সিদ্ধান্ত গ্রহণে দার্শনিক চিন্তাধারার একটি গল্প // মাহবুব মজুমদার

Shamim
পাহাড় এবং শান্ত নদীর মাঝে একটি গ্রামে পিঙ্কি নামে এক তরুণী বাস করতো । তার কোমল স্বভাব এবং চিন্তাশীল স্বভাবের জন্য সে সবার প্রিয় ও পরিচিত ছিল। পিঙ্কি প্রায়ই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারে অবশ হয়ে যেত। পিঙ্কি একদিন নদীর ধারে সে কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে তা নিয়ে ভাবছিলো। ইদানিং সে তার পড়াশোনায় তেমন কোনো উন্নতিই দেখছে না। জীবনের যেন কোনো উদ্দেশ্যই সে খুঁজে পাচ্ছে না। ঠিক তখনই গ্রামের জ্ঞানী ব্যক্তি জনাব জামান তার কাছে আসে। পিঙ্কি, আমি লক্ষ্য করছি তুমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছো। আজ আমি তোমাকে এমন কিছু সমাধানের গল্প বলবো, বুঝতে পারলে যে কারো দ্বিধা বা সংশয় অনেক কমে যাবে।


অস্তিত্ববাদঃ স্বাধীনতাকে গ্রহণ করা
তাহলে শোনো— একজন অস্তিত্ববাদী ছিলেন, যার নাম ছিল জিন। জিন বিশ্বাস করতেন যে, প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাকে তার নিজেকে বুঝতে সাহায্য করে। তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়াকে স্বাধীনতার সাথে অনুভব করতেন , বুঝতেন যে তার পছন্দগুলো তার জীবনের অর্থ দেয় এবং এটি ক্ষমতা প্রদায়নকারী এবং চ্যালেঞ্জিং হয়।


স্টোইকিজমঃ মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করা
এপিকটেটাস নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ছিলেন স্টোইক। তিনি যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় শুধু তার ওপরই মনোযোগ দিতেন এবং যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তা মেনে নিতেন। তিনি যুক্তিবাদ এবং আত্ম-শৃঙ্খলার চর্চা করতেন। এপিকটেটাসের মতে প্রচেষ্টা, ইচ্ছা বা অভিপ্রায় হলো কোন কিছু অর্জনের চেয়ে বা তার ফলাফল অর্জনের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ ।


প্রাগমেটিজমঃ ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক ফলাফলের মূল্যায়ন
এরপর শোনো প্রাগমাটিস্ট ডিউই-এর কথা । ডিউই সিদ্ধান্তের ব্যবহারিক প্রভাব এবং ফলাফলের ওপর মূল্য দিয়েছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে পরীক্ষা করতেন। তিনি বিমূর্ত ভয়গুলোর পরিবর্তে এর বাস্তব সুবিধা এবং উন্নতির ওপর মনোযোগ দিতেন।


নৈতিকতাঃ চরিত্রের চর্চা
তোমরা নিশ্চয়ই এরিস্টটলের নাম শুনেছো। তিনি ছিলেন চরিত্রের নৈতিকতা গঠনে বিশ্বাসী নীতিবিদ। এরিস্টটল সিদ্ধান্তকে সাহস, জ্ঞান এবং সংযমের মতো গুণাবলী চর্চার সুযোগ হিসেবে দেখতেন। তিনি প্রতিটি পছন্দকে নৈতিক উৎকর্ষতা এবং ব্যক্তিগত উন্নতির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখতেন।


ডিটারমিনিজম বনাম মুক্ত ইচ্ছা
ডিটারমিনিস্ট হান্না বিশ্বাস করতেন যে, আমাদের জীবনের অনেক দিক আছে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে ব্যক্তিগত কর্তৃত্বের চর্চা এবং মুক্ত ইচ্ছার প্রয়োগ মানুষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরো শক্তিশালী করে।


দেহ-মনের দ্বৈতবাদ
এবার শোনাই মাইন্ড-বডি ডুয়ালিস্ট ডেকার্টের কথা— যিনি শিখিয়েছিলেন যে, মানসিক প্রতিরোধ, মানসিক এবং শারীরিক উভয় কারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। মাইন্ডফুলনেস, মেডিটেশন এবং ব্যয়ামের মাধ্যমে, তারা তাদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য করে।


জামানের সাহেবের গল্প শুনে পিঙ্কি আশার আলো দেখতে পেলো। অসীম সম্ভাবনাময় পৃথিবীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ অনেক সহজ মনে হলো। সে জনাব জামান সাহেবকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বলল, আপনি আমাকে যা শোনালেন, তার মূল্য কোনো কিছুর বিনিময়ে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। জামান সাহেব বললেন, তুমি যদি উপকৃত হও তবে সেটাই আমার মূল্য। আরো অনেক কিছু আলোচনার আছে। অন্যদিন শোনাবো।

লেখকঃ এনজিওকর্মী