গোপালগঞ্জ জেলা ওয়েবপোর্টালের তথ্য বলছে ২৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক সনদ পায় গোপালগঞ্জের রসগোল্লা। রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিসেস একাডেমিতে আয়োজিত এই সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষে এই সনদ গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ গোলাম কবির।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। নতুন ১৪টি পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলো সেদিন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব জাকিয়া সুলতানা এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিপিডিটির মহাপরিচালক জনাব মোঃ মুনিম হাসান।
রসগোল্লার আদিনিবাস যে বাংলা এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, অনেক আগে থেকেই এটি স্বীকৃতি। পশ্চিমবঙ্গ, নাকি বাংলাদেশ— সে বিতর্কেও বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বড় দাবীদার। তাই বলে বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত নবীন জেলা গোপালগঞ্জ কোনোভাবেই রসগোল্লার আদিনিবাস নয়। কোনোদিক থেকেই কোনো তথ্যসূত্র বলছে না যে, গোপালগঞ্জ থেকে রসগোল্লার বিস্তার শুরু। ভারত দাবী করছে পশ্চিমবঙ্গের জোড়াসাঁকো (১৮৬৪ থেকে ১৮৬৬-এর মধ্যে) থেকে রসগোল্লার উৎপত্তি। তবে তারা যে সময়ের কথা বলছে, রসগোল্লা আসলে তারও অনেক আগে থেকে পূর্ববাংলাতে ছিলো। ইতিহাস বলছে— এপার বাংলা থেকেই রসগোল্লা ছড়িয়েছে সবখানে। কিন্তু সেটি গোপালগঞ্জ থেকে নয়। গোপালগঞ্জ সবচেয়ে পুরনো মিষ্টির দোকানটির বয়স ৭০ বছরের আশেপাশে। এদিকে খুলনাতে পাওয়া গিয়েছে ২০০ বছরের পুরাতন মিষ্টির দোকানের সন্ধান, যারা শুরু থেকেই রসগোল্লা বানাতো। খুলনার প্রসিদ্ধ মিষ্টি বিক্রেতা সমীরণ ঘোষ বলছেন, রসগোল্লার উৎপত্তি নিয়ে সঠিকভাবে তার কিছু জানা নেই, তবে খুলনা-বরিশাল অঞ্চল থেকেই রসগোল্লা বিস্তার লাভ করেছে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। তিনি আরো বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অথবা কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই বিগত সরকারের সময়ে রসগোল্লা গোপালগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলো। রসগোল্লাকে জিআই পণ্য করার জন্য ভারত সরকারের স্বীকৃতি নিতে পশ্চিমবঙ্গকে পাশ্ববর্তী রাজ্য ওডিসার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে কোনো দলিল দস্তাবেজ আহ্বান না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, এবং গোপালগঞ্জকে রসগোল্লার জন্য জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিয়ে দেয়।
বিবিসি বাংলাকে বাংলাদেশের একজন খাদ্য গবেষক বলেছিলেন—
খাদ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক শওকত ওসমান বলেন, লিখিত কোন প্রমাণ না থাকলেও তাদের ধারণা ষষ্ঠ শতকে দক্ষিণাঞ্চলীয় পটুয়াখালীতে পর্তুগীজরা দুধ থেকে পনির, সন্দেশ তৈরি করতো।
সেগুলো দিয়েই তাদের বাঙ্গালী স্ত্রীরা তৈরি করেছে রসগোল্লা বা এ ধরনের মিষ্টান্ন ।
তিনি বলেন, “রসগোল্লা আবিষ্কারক হিসেবে কলকাতায় যে নবীন চন্দ্রের কথা বলা হয় তিনি বরিশাল অঞ্চলের লোক এবং পটুয়াখালীর কাছেই থাকতেন।”
তার হাত ধরে শিল্পটি সেখানে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে করা বিবিসি বাংলার এ সংবাদ বলছে—
কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের ভোক্তাদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করেন রসগোল্লা বাংলাদেশেরই।
১৪৫ বছর ধরে মিষ্টান্ন ব্যবসার জন্যে পরিচিত প্রতিষ্ঠান মরণ চাঁদ গ্র্যান্ড সন্স। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে ঢাকায়।
এর ফার্মগেট শাখার ব্যবস্থাপক রবীন্দ্রনাথ রায়ও বলেন, রসগোল্লা বাংলাদেশের কারিগরদেরই একটি অসাধারণ উদ্ভাবন। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য ভাণ্ডার খুঁজে পাওয়া যাইনি বলে এখনো বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে পেটেন্ট বা স্বত্ব লাভের কোনো দাবী করতে পারেনি।
…
রসগোল্লার আন্তর্জাতিক স্বত্ব পেতে ভারত এতটাই মরিয়া যে, ২০১৮ সালে ‘রসগোল্লা‘ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, যেখানে নবীনচন্দ্র ময়রাকে রসগোল্লার উদ্ভাবক হিসেবে দেখানো হয়।