি।
কিন্তু এতদিন পার হওয়ার পরে বাংলাদেশ কি তার গণহত্যার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তুলে ধরার মত পরিস্থিতি আছে? জবাবে তিনি বলেন,পৃথিবীর বহু দেশে গণহত্যা হয়েছে কিন্তু সব দেশের গণহত্যার বিচার হয়নি। যেসব দেশের গণহত্যাগুলো বিরোধী পক্ষ করেছে অর্থাৎ যাদের হাতে ক্ষমতা যাদের সাথে জাতিসংঘের সম্পর্ক ভাল তাদের বিচারগুলো হয়েছে।
কিন্তু দেখা যায় যে, ভিয়েতনামে কিন্তু এখনো বিচার হয়নি পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেই কিন্তু গণহত্যা হচ্ছে বা চলছে সেগুলোরও কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। সুতরাং এটার মধ্যেও একটা বৈশিক রাজনীতি রয়েছে সেটা আমাদের বুঝতে হবে এবং মাথায় রাখতে হবে। এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এই সকল বিষয়ে কোন সময় নেই যেকোন সময়ে বিচার কাজ হতে পারে।