Headlines

আমলকির বিস্ময়কর গুণাগুণ, পুষ্টি বিশ্লেষণ

শহরের মানুষের শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্টের বেশি ঘাটতি থাকে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভালো এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমলকির গুণাগুণ এক্ষেত্রে খুব বেশি।

বাংলা নাম: আমলকি

সংস্কৃত ভাষায় আমলকির নাম ‘আমালিকা’।

ইংরেজি নাম: amla, emblic, emblic myrobalan, myrobalan, Indian gooseberry, Malacca tree

বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica

#ভেষজ ফল হিসেবে আমলকির বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।

#সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অধিক পরিমাণে দেখা যায়।

#আমলকির ফল, ফুল, পাতা, শিকড়, ছাল -সবকিছু আয়ুবের্দিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%9b

পরিচিতি: আমলকি একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এর উচ্চতা আম, লিচু ইত্যাদি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের মত হতে পারে। তবে ডাল একটু সরু হয়।  পাতা যৌগিক, হালকা সবুজ, পত্রক ছোট, এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়। স্ত্রী ও পুরুষফুল একই গাছে ধরে। ফুলের রংও হালকা সবুজ। ফল হালকা সবুজ থেকে হলুদাভ, গোলাকৃতি, তবে একটু চ্যাপ্টাও হয় কোনো কোনোটা। ফলের ব্যাস ১/২ ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে দেখা যায়। ৩/৪ বছর বয়সে গাছে ফল ধরে। ভাদ্র থেকে কার্তিক অগ্রাহায়ণ পর্যন্ত ফল গাছে থাকে। বংশ বিস্তার বীজ দ্বারা হয়। বর্ষাকালে গাছ লাগালে সহজে বাঁচে।

প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে আছে:

  • কার্বহাইড্রেট: ১০.১৮ গ্রাম;
  • প্রোটিন: ০.৮৮ গ্রাম;
  • চর্বি: ০.৫৮ গ্রাম;
  • কোলেস্টেরল: ০ মিগ্রা;
  • হজমী আঁশ: ৪.৩ গ্রাম;
  • ভিটামিন সি: ২৭.৭ মিগ্রা;
  • ভিটামিন এ: ২৯০ আইইউ;
  • থায়ামিন: ০.০৪০ মিগ্রা;
  • রিবোফ্লাবিন: ০.০৩০ মিগ্রা;
  • পাইরিডক্সিন: ০.০৮০ মিগ্রা;
  • প্যানন্তোথেনিক এসিড: ০.২৮৬ মিগ্রা;
  • নায়াসিন: ০.৩০০ মিগ্রা;
  • ফোলেটস: ৬ মাইক্রোগ্রাম;
  • (১মিলিগ্রাম = ১০০০ মাইক্রোগ্রাম)
  • সোডিয়াম (ইলেকট্রোলাইট): ১মিগ্রা;
  • পটাশিয়াম (ইলেকট্রোলাইট): ১৯৮ মিগ্রা;
  • ক্যালশিয়াম: ২৫ মিগ্রা;
  • কপার ০.০৭০ মিগ্রা;
  • আয়রন: ০.৩১ মিগ্রা;
  • ম্যাগনেশিয়াম: ১০মিগ্রা;
  • ম্যাঙ্গানিজ: ০.১৪৪ মিগ্রা;
  • ফসফরাস: ২৭ মিগ্রা;
  • জিঙ্ক: ০.১২ মিগ্রা।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা:  

  • যেহেতু আমলকিতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে। এর মধ্যে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, অায়রন, ক্যারোটিন অন্যতম। ফলে গর্ভাবস্থায় এবং রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য এটা ভালো।
  • ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস্য। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে।  ৪৪৫ মিগ্রা আমলকিতে ১০০ গ্রাম ভিটামিন সি বা এস্করবিক এসিড থাকে।
  • শহরের মানুষের শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্টের বেশি ঘাটতি থাকে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভালো এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আমলকির গুণাগুণ এক্ষেত্রে খুব বেশি।
  • কোষে খাদ্য জ্বালানি হিসেবে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়, তখন বাই-প্রডাক্ট হিসেবে কিছু উপাদান নিঃসৃত হয় যা ফ্রি র‌্যাডিকেল নামে পরিচিত, এগুলো মানুষকে বুড়িয়ে দেয়। আমলকি এক্ষেত্রে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ফ্রি রেডিকেলগুলো প্রতিহত করে।
  • চুলের ঘন কালো রং এবং চুল ওঠা বন্ধ করতে আমলকির ব্যবহার সবসময় খুব আলোচিত।
  • ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিন থাকে বলে আমলকি চোখের যত্নে এবং চিকিৎসায়ও কার্যকরী।
  • প্রাকৃতিক ক্যালশিয়ামের চমৎকার উৎস এই আমলকি।
  • আধুনিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে, আমলকি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর।
  • প্যানক্রিয়াটিক রোগে আমলকি খুব কার্যকরী বলে আধুনিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • প্রমান পাওয়া গেছে, আমলকির রস রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে পারে। ফলে এটি ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুব উপকারী।
  • দাঁত ও মাড়ির জন্য আমলকি সরাসরি উপকারী।
  • আমলকি হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী।
  • আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে, মুখের ঘা সারে।

