বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলার কাটাখালি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং বারুইপাড়ার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন ওরফে শওকত চেয়ারম্যানের (৪২) অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়। ভুক্তিভোগী সংখ্যালঘুরা অভিযোগ করেছে, চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকি, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জোরপূর্বক জমি দখল এবং মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে হয়রানি করাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এই শওকত চেয়ারম্যান। একাধিক মামলার আসামি উল্লেখিত চেয়ারম্যানের রয়েছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। স্থানীয়রা জানান, শওকত চেয়ারম্যান নিজেও মাদকাসক্ত।সরেজমিনে জানা যায়, বারুইপাড়া, নিকারিপাড়া, কাটাখালি, কার্তিকদিয়া, কোধলাসহ আশেপাশের গ্রামের স্থানীয়রা শওকত চেয়ারম্যানের অত্যচার-নির্যাতনে তটস্থ থাকে। কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না। যাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে তারা প্রাণ ভয়ে এখন বাড়িছাড়া। এমনকি প্রাণের ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ পর্যন্ত করতে সাহস পাচ্ছে না। এর আগে বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালে শওকত চেয়ারম্যানের এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনে কেউ কেউ দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে।নাম না প্রকাশ করার শর্তে বারুইপাড়া ইউনিয়নের এক হিন্দু বৃদ্ধা জানান, বিএনপি সরকারের আমলে তার প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করে নেয় এই শওকত চেয়ারম্যান। এর আগে তার ফসলি জমির ধান কেটে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের গুন্ডাবাহিনী।তিনি বলেন, ‘ভাবিছিলাম হাসিনা ক্ষমতায় এলি অন্তত নিরাপদে থাকতি পারবানে, জান-মাল নিয়ি বাঁচতি পারবানে; কিন্তু তার আর জো কোনে! শওকতের অত্যাচার থেকি রেহাই পালাম কোনে?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদির কি কোনো আমলি শান্তি নাই? এত ক্ষ্যামতা শওকতে ক্যামনি পায়েছে, কোথ থেকি পায়েছে?’
একই গ্রামের আরেক প্রবীণ ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, সংখ্যালঘুদের ওপর নানা নিপীড়ন করাই চেয়াম্যানের কাজ। এখন তো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। তারপরেও কীভাবে শওকত এমন অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে তা সকলের কাছেই রহস্যময়।
এদিকে নিকারিপাড়ার বাসিন্দা মো. হামিদুর হোসেন অভিযোগ করেন, বিএনপি আমলে তো বটেই, বর্তমান আমলেও বেশ কিছু হিন্দুবাড়ি দখল করেছে শওকত চেয়াম্যান। কেবল সংখ্যালঘুরাই নয়; তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকেরাও। কেবল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার দায়ে তিনি তো বটেই, অনেককেই প্রাণের ভয়ে দীর্ঘদিন গ্রামের বাইরে অবস্থান করতে হয়েছে। এছাড়া পাশের গ্রাম কার্তিকদিয়ার অনেক হিন্দু পরিবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি, জুলুম কাকে বলে তার জ্বলন্ত প্রমাণ শওকত চেয়ারম্যান।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটাখালি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, এখনও প্রতিদিন চাঁদার টাকা গুনতে হয় তাকে। তার ওপর বিনা পয়সায় দোকান থেকে এটা ওটা নিয়ে যাওয়া তো আছেই।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তোজাম্মেল হক বলেন, ‘মাত্র দুই মাস হলো আমি এই থানার দায়িত্ব পেয়েছি। তাই অভিযোগগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি বলতে পারবো না। তাছাড়া চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
* প্রতিবেদনটি ঢাকাটাইমস থেকে নেওয়া হয়েছে।