বজ্রপাতের সময় করণীয়: … ওই স্থানে যদি কোনো বড় গাছ না থাকে, তবে আপনি সেই স্থানের সবথেকে উঁচু

follow-upnews
0 0

পত্রিকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খবর এসেছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। আকস্মিক মৃত্যুর এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কিছু নেই। বজ্রপাত এড়ানোর সবচে নিরাপদ উপায় হচ্ছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যথাসম্ভব বাইরে না থাকা। কিন্তু বাইরে থাকা অবস্থায়ও শুরু হতে পারে বজ্রপাত, আবার বাইরে যাওয়ার বাধ্যবাধকতাও থাকে, তাই কিছু করণীয় অন্তত জানা থাকা দরকার, যাতে ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের বজ্রপাতে মুত্যুর এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে।  যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউটের ২০১০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে।

বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় –এ বিষয়ে ধারণা থাকা খুবই জরুরি। 

মৌসুমী বায়ু প্রবেশের আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে।  রাস্তায় থাকাকালীন মেঘের আওয়াজ শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে।

 পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটির পাশে দাঁড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়।

 ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বিপজ্জনক। পানির সংস্পর্শে মোটেই যাওয়া যাবে না।  বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকাটাই শ্রেয়।

 বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে।  সোজাসোজি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত।

 বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক।  তবে শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে।

ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা গেলে খোলা মাঠ, পাহাড়ের চূড়া, সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করা মোটেও ঠিক নয়। 

অনেক সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।  তখন নিজেকে যতটা সম্ভব গুটিয়ে নিতে হবে। কারণ বজ্রপাত সব সময় উঁচুতে আঘাত হানে।

 বজ্রপাতের সময় কোনো খোলা মাঠে বা খোলা স্থানে কোনো অবস্থাতেই দাঁড়ানো যাবে না।  ওই স্থানে যদি কোনো বড় গাছ না থাকে, তবে আপনি সেই স্থানের সবথেকে উঁচু।  তাই বজ্রপাত আপনাকেই স্পর্শ করবেই।

যদি খোলা মাঠে থাকেন তাহলে পায়ের পাতায় ভর করে হাঁটুর উপর হাত রেখে যতটা সম্ভব মাথা নিচু করে রাখুন।  তবে হাঁটু বা হাত কোনোটাই যেন মাটিতে না স্পর্শ করে।

বজ্রপাতের সময় শুয়ে পড়তে হয় –এমন ধারণা মারাত্মক ভুল। এতে বজ্রপাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।  যদি নদীতে নৌকায় থাকেন তাহলে একইভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিন।

সম্ভব হলে ছইয়ের নিচে অবস্থান নিতে পারেন।  বনের মধ্যে থাকলে বড় গাছের নিচে না গিয়ে ছোট গাছপালার নিচে নিজেকে গুঁটিয়ে রাখুন।

কর্ডযুক্ত কোনো ফোন ব্যবহার করবেন না। বাড়ি নিরাপদ রাখতে আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে।  বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত পানির ফোয়ারায় গোসল করবেন না।

বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতের সব সুইচ এবং দরজা-জানালা ভালোমতো বন্ধ রাখতে হবে।  বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালা স্পর্শ করবেন না।

এ সময় ধাতববস্তু যেমন, বাড়ির ধাতবকল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র যেমন, টিভি, ফ্রিজ, পানির মোটর ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না।

বজ্রপাতের আভাস পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণগুলো ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বজ্রপাত প্রাকৃতিক চার্জ হিসেবে কাজ করে।  বজ্রপাতকে কখনোই প্রতিরোধ করা যাবে না।  তবে উপস্থিত বুদ্ধি ও কৌশল জেনে কাজে লাগালে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

Next Post

একটার পর একটা প্রয়োজন এবং আধুনিক সভ্যতার সংকট

প্রয়োজনের পর প্রয়োজন অনুভূত হওয়া, এবং তা যেকোনোভাবে মেটানোর চেষ্টা আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট বলে মনে হয়। ঢাকায় এসে যখন আমেরিকান তালার সাথে পরিচিত হই, তখনই বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম। মনে মনে প্রশ্ন তুলেছিলাম, এমন একটি তালার (ঘরে বা বাইরে থেকে খোলা যায়) প্রয়োজন হয়েছিল কেন? প্রয়োজন […]