amla

ব্যবহার: আমলকির বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে, তবে ভেষজ ব্যবহার সবচেয়ে বেশি আলোচিত। খাদ্য বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে অনেক বেশি ভিটামিন ‘সি’ থাকে। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের দিনে যে পরিমাণ ভিটামিন সি (২৫ থেকে ৩০ গ্রাম) প্রয়োজন তা দুটো আমলকি থেকে পাওয়া যায়। ত্রিফলায় ব্যবহৃত হয়। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এই তিন ফলের রস দেহের জন্য খুব উপকারী। বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া আমলকি ফল বা পাতা বেটে অনেকে সরাসরি মাথায় দিয়ে থাকে।

আমলকি যেভাবে খাওয়া যায়: ধুয়ে কাঁচা কামড়ে খাওয়া যায়। একটু টক এবং সামান্য তিতা স্বাদের হয়।  সালাদ হিসেবে খাওয়ার প্রচলন অাছে। আমলকি পাউডার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোতে। রস করে খাওয়া হয়। অামলকির আচার এবং জ্যাম খুব উল্লেযোগ্য খাবার। বিভিন্ন খাদ্যের খাদ্য-উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নায়াসিন: ভিটামিন বি-৩ এর রাসায়নিক নাম নায়াসিন (C6H5NO2)। নায়াসিনের ল্যাবরেটরি নাম নিকোটিনিক এসিড। শরীরে এটি উৎসেচক হিসেবে কাজ করে। পুষ্টিকর খাদ্য থেকে শক্তি অবমুক্তকরণে নায়াসিন সাহায্য করে। নায়াসিনের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।

থায়ামিন: থায়ামিন বা ভিটামি বি-১ ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত প্রথম ভিটামিন যা পানিতে দ্রবণীয় বলে প্রমাণিত হয়। থায়ামিন প্রাণীদেহের জন্য একটি অপরিহার্য ভিটামিন, কিন্তু শুধু ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং উদ্ভিদকুল থায়ামিন তৈরি করতে পারে। প্রাণীদের তাই খাদ্য হিসেবে থায়ামিন গ্রহণ করতে হয়। থায়ামিনের অভাবে অভাবে বরিবেরি, অপটিক নিউরাইটিস, ভারনিকে করসাকফ রোগ হতে পারে।

ভিটামিন বি-৬
পাইরিডক্সিন

পাইরিডক্সিন: এটি ভিটামিন বি-৬ এর একটি প্রকারভেদ। পাইরিডক্সিন এর হাইড্রোক্লোরাইড লবণ ভিটামিন বি-৬ এর অভাবজনিত রোগে ব্যবহৃত হয়। পাইরিডক্সিন শরীরে লোহিত কণিকা উৎপাদন করা ছাড়াও স্নায়ুবিক কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে।

রিবোফ্লাবিন: ভিটামিন বি২-এর রাসায়নিক নাম রিবোফ্লাবিন (C17H20N4O6)। এটি শরীরে সহ-উৎসেচক হিসেবে কাজ করে। এই সহ-উৎসেচকটি কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং শ্বসনীয় আমিষ বিপাকে সাহায্য করে থাকে।

প্যান্থোথেনিক এসিড: ভিটামিন বি-৫ এর অন্যনাম প্যান্থোথেনিক এসিড। কোনএনজাইম (এ) এর সহ-উৎসেচক হিসেবে প্যান্থোথেনিক এসিড শরীরে কাজ করে। এটি বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে।


ইলেকট্রোলাইট: %e0%a6%87%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%95%e0%a6%9f%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%9f%e0%a6%b8সহজ কথায় ইলেকট্রোলাইট হচ্ছে রক্তে দ্রবীভূত নির্দিষ্ট কিছু আয়ন। মানুষের শরীরের কার্যক্রম চালু রাখার ক্ষেত্রে এসব আয়নের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। লবণ পানির দ্রবীভূত হলে তা আয়নিত হয় বলে বিদ্যু সঞ্চালন করতে পারে। মানব দেহের শক্তি সঞ্চালনের জন্যও একই রূপ প্রয়োজন। ইলেকট্রোলাইট ঠিক রাখার জন্যই ডায়রিয়া হলে লবণ-পানির স্যালাইন খাওয়া হয়। ইলেকট্রোলাইট ঠিক রাখার জন্য রক্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের লবণ থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।