এরা সবাই হৃদয়হীন নিশ্চিত

বাগেরহাট প্রেসক্লাব

একটা সহজ উদাহরণ দিই—

বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে একজন নারী বসবাস করতে শুরু করে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাকে এভাবে দেখতে পাই। একটা ঝুপড়ি বানিয়ে কোনোমতে বসবাস করতে শুরু করে। একদিন দুপুরে দেখলাম ওই ঝুপড়ির মধ্যেই হাড়িতে কিছু একটা রান্না করার চেষ্টা করছে। এবার বৃষ্টি কম তারপরও জুন মাস থেকেই কমবেশি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আমরা ভাবনা ছিল, বৃষ্টিতে এই ঝুপড়িতে সে কীভাবে থাকবে! দুই মাসের ব্যবধানে আবার তাকে আমি দেখতে চাইলাম—খুব যে মনে করে হৃদয়ে জায়গা দিয়ে তাকে দেখতে চাচ্ছি এমনটা নয়, কারণ, এরকম দুস্থ বা আরো দুস্থ নতুন কাউকে দেখে পুরাতন এরকম কাউকে ভুলতে আমি বা যে কেউ বাধ্য, কারো জন্যই কিছু করার নেই, শুধু ভাবনা ছাড়া, এক সময় কিছু করার চেষ্টা করতাম, এখন আর করি না।

হঠাৎ একদিন আমার বউ বলতেছে, একজন মহিলা আসছিল কিছু তরকারী নিয়ে, সে কিনতে বলল, তাই এগুলো কিনলাম। কয়েকদিন পরে বউ আবার বলতেছে, সেই মহিলা তো এখন প্রায় রোজই কিছু একটা নিয়ে আসে, আজকে নিয়ে এসেছিল কয়টা লেবু!

এভাবে একদিন আমার সামনে পড়ে গেল সে। আমার মনে পড়ল, এইতো প্রেসক্লাবের সামনের সেই মহিলা। আমার তাকে পাগল মনে হল না, মনে হল পাগলের বেশ না ধরে এভাবে বাঁচা সম্ভব কী করে তার, ফলে একটু পাগল পাগল তো সে হবেই।

গত কয়দিন ধরে আবহাওয়া খুব খারাপ, ঝড় বৃষ্টি—অামি দেখতে চাইলাম, ওই মহিলা এখন কীভাবে ওই ‍ঝুপড়িতে আছে। দুপুরে দেখলাম সে একজায়গায় ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে, এখন রাত দশটা বাজে আমি বেরিয়ে গিয়ে দেখতে চাই সে আবার ওই ঝুপড়িতে ফিরে এসেছে কিনা, আমার ধারণা বৃষ্টি জোরে হলে সে ওই ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে কোথাও আশ্রয় নেয়, বৃষ্টি কমলে আবার ওখানে চলে আসে। কারণ, ওটাই তার মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই।

https://youtu.be/_Db5jeGfZVU


আমি গিয়ে তাকে দেখে আসলাম। আমি শুধু বোঝার চেষ্টা করেছি সে ভেতরে আছে কিনা, আমি তাকে ডিস্টার্ব করিনি। সে ভেতরে ঘুমাচ্ছে, হয়ত ঘুমাতে পারছে অথবা পারছে না। আমি ভোরবেলা গিয়ে আবার দেখতে চাই, যথাসম্ভব ঐ নারীর উপর চোখ রাখতে চাই … সত্যি কথা বলতে আমার কিছু করার নেই, আমি শুধু দেখতে চাইছি এ ধরনের মানুষের পরিণতিটা কী হয় আসলে, যদিও শেষ দেখা সম্ভব নয়, কারণ, ওখান থেকে সে চলে গেলে বা কেউ দয়াপরবশ হয়ে তাকে আশ্রয় দিলে সেটি আর আমার জানা সম্ভব হবে না। তবে দুই মাস ধরে সে ওখানে আছে এটা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এসব এখন আর মানুষ দেখে না, দেখতে চায় না।

কিন্তু যারা দেখার দায়িত্বে আছে, আর যদি এসব দেখার দায়িত্বে না থাকে তাহলে কী দেখতে তারা প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক বিভিন্ন দায়িত্বে আছে? এই রাস্তা দিয়ে ডিসি এসপি এমপি -রাষ্ট্র যন্ত্রের সকল স্তরের কর্তা ব্যক্তিদের যাতায়াত আছে, তাদের কি এটি চোখে পড়ে না? তাছাড়া বাগেরহাট শহরে এটি যে খুব বেশি দেখা যায় তাও কিন্তু নয়, তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং সমাজের যারা শ্রেয়তর জায়গায় রয়েছে, পাশেই প্রেসক্লাবে যারা সংবাদ সংগ্রহ করছে বা কয়েক কদম দূরে মহিলা পরিষদে যারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছে এদের কারো মনে কেন এই প্রশ্নের উদয় হবে না যে এই মহিলা কেন এখানে এভাবে আছে?