২০১৬ সালে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হলেও এখনও শুরু হয়নি লেখক অভিজিৎ রায় স্মরণে ‘মুক্তচিন্তা স্তম্ভ’ নির্মাণের কাজ

মুক্তচিন্তা স্তম্ভ

২০১৫ সালে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার পর ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা একে একে মুক্তচিন্তার বিভিন্ন লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, শিক্ষককের কুপিয়ে হত্যা শুরু করে। নিহত হন ফয়সাল আরেফিন দীপন, ওয়াশিকুর বাবু, নিলাদ্রী  চট্টোপাধ্যায় নিলয়, অনন্ত বিজয়, নাজিমউদ্দিন সামাদ সহ আরও অনেকে। এর আগে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল দিনে তারা হত্যা করেছিল ব্লগার রাজীব হায়দারকে। 

প্রসঙ্গত,  ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বইমেলা থেকে ফেরার পথে ধর্মীয় জঙ্গিগোষ্ঠী লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে। তাদের আক্রমণে তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

মুক্তচিন্তা স্তম্ভ

তখন বিডিনিউজ সহ মূলধারার সকল পত্রিকায় অভিজিৎ রায়কে হত্যার স্থানে ‍‘মুক্তচিন্তা স্তম্ভের’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের খবরটি এসেছিল, কিন্তু এর পরে আর এ খবর বা কাজ কোনোটিই এগোয়নি। 

বিডিনিউজের খবরটি ছিল—

অভিজিৎ রায়

ভাস্কর্যটিতে যাদের প্রতিকৃতি থাকবে তাদের মধ্যে রয়েছেন লেখক-অধ্যাপক-গবেষক ড. হুমায়ূন আজাদ, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়, লেখক-ব্লগার অনন্ত বিজয়, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদ।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “আমরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছি। রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও কয়েক লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের নাম রচিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সেই ‍যুদ্ধের পর এখন আবার এক নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়ত মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। জঙ্গিবাদীরা ধর্মের নামে আমাদের মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করছে।

“সে মুক্তচিন্তার মানুষদের মধ্যে একজন অভিজিৎ রায়। তার হত্যাকাণ্ডের স্থানে নির্মিত হতে যাচ্ছে ভাস্কর্যটির। এটা নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে মুক্তচিন্তার পক্ষের সৈনিকদের মানুষদের বাঁচিয়ে রাখবে।”

অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “জঙ্গিবাদীরা কয়েক বছর ধরে মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যা করছে। তাদের বিচারের দাবিতে, তাদের স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য ভাস্কর্যটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির কাছের ফুটপাত এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে ধর্মান্ধ উগ্রপন্থিরা।

এর আগে যে স্থানে অভিজিৎকে হত্যা করা হয় তার কাছেই একটি স্থানে ২০০৪ সালে লেখক অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদকে কুপিয়ে ছিল ধর্মান্ধরা। পরে ওই বছরই জার্মানিতে তিনি মারা যান।

আর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মিরপুরে বাসার কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে।

তবে ২০১৫ সালে অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার পর ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা একে একে মুক্তচিন্তার বিভিন্ন লেখক-প্রকাশক, ব্লগার, শিক্ষককের কুপিয়ে হত্যা শুরু করে, যাতে নিহত হন ফয়সাল আরেফিন দীপন, ওয়াশিকুর বাবু, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়, অনন্ত বিজয় ও নাজিমউদ্দিন সামাদ।

বাংলাদেশ রাইটার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যথাশীঘ্র ‘মুক্তচিন্তা স্তম্ভ’ নির্মাণের কাজ শুরু করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মতিন বাঙালি বলেন, একটা স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হওয়ার পর সেটি কীভাবে থেমে যায়? এটা বিস্ময়কর, আমরা বিষয়টির ‘কারণ’ অনুসন্ধানপূর্বক অবিলম্বে কাজ শুরু করার তাগিদ জানাই।