সোস্যাল মিডিয়ার এ পোস্টগুলো ভবিষ্যতের কোন বাংলাদেশকে তুলে ধরছে?

পাকিস্তান

৫ আগস্ট রক্তক্ষয়ী গণবিস্ফোরণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রত্যক্ষভাবে দৃশ্যমান হলেও এর আগে থেকেই ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, বাঙলা সংস্কৃতিবিরোধী এবং প্রবলভাবে ভারতবিরোধী উপকরণ পুরো সোস্যাল মিডিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েচ্ছিলো। এ অভিযানে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগও কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলো না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে ভারতের কাছে প্রকৃতপক্ষে এ বার্তায় পৌঁছে গিয়েছে যে, পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও ভারতের আরেক শত্রু দেশ। সেটি সামাজিক পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয় কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়। গণতন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের বিভ্রান্তি আছে। প্রকৃতপক্ষে জনমতের প্রতিফল ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যদি হতে হয়, তাহলে বাংলাদেশকে অবশ্যই পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। জামায়াত ইসলাম বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে ক্ষমতায় যেতে পারবে কিনা সেটি অকপটে ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণকে নির্ধারণ করতে দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিষয়গুলো পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে এটি স্পষ্ট যে ভোটের মাধ্যমে এখন জামায়াত ক্ষমতায় আসতে সক্ষম। পাশাপাশি যদি ইসলামি বিপ্লবের কথা বলা হয়, তাহলে সে সুযোগও বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করে, ৫ আগস্ট যে বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে, সেটি মূলত ইসলামী বিপ্লবই ছিলো।

সোস্যাল মিডিয়া থেকে এ পোস্টগুলো সংগ্রহ করছেন পত্রিকার সামাজিকযোগ যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক।

জামায়াত ইসলাম
ডা. শফিকুর রহমান হলেন চিকিৎসক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমীর। তিনি ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়ে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই বছরের ২৭ অক্টোবর তিনি ২০২৩-২০২৫ কার্যকালের জন্য পুনরায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। পরে, ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করেন।
জামায়াতে ইসলামী
অধ্যাপক আনিসুর রহমানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ
ইসলামী রাষ্ট্র বাংলাদেশ হবে কিনা, সেটি একটি প্রশ্ন, তবে তার চেয়ে বড় প্রশ্ন— বাংলাদেশ আদৌ বাংলাদেশ থাকছে না।
বাংলাদেশ
বিষয়টি নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করলেও, ইসলাম প্রচার প্রসার এবং জেহাদের স্বার্থে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলেছেন কয়েকজন ইসলামিস্ট।
ভারত
ক্ষমতায় আসার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা। মূলত প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর থেকেই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা সেভেন সিস্টার্স-এর প্রসঙ্গ তুলে ভারতকে হুমকি দিতে শুরু করে।

 

 

কলাবাগান
ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকার ৩নং সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কে কারা এই ব্যানারটি টানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ
আরবে ইসলাম ধর্ম গোড়াপত্তনের পর থেকে দ্রুতই তারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ষোড়শ শতক পর্যন্ত তাদের সফলতা অব্যাহত থাকলেও ব্রিটিশ এবং পরবর্তীতে আমেরিকার সম্রাজ্যবাদের কাছে তারা হার মানে। মধ্যে মার্কসীয় রাজনীতিও তাদের এই অভিযাত্রায় বাদ সাধে। ছন্দপতন হলেও মুসলিম উম্মাহ তাদের এই জেহাদ থেকে কখনই সরে আসেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে সুরই আমরা দেখতে পাই।
পূর্ব পাকিস্তান
৫ আগস্ট ২০২৪, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। তারই প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া ঙযাচ্ছে সোস্যাল মিডিয়াতেও। ধারণা করা হচ্ছে ‘১৯৭১-এর পর থেকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে যে সমস্যা ছিলো বর্তমান সরকার সেসব মিটিয়ে ফেলে জনগণের দাবী অনুযায়ী এগোতে চাইবে।
খিলাফত রাষ্ট্র
খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১০ সালে হিযবুত তাহরীর-এর কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞসাবাদ করলে তারা অকপটে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন বলে জানিয়েছিলেন। এতদিন এই দাবী নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হলে গত কয়েকবছর ধরে সামাজিকভাবেই, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দাবীটি উঠছে।
দেওয়ানবাগী
ঢাকার আরামবাগ এলাকায় ‘দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ-এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা মারা যান ২০২০ সালে, যিনি ‘দেওয়ানবাগী পীর হিসাবে’ পরিচিত ছিলেন।
ভারত বিদ্বেষ
স্যোসাল মিডিয়ায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এতসব শোরগোলের পরেও চলতি মাসে ভারত থেকে ডিম এনেছে ড. ইউনুসের সরকার।

 

 

বাংলাদেশকে অধিক পরিমাণে গোশত উৎপাদনকারী গরু ও মহিষের বীজ ও জাত সংগ্রহ দিতে চায় পাকিস্তান। এছাড়া বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমদানি করার আগ্রহ দেখিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

ধর্ম থেকে উদ্ধৃত দিয়ে এ ধরনের বার্তায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভরে থাকে। এগুলোর সামাজিক প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা নিয়ে আসলে কোনো গবেষণা নেই।

শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙচুর
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়, এবং ম্যুরালে কালিমা লেপন করা হয়।
বাংলাদেশ
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের নানান ধরনের দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো অনেক ছবি বিশেষভাবে আলোচনার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশীদের মধ্যে এই ধারণাই প্রবল হয় যে, ভারত বাঁধ ছেড়ে দেওয়ার ফলে এই বন্যা হয়েছে। যদিও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস প্রফেসর আইনুন নিশাত এ বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছেন।
১৯৭১
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কাণ্ডারি মাওলানা ভাসানির নামে এই বক্তব্যটি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভারত বয়কট
ঐতিহাসিক কারণ যা-ই থাক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত বিদ্বেষ নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায়। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন- এ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে হলে ভারতকেই অগ্রণী হয়ে সামাজিক ভিন্নমতের জায়গাগুলোতে কাজ করতে হবে, এবং সেটি সম্প্রিতীমূলক হওয়া প্রয়োজন।
ইন্ডিয়া শত্রু
ভারতকে শত্রু মনে না-করাটাকেও এক ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে ‍শুরু করেছে।
ভারত শত্রু
ফেসবুকে গ্রুপের নাম এবং বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন, ভারতের বিরুদ্ধে এখন সবাই সমান সরব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
প্রশ্ন উঠেছে, এ ধরনের কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা আইনত বৈধ কিনা।