আমার আমি: টুকরো গল্প

সতীত্ব এবং কুমারীত্ব

২০১৪ সাল থেকে গ্রামে একজন সমাজকর্মী এবং একজন আধুনিক ও প্রাকৃতিক কৃষক তৈরির চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো সফল হইতে পারি নাই। ভুল ছিল— প্রথমেই আমি বড় বিনিয়োগে চলে গিয়েছিলাম। বাধাল বাজারে (অত্র এলাকার মূল বাজার) একটি বই এবং স্টেশনারির দোকান করলাম। দোকানটি ছিল অনেক বড়, প্লান ছিল— একপাশে ইন্টারন্টে ব্যবহারের সুবিধা থাকবে এবং বই পড়ার সুবিধা থাকবে, কেউ বই কিনুক বা না কিনুক, বই পড়ে চলে যাক।
স্টেশনারি বিক্রির টাকা দিয়ে দোকান পরিচালনার খরচ উঠে যাবে। আমাকে কোনো টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নাই, যে চালাবে সে চলতে পারলে হলো।
শিক্ষামূলক কাভার পেজ দিয়ে বারো হাজার খাতা করে দিয়েছিলাম, বলেছিলাম, আমাকে আসল টাকাটা শুধু দিয়েন, দিতে পারে নাই। এত সুবিধা পেয়েও দোকানটা টিকাইতে পারে নাই। তখন আমার কাছে টাকা ছিল, পাঁচ লক্ষ টাকা গচ্ছা গিয়েছিল। তবে দশ লক্ষ টাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে মনে করি করি, তাই দুঃখ নাই। একবছর টিকেছিল দোকানটা।
ফার্নিচারগুলো বৃষ্টিতে ভিজে এখনো নষ্ট হচ্ছে, যেগুলো নেওয়ার মতো সেগুলো অবশ্য যার যতটুকু সম্পর্কের অধিকার আছে, নিয়ে গেছে।
অর্থনৈতিক ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম, কারণ, প্রায় একই সময়ে আমি একটা প্রকাশনী করতে গিয়ে বিনিয়োগ করেছি প্রায় পনেরো লক্ষ টাকা, যে টাকাটা এখনো বিনিয়োগ হিসেবেই রয়ে গেছে, কোনো লাভ তুলতে এখনো পারি নাই। তবে এ টাকাটা গচ্ছা যাবে না। একটু সময় লাগছে এই যা।
[বিনালাভের ঘটঘটি আরো আছে, একটা অনলাইন লিটল ম্যাগাজিন আছে, সেটির পিছনে প্রতি মাসে কিছু টাকা খরচ হয়, কিন্তু কোনো রিটার্ন নাই।]
২০১৫ সালে চাইলাম অর্গানিক উপায়ে মাছ চাষ করতে। পুকুর আমাদের আছে, গ্রামের একটা ছেলেকে বিশ হাজার টাকা দিলাম, ফর্মুলা দিলাম। অর্গানিক উপায়ে শিং মাছ চাষ করবে। বললাম, লাভ সব তোমার, আমাকে আসল টাকাটা দিও। ঠিকমতো করলো না। এক টাকাও বাঁচায়ে দিতে পারে নাই। পুকুর আমার, টাকা আমার, তারপরেও পারে নাই!
এরপরও টুকটাক টাকা বিভিন্ন জনকে দিয়েছি। তাতে অর্জন শুধু হয়েছে অভিজ্ঞতা। কোটি টাকার অভিজ্ঞতা। ২০১৭ সাল থেকে একটু বিরতী, কারণ, হাতে টাকা নাই আমার আর, নিঃস্ব হয়ে গেছি। ২০১৮ সালে একজনকে টাকা দিলাম (এবার আর নিজের টাকা নয়, টাকাটা বন্ধু শিবু দিয়েছিল) অর্গানিক মুরগীর খামার করতে, বিশেষ পদ্ধতিতে (নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ছেড়ে দিয়ে) দেশী মুরগীর খামার। যেহেতু তখন আমি বাগেরহাট ছিলাম, তাই প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান করে খামার করলাম। এক্সপেরিমেন্ট, তাই ছোট করে করালাম। সফলও হলো, কিন্তু আসল টাকা বাঁচায়ে দিতে পারলো না, আমি আর খোঁজও নিলাম না। এবারও সেই অভিজ্ঞতা হলো।
২০১৯ এ বন্ধু শেখ ফজলুল করিম শান্ত-এর সহযোগিতায় করলাম একটা সমিতি। সুহৃদ গ্রামোন্নয়ন সমবায় সমিতি। টাকা নাই, তারপরও কিছু খরচ করলাম। গ্রামের গরীব মানুষের তালিকা করে সদস্য বানালাম। এখনো কাজটি শেষ হয় নাই। ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নিলাম, রুমে চেয়ার টেবিল যা লাগে সব দিলাম। দেখা যাক, এবার কী কী অভিজ্ঞতা কত টাকার বিনিময়ে নিতে পারি, যদিও এখন আর আমার হাতে টাকা নেই।
সুবর্ণা আমারে বলে, আপনার শিক্ষা হয় না? শিক্ষা হয়, শিক্ষা হয় বলেই আবার করি। কেন হয়, কেন হয় না, জানি বলেই আবার করি। গত পঁচিশ বছর করে করে এবং পোড় খেয়ে যা শিখেছি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কি তা শেখা সম্ভব? আবার করব, করতেই থাকব। সবাই একরকম হবে না, এরকম করতে করতে সঠিক লোকটা পেয়ে যাব একসময়।