লাল আটা কী? কেন খাবেন? কোথায় পাওয়া যায়?

লাল আটার পুষ্টিগুণ

গম এর বৈজ্ঞানিক নাম Triticum aestivum, ইংরেজি নাম Bread Wheat বা Common Wheat. খাবার জন্যে ব্যবহৃত মোট উৎপাদিত শস্য অনুযায়ী, গম রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে এবং ধান রয়েছে প্রথম অবস্থানে।

এটি সকল পরিবেশে জন্মাতে পারে, তবে শীত প্রধান দেশে গম বেশি হয়। গমের উপরের লাল আবরন সহ ভাঙ্গানো হলে, আটা লাল রঙের হয় বলে একে লাল আটা বলে। আর যখন রিফাইন্ড করে খোসা ফেলে দিয়ে ভাঙ্গানো হয় তখন তা সাদা রঙের হয়। এই সাদা আটাই আমরা সাধারনত বেশি খেয়ে থাকি।

লাল আটা

লাল আটায় আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই লাল আটার রুটি খাওয়ার পর রক্তের গ্লুকোজ ধীরে ধীরে বাড়ে। ফলে হৃদরোগ প্রতিরোধে, ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাল আটা বেশ উপকারী।

গবেষকরা জানাচ্ছেন রিফাইন করা আটা বা ময়দা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে খাওয়ার উপযুক্ত হয় বলে, এর স্বাস্থ্যগুণ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়।

অন্যদিকে লাল আটায় ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা সঠিক পরিমাণে থাকে বলে এ আটা খুবই স্বাস্থ্যকর।
গমের আটার বাইরের লাল বা বাদামি আবরণে অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। এই আবরণ ম্যাগনেশিয়াম নামক খাদ্য উপাদানে ভরপুর। কিন্তু খেতে সুস্বাদু হলেও রিফাইন বা পরিশোধিত সাদা আটার পুষ্টিগুণ অনেকটাই কম থাকে।
এই আটায় লিগনান নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়াও লাল আটা ডায়াবেটিস রোগের জন্য দারুণ উপকারী। কারণ এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় লাল আটা ওজন কমাতেও সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

উল্লেখ্য, ৩৮ গ্রাম সাদা আটার রুটিতে ৮৭ ক্যালোরি, ফ্যাট ৭, কার্বোহাইড্রেট ১৬.০ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৫ গ্রাম এবং প্রোটিন ৩.৪ গ্রাম। অপরদিকে ৪৬ গ্রাম বাদামি আটার রুটিতে ১২৮ ক্যালোরি, ফ্যাট ২.৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯০.১ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ২.৮ গ্রাম এবং প্রোটিন ১৫.৫ গ্রাম। সুতরাং দেখা যায় সাদা আটার রুটির চেয়ে লাল আটার রুটির মধ্যে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।

কেন খবেন

গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে, লাল আটার অদ্রবনীয় খাদ্য আঁশ রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এই আটায় লিগনান নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী। প্রচুর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
লাল আটা ওজন কমাতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে। পেট পরিষ্কার রাখে এবং পেটের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়, তাই ব্রন হয় না।পুরোনো গম চর্ম রোগ দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।

ডায়েবেটিকস এর প্রতিরোধে লাল আটা

সাধারণত খাবার খাওয়ার পর তা কত তাড়াতাড়ি রক্তে শোষিত হয় তা নির্ধারণের ইউনিট হচ্ছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। শর্করাজাতীয় খাবার যেমন, বিস্কুট, কেক, পিৎজা ইত্যাদি খাওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। লাল আটা দিয়ে তৈরি খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম থাকে। লাল আটা খুব অল্প পরিমাণে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের লাল আটার রুটি খেতে পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে লাল আটা

রিফাইন্ড আটায় দেহের জন্য উপকারী ভিটামিনস ও মিনারেলসের ঘাটতি থাকায় তা দেহের রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হই। লাল আটায় দেহের জন্য উপকারী ভিটামিন সি ও মিনারেলসের পরিমান বেশি থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের সুস্থতায় লাল আটা

লাল আটায় বিদ্যমান খাদ্য আঁশ শরীরের টক্সিন-জাতীয় উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। গায়ের রং পরিষ্কার করে। যার ফলে ত্বক সুস্থ ও সুন্দর থাকে দীর্ঘদিন।


কোথায় পাবেন: সাধারণত পাবেন না। তবে বর্তমানে কিছু অর্গানিক ফুড সাপ্লায়ার লাল আটা সরবরাহ করছে। আপনি তাদের কাছ থেকে নিতে পারেন। যোগাযোগ করতে পারেন সুহৃদ গ্রামোন্নয়ন সমবায় সমিতির সাথে। সুহৃদের প্রতি কেজি লাল আটা ৪৫ (সাধারণ)/৫০ (প্রিমিয়াম) দরে আপনার বাসায় পৌছে দিবে (OFCC: Orgnic Food Consumer Club), তবে এই সুবিধা পেতে হলে আগে আপনাকে এই ক্লাবের মেম্বার হতে হবে। মেম্বার হতে কোনো খরচ নেই, দুই হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করলে (প্রথমবার টাকা অগ্রিম দিতে হবে) আপনি মেম্বার হয়ে যাবেন। আপনার নামে একটি আইডি থাকবে এবং মেম্বার হিসেবে প্রতিটি পণ্যে আপনি কিছু না কিছু ছাড় পাবেন। পণ্য যথেষ্ট থাকা সাপেক্ষে মেম্বার নয় এমন ভোক্তারাও অর্ডার করতে পারবেন।