থায়ামিন কার্বহাইড্রেট গ্লুকোজে পরিণত করতে সাহায্য করে। যেহেতু তেলাকুঁচোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থায়ামিন থাকে, তাই এটি পরিপাক সহায়ক। এটি প্রোটিন এবং চর্বি ভাঙতেও সহযোগিতা করে। বেঙ্গালোরের একদল ডাক্তার গবেষণা করে বের করেছেন, এটি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রেণে রাখতে সমর্থ। এটি প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে।
বাংলা নাম: তেলাকুঁচো
ইংরেজি নাম: ivy gourd, scarlet gourd, baby watermelon, little gourd, gentleman’s toes
বৈজ্ঞিানিক নাম: Coccinia grandis
লতা জাতীয় এ গাছটি প্রধানত দক্ষিণ এশিয়ায় দেখা যায়। একেক দেশে একেক নামে ডাকা হয়। যেমন, বাংলাদেশে এটি তেলাকুঁচো নামে পরিচিত। নেপালে বলা হয় গোল কানক্রি। বিভিন্ন গাছের উপর ভর করে তেলাকুঁচো বাড়তে পারে। অপেক্ষাকৃত ছায় জায়গাতে এ গাছ জন্মে।
পাতা ৬-৮ সে.মি. লম্বা এবং ৭-৮ সে.মি চওড়া। ফুল দেখতে অনেকটা তারার মত, পাপড়ি একটাই, তবে পাঁচভাগে বিভক্ত, রং সাদা। ফল দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে টকটকে লাল রংয়ের। কাঁচা ফল দেখতে অনেকটা পটলের মত, আবছা সাদা ডোরা রয়েছে গায়।
ফল খেতে অনেকটা শষার মত। ভেতরে ছোট ছোট বিচি রয়েছে।
তেলাকুঁচো পাতা এবং ফল ঐতিহ্যবাহী ওষুধু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফল এবং পাতার রস কুষ্ট, জ্বর, অ্যাসমা, ব্রঙ্কাইটিস এবং জন্ডিস রোগের ওষুধু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার আঞ্চলিক, বৈজ্ঞানিকভাবে খুব বেশি পরীক্ষিত নয়।
খাবার হিসেবে পাতা এবং ফল খাওয়া হয়। থাইল্যান্ডে বিভিন্ন তরকারী এবং সুপে ফল ব্যবহার করা হয়। সেখানে এটি চাষ হয়। ইন্ডিয়াতে খাওয়া হয়, তবে চাষ হতে দেখা যায় না। পাতা শাক হিসেবে রান্না করা হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়, তবে খুব বেশি মানুষে এটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে না। পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর বাজারে তেলাকুঁচো শাক কিনতে পাওয়া যায়।
স্বাদের পাশাপাশি তেলকুঁচো অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বিশেষ করে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। একশো গ্রাম তেলাকুঁচোয় ১.৪ মিলি গ্রাম আয়রন, ০.০৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লোবিন), ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ১.৬ গ্রাম আঁশ এবং ৪০ মিলি গ্রাম ক্যালশিয়াম থাকে। তেলাকুঁচো ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। তাছাড়া প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে।
উপকারিতা
শরীরের অবসন্নতা কাটে: তেলাকুঁচোয় ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। আয়রন শরীরের অবষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে।
স্নায়ুতন্ত্র রক্ষা করে: ভিটামিন বি২ পানিতে দ্রবণীয়, কিন্তু এটি শরীরে জমা থাকে। ফলে প্রতিদিন ভিটামিন বি২ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তেলাকুঁচোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভিটামিন বি২ থাকে। পাশাপাশি এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তেলাকুঁচো স্নায়ুবিক দূর্বলতা দূল করে।
পরিপাকক্রিয়া সহজ হয়: থায়ামিন কার্বহাইড্রেট গ্লুকোজে পরিণত করতে সাহায্য করে। যেহেতু তেলাকুঁচোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ থায়ামিন থাকে, তাই এটি পরিপাক সহায়ক। এটি প্রোটিন এবং চর্বি ভাঙতেও সহযোগিতা করে। ১০০ গ্রাম তেলাকুঁচোয় ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ থাকে যা প্রতিদিনের প্রয়োজনের ১৫.৮৩%।
পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে: তেলাকুঁচো ফল এবং পাতায় প্রচুর অাঁশ থাকাতে তা পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে, মল বাড়ে এবং সফট হয়। ফলে গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারজনিত সমস্যা কাটে।
বৃক্ক বা মূত্রথলিতে (কিডনিতে) পাথর জমতে দেয় না: বৃক্কের পাথর মূলত ক্যালশিয়াম এবং আরো কিছু খনিজ পদার্থের মিশ্রণ যা প্রস্রাবের সাথে নিয়মিত বের না হওয়ায় ধীরে ধীরে পাথর আকারে জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে কৃত্রিম ক্যালশিয়ামের পাশাপাশি প্রাকৃতির উৎস হতে প্রাপ্ত ক্যালশিয়াসমও পাথর হিসেবে জমতে পারে। দেখা গেছে, তেলাকুঁচোয় যে ক্যালশিয়াম থাকে তা পাথর হিসেবে জমে না।
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখতে: বেঙ্গালোরের একদল ডাক্তার গবেষণা করে বের করেছ, এটি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রেণে রাখতে সমর্থ। এটি প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে।
যেভাবে খাওয়া হয়
কাঁচা ফল তরকারী হিসেবে খাওয়া যায়, পাতা শাক হিসেবে ভেজে খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁচা ফল এবং কচি পাতা দিয়ে সুপ এবং সালাদ তৈরি করা হয়। কাঁচা ফল পটলের মত চিরে দুইভাগ করে ভেজে খাওয়া যায়।
লেখা এবং সম্পাদনা: দিব্যেন্দু দ্বীপ