ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ হাজার বছর ধরে তিসির তেল ব্যবহার করে আসছে। রান্নায় তিল, সরিষা এবং তিসির তেলই ছিল এই অঞ্চলের মানুষের রান্নার তেল। আজকে আমি আলোচনা করছি তিসির তেল নিয়ে। এক সময় মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে তিসির তেলের ব্যবহার বেশি ছিল। পরর্বতীতে তা এশিয়ার দেশ গুলোতে প্রসারিত হয়। বর্তমানে তিসির চাষ কমেছে সয়াবিন তেলের ধাক্কায়। কিন্তু তিসির তেল এতটাই উপকারী যে সয়াবিন তেল তার ধারেকাছেও নয়।
তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, তিসির বীজ থেকে যে পুষ্টি পাওয়া যাবে তিসির তেলের পুষ্টি একই নয়। যেমন, তিসির বী জ থেকে আমরা ফাইবার ও জিংক পেয়ে থাকি। তিসির তেলে তা নেই। ফলে দিনে এক চামচ তিসির বীজ খাওয়া খুব উপকারী। ফলে আপনি রান্নায় হয়ত সরিষা বা তিলের তেল ব্যবহার করছেন, কিন্তু এক চামচ তিসি বীজ খেয়ে নিতে পারেন রোজ। তাতে বেশ উপকার পাবেন।
তিসির তেলের মূল পুষ্টিগুণ বলতে প্রধান হচ্ছে ওমেগা ফ্যাটি -৩ এসিড, যা আমরা সাধারণত মাছের তেল থেকে পেয়ে থাকি। এছাড়া আরও রয়েছে ALA( alpha linolenic acid), DHA, EPH এসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা-ক্যারটিন, ভিটামিন-ই।
এছাড়া তিসির তেল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তিসির তেল মেটাবলিজম সিস্টেম উন্নত করে, ফলে ডায়রিয়া আমাশয়ের মতো রোগ ভালো হয়। তিসির তেল প্রাকৃতিকভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করবে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে। ALA (alpha linolenic acid), যা শরীরে থাকা ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে বাধা দেয়। ২০১৫ সালে দ্যা জার্নাল নিউট্রিশন এন্ড ক্যান্সার সাপোর্ট-এর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, সস্তায় এবং কার্যকরভাবে ক্যান্সারের প্রতিরোধ করা যায় নিয়মিত তিসির তেল খাওয়ার মাধ্যমে।
তিসির তেল হার্টকে বিশষভাবে সুরক্ষা দেয়। কারণ, এতে থাকা Alpha linolenic acid হার্টকে সুস্থ রাখে এবং হার্টজনিত অনেক রোগকে দূরে রাখে। বিশেষ করে তিসির তেল ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে।
তিসির তেল আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাএা কমাতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরল LDL কে উল্লেখযোগ্য হারে কমায় তিসির তেলে থাকা ALA (alpha linolenic acid)।
এক গবেষণায় দেখা যায়, হাই-কোলেস্টেরল একজন রোগী যদি প্রতিদিন এক চা-চামচ তিসির তেল গ্রহণ করে তাহলে ১২ সপ্তাহের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাএা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
প্রায় প্রতিটি ঘরে একজন করে ডায়াবেটিক রোগী পাওয়া যাবে। নিয়মিত তিসির তেল সেবনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবে অতিরিক্ত মাএায় তেল সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। তেল খাওয়ায় ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।