এ দৃশ্য বাংলার লোকায়ত, এক সময় গ্রাম্য সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তবে এখন বিরল। মিস্টি জাতীয় খাবারের জন্য একসময় প্রধান নির্ভরশীলতা ছিল গুড়, সে ধারা বদলেছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উতপাদিত চিনি আসার পর থেকে।
গাছ কেটে গুড় বের করার সাথে আরেকটি বিষয় ছিল, প্রচুর মাটির ঠিলে/কলসি প্রয়োজন হতো রস ধরা এবং রস পরিবহন করার কাজে, তবে যেহেতু এখন আর ওভাবে গ্রামের মানুষ খেজুর গাছ কেটে রস বের করার পেশার সাথে যুক্ত নেই, তাই মৃতশিল্পের ওপরও প্রভাব পড়েছে।
খেজুর গাছ ছোটো থেকে অনেক বড় হয়। বড় গাছে ওঠায় ঝুঁকি আছে। গাছ কাটা এবং রস নামানোর কাজটি করতে দুই হাতই লাগে, ফলে বড় গাছে ওঠার কাজটি বেশ কঠিন। গাছিরা এক্ষেত্রে ব্যবহার করেন দড়া (মোটা দড়ি), যা দিয়ে নিজের শরীরটা গাছের সাথে বেঁধে নেন।
https://youtu.be/0C8Lv6hVISM
কেবল গাছ থেকে নামানো খেজুরের রস।
খেজুরের গাছ দিনকে দিন কমছে। কমার অন্যতম কারণ, ইটভাটায় খেজুর গাছের খুব চাহিদা, যেহেতু খেজুর গাছ দীর্ঘসময় বসে জ্বলে। ছবিটি যশোর থেকে তোলা। যশোরের বেশিরভাগ খেজুর গাছ চলে যাচ্ছে এখন ইট ভাটায়। এর আর একটি বড় কারণ হচ্ছে খেজুর গাছ কাটার লোক পাওয়া যায় না এখন আর। ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টকর এ পেশায় তেমন লাভ খুঁজে পাচ্ছে না ডিজিটাল প্রজন্মের মানুষ।
https://youtu.be/4Til2iC5fVM
শুধু খেজুর গাছের বাগান এখন আর খুব বেশি দেখা যায় না। যশোরে এক সময়, এই কয়েক বছর আগেও প্রচুর খেজুর বাগান ছিল, এখন নেই হয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
https://youtu.be/NV5EHu0RJZg?t=2
গ্রাম বাংলার খুবই চীরচরিত দৃশ্য এটি। ধরে নেওয়া যায় আগামী কয়েক বছর পর এরকম দৃশ্য আর থাকবে না।
মাটির এ চুলার নাম বাইন। এর উপর টিনের পাত্র রেখে রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানানো হয়।
https://youtu.be/yNGFO-iGUGk?t=3
বাজারে পরিশুদ্ধ খেজুর গুড়ের অনেক দাম। ভেজাল খেজুর গুড়েরও কোনো অভাব নেই। কিন্তু এই হলো এক গাছির বাড়ি। বোঝাই যাচ্ছে যে অন্যান্য কৃষির মতোই এক্ষেত্রেও গাছিরা প্রান্তিক।
গাছির বড়িতে গেলাম। খাওয়ালো আপেল এবং পাউরুটি, পাউরুটির সাথে ঝোলা গুড়। পাউরুটি এবেং ঝোলাগুড় কিন্তু খুব মজার।
রস সংগ্রহ করার জন্য যে ঠিলেগুলো ব্যবহার করা হয় পুড়িয়ে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে নিতে হয়, না হলে রস পঁচে যায়। গাছিরা অবশ্য জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি ওভাবে জানে না, তারা জানে, চুনপানি দিয়ে ঠিলে ধুয়ে পুড়িয়ে নিলে রস ভালো থাকে।
https://youtu.be/AP24ZkpN8CI
যশোরের খাজুরায় গিয়েছিলাম খেজুর গাছ দেখতে। এখনও অনেক রাস্তার ধারে এরকম সারি সারি খেজুর গাছ রয়েছে।
https://youtu.be/xoaJvWnxel4?t=14
হঠাত একটা শিশু চোখে পড়ল মাঠের মধ্যে। কুয়াশাচ্ছন্ন শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে, দূর থেকে আমাদের দেখার চেষ্টা করছে।
ইনি স্বচ্ছল এবং ডিজিটাল গাছি, তাই রস বাগে করে না এনে সাইকেলে বাঁধিয়ে আনছেন।
https://youtu.be/xH0kaE3BQoU?t=1
এটিও বদলে যাওয়া একটি চিত্র। গাছির শিক্ষিত ছেলে রস জ্বাল দিচ্ছে, কারণ, ভালো গুড় বানাতে পারলে পয়শা আছে। এক কেজি পিওর খেজুর গুড় চার পাঁচশো টাকায়ও বিক্রি হয়।
রস নিয়ে ফিরছে গাছি।
বিজ্ঞাপন