পৃথিবীর সব বরফ যদি গলে যায়?

ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো

পৃথিবীর সব বরফ গলে পৃথিবী কি পানির নিচে তলিয়ে যাবে? যদি তলিয়ে যায় তাহলে কত তলে তলিয়ে যাবে? কত বরফ আছে পৃথিবীতে? পৃথিবীতে পানির পরিমাণ কি বরফ গলা ব্যতীত আর কোনোভাবে বাড়া সম্ভব?

এরকম প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনার মাথায়ও ঘুরপাক খায়, নাকি? প্রশ্নের উত্তর যদি এতদিনে না পেয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এ লেখা।

পৃথিবীতে প্রধানত বরফ জমাট বেঁধে রয়েছে এন্টার্কটিকা মহাদেশে, গ্রিনল্যান্ডে এবং সুউচ্চ কিছু পর্বতে। জানিয়ে রাখা দরকার যে পৃথিবীর দশভাগ অঞ্চল বরফাচ্ছাদিত, যার আয়তন ১৫০০ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার।

পৃথিবীর সাদু পানির ৭০ থেকে ৭৫ ভাগই জমাট বেঁধে আছে। এন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফের পুরুত্ব এত বেশি যে কোথাও কোথাও তা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পুরু, এবং গড় পুরুত্ব ২.১ কিলোমিটার।

বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন পৃথিবীর সব বরফ যদি গলে যায় তাহলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বাড়বে ৭০ মিটার বা ২৩০ ফিট! তাহলে? পৃথিবীর কয়টি দেশ বা অঞ্চল এর চেয়ে বেশি উচ্চতায় অবস্থিত?

প্রথমে বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা সমুদ্র পৃষ্ঠের ১০৫ মিটার বা ৩৪৪ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকার গড় অবস্থান সমুদ্র পৃষ্ঠের চেয়ে মাত্র ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট উঁচুতে।

বরফ কিছু গলছে এবং আগের চেয়ে সেটি খুব দ্রুত সংগঠিত হচ্ছে, তবে বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না আসলে সব বরফ গলে যাবে কিনা, আর গেলেও সেজন্য ঠিক কতদিন লাগবে।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, ১ লক্ষ ২৫ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বর্তমান উচ্চতার চেয়ে ১৩ থেকে ২০ ফুট বেশি ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা গ্রিনল্যান্ড এবং পশ্চিম এন্টার্কটিকের বরফ গলে যাওয়ার ফলে এটি হয়েছিল।

এ গবেষণা থেকেই ধারণা করা হয়, ঠিক এরকমটি আবার ঘটতে পারে, অর্থাৎ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত ২০ ফুট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভবিষ্যতে। তবে গবেষকরা নিশ্চিত নন যে ঠিক কতদিনে এটি হতে পারে।

দেখা গেছে ৪ মিটার বা ১৩ ফুট সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে ২০০ থেকে ১০০০ বছর লাগে, তাই খুব সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ঐ পরিমাণ ঠিক কতদিনে বাড়বে বা আদৌ বাড়বে কিনা, তবে উচ্চতা বাড়ছে এটা যেহেতু নিশ্চিত, তাই ধরে নিতে হবে ঘটনাটি ঘটে চলেছে।

২০ ফুট উচ্চতা বাড়লেই কিন্তু আমাদের দেশের অনেক এলাকা পানির নিচে চলে যাবে। বিষয় হচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা মাত্র ১ মিটার বাড়লেই সুন্দরবনের ৭০ ভাগ পানির নিচে চলে যাবে এবং উপকূল অঞ্চল প্লাবিত হবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা খুব স্পষ্ট।

তবে এদিক থেকে ঝুঁকিতে থাকা একমাত্র দেশ বাংলাদেশ না হলেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে মাত্র একটি দেশ। এবং উন্নয়নশীল দেশ হওয়াতে বাংলাদেশের ঝুঁকি খুব বেশিই আসলে

মালদ্বীপ, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত

১। মালদ্বীপ, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে বর্তমান গড় উচ্চতা ৫ ফুট মাত্র। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত এ দ্বীপ দেশটি অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি প্রকৃতপক্ষে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি সম্পর্কে বার্তা দিতে মালদ্বীপ ২০০৯ সালে মন্ত্রীসভার একটি মিটিং করেছিল সমুদ্রের তলে।

বাংলাদেশ

২। বাংলাদেশ, অধিকাংশ এলাকার গড় উচ্চতা মাত্র ৩৩ ফুট। উপকূল অঞ্চলের গড় উচ্চতা ২০ ফুট। অর্থাৎ বরফ যতটুকুই গলুক, এদিক থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট ঝুঁকিতে রয়েছে।

jamaika জ্যামাইকা

৩। জ্যামাইকা, বর্তমান উচ্চতা ৬০ফুট। জ্যামাইকা ক্যারিবীয় সাগরে অবিস্থত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। সবুজে আচ্ছাদিত পর্বতমালা, নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত দেশটিকে পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলে পরিণত করেছে।

qatar middle east

৪। বিস্ময়কর হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের কাতার দেশটির অবস্থানও সমুদ্র পৃষ্ঠের বেশ কাছে। দেশটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৯০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। কাতার পারস্য উপসাগরের একটি দেশ। আয়তনে ক্ষুদ্র (মাত্র ১১ বর্গ কিলোমিটার) হলে খুব ধনী একটি রাষ্ট্র।

Netherland below sea level

৫। নেদারল্যান্ডের উচ্চতা ১০০ ফুট, তবে সেখানকার অনেক এলাকা এতটাই নিচু (সমুদ্র পৃষ্ঠের নিচে) যে বাঁধ দিয়ে সেখানে বাসযোগ্য করা