আমি নিজে বইটি বের করেছি সংস্করণ করে।
দিকদর্শন হতে বের করা গতবারের বইটি।
দিকদর্শন হতে বের হওয়া গতবারের বইটিতে আমি যে ‘প্রসঙ্গ কথা’ লিখেছিলাম এবারও ওরা সেই লেখাটুকুই রেখেছেন, কিন্তু লেখার নিচ থেকে আমার নাম সরিয়ে দিয়েছেন।
কৃষি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে যখন ঢাকায় আসলাম, তখন আমার সামনে কোনো লক্ষ্য ছিল না, টিকে থাকাটাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। বিসিএস ভাইভা দিলাম, অনেক ভাল রিটেন ও ভাল ভাইভা দিয়েও বিসিএস হল না। চয়েচ কম দেওয়া ছিল, তাই বলে একশো’র মধ্যে রোল নম্বর থাকবে না, তা কখনো ভাবিনি। হল না, ভাইভা তে কেন জানি ফেলই করিয়ে দিল! এরপর সামনে আর কোনো প্রথাগত অপশন থাকল না। চাকরির বয়স শেষ, তাই বেঁচে গেলাম আরো দৌঁড় ঝাপের হাত থেকে। বিকল্প বলতে হাতে ছিল- মিডিয়ায় কাজ করা, অথবা কোনো প্রকাশনীতে কাজ করা। দ্বিতীয়টিতে আমার আগ্রহ বেশি ছিল। কারণ, মিডিয়ায় কাজ করে দ্রুত প্রচার পাওয়া যায়, কিন্তু মৌলিক কিছু করার জন্য মিডিয়া ভাল জায়গা নয়। ফলে প্রকাশনীতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। দিকদর্শন প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী রতন চন্দ্র পালের সাথে যোগাযোগ করলে উনি কিছু কাজ দিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম- একটি সৃজণশীল প্রকাশনী করা যায় কিনা- উনি ভবিষ্যতে তা করার কথা বলে আমাকে চাকরির বাজারের বই-পত্রের কিছু কাজ করতে বললেন। আমি রাজি হলাম। কাজ করতে থাকলাম, এক পর্যায়ে গিয়ে ওনার সাথে কাজ বাড়ল, একে একে অনেকগুলি বই করা হল। বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ পরীক্ষার বই। এর মাঝে বইমেলা আসল, উনি বইমেলায় স্টল দিলেন। আমার বেশ কয়েকটা বইও বের করলেন, কিন্তু আমাকে দিয়ে বই মেলার কাজ করালেন না, অর্থাৎ সৃজণশীল প্রকাশনীর দায়িত্ব আমাকে আর দিলেন না।
আমি একের পর এক নিয়োগ পরীক্ষার বই বের করে দিচ্ছি, উনি বাজারজাত করছেন। একা তো আর সব কাজ করা যায় না, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রদের ডেকে সহযোগিতা নিয়ে বইগুলো করে দিতাম। একদম ট্রেসিং পর্যন্ত আমরা বই করে দিতাম। কথা ছিল বই বের হওয়ার সাথে সাথে উনি টাকা দিবেন, কিন্তু কোনোদিন উনি কথা রাখতে পারেননি। তবে দেরিতে হলেও টাকাটা দিয়েছেন, কিন্তু যত দিন গিয়েছে উনি ততই টাকার পরিমাণ এবং প্রদানের ধরণ উভয়ই খারাপ করেছেন। কোনোদিনই উনি স্বতস্ফুর্তভাবে টাকা দেনননি। এক সময় এমন হল, যাদের নিয়ে কাজ করছি তাদের টাকা দিতে পারছি না, নিজেও চলতে পারছি না, অনেকগুলো বইয়ের টাকা পাওনা হয়েছে, সবগুলো বই বেরও হচ্ছে না। ওনাকে বলতে বলতে আর বলার উপায় খুঁজে পাই না। এরপর লিখিতভাবে আবেদন করলাম। উনি টাকা তো দিলেনই না, উল্টে দুর্বব্যবহার করলেন। দুর্বব্যবহার হজম করতে হল। ভাবলাম- পাওরা টাকা একদিন না একদিন দিবেন। দিলেন না। ভাবলাম- টাকা দেননি এমন বইগুলো আর বের করবেন না। না, বইগুলো উনি ঠিকই বের করছেন।
শুধু টাকা নিয়ে না, ওনার সাথে ঝামেলা বেধেছিল, বইতে নাম দেওয়া নিয়েও। যেমন বই-ই হোক বইয়ের কাজের ক্ষেত্রে লেখক এবং সম্পাদকের স্বীকৃতি থাকাটা খুবই জরুরী। এ ধরনের বই সম্পাদনা করেই বের হয়। নতুন কিছু লেখার তেমন সুযোয নেই। প্রথমে বইগুলোতে আমার নাম থাকলেও এক সময় উনি নাম বাদ দিয়ে দিলেন। নতুন নতুন নাম আমদানি করে দিতে লাগলেন। আমি প্রতিবাদ করাতে উনি খেপে গেলেন। মনে হয় যাচ্ছেতাই করার লাইসেন্স ওনারা অর্জন করেছেন যেকোনোভাবে।
সবচেয়ে বাজে ব্যাপার যেটা ঘটল- ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রিফেস’ নামে নতুন সিলেবাস মোতাবেক ওনাকে বিসিএস’র একটা বই করে দিয়েছিলাম। বইটি সম্ভাবনাময়। কিন্তু বইটির টাকা উনি আমাকে দিলেন না। এখনো এক লাখ টাকা ঐ বইটির জন্য ছেলেদের কাছে আমি ঋণী।
“বিসিএস প্রিলিমিনারি ইংরেজি সাহিত্য” নামে আরেকটি বই করে দিয়েছিলাম। যে বইটি প্রথমে উনি করতে রাজিই ছিলেন না। আমি একরকম জোর করে বইটি বের করেছিলাম। উনি কম্পোজ-প্রুফ বাবদ আমাকে ৭০০০/- দিয়েছিলেন। কথা ছিল- বই চললে টাকা দিবেন। যেহেতু অন্য কেউ এরকম বই তখন বের করেনি, তাই প্রথম বারেই বাজিমাত। বইটি চলল দেধারচ্ছে, কিন্তু উনি আমাকে টাকা দিলেন না। ভাবলাম- যেহেতু ওনার সাথে ঝামেলা হয়েছে, তাই উনি হয়ত বইটি আর ছাপবেন না। কিন্তু আমার সে ভাবনাও টিকল না। উনি বইটি আবার বের করেছেন আমার নামের একটি অংশ (দ্বীপ) জুড়ে দিয়ে। ভেতরে যে ‘প্রসঙ্গ কথা’ লেখা রয়েছে তাও আমার লেখা। লেখার নিচে থেকে আমার নামটি শুধু সরিয়ে নিজের নামটি দিয়েছেন। ভেতরের কনটেন্টেরও তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। উল্লেখ্য দিকদর্শন থেকে বের হওয়া বইটির কাভার ডিজাইনও আমার করা ছিল। এবার তিনি ডিজাইনে আংশিক পরিবর্তন এনেছেন, একটু কালার চেঞ্জ করেছেন। কী বলব? কী বলার আছে?
ছবি-১। আমি নিজে বইটি বের করেছি সংস্করণ করে।
ছবি-২। দিকদর্শন হতে বের করা গতবারের বইটি।
ছবি-৩। “আমার লেখা প্রসঙ্গ কথা” ‘র নিচে ওনার নাম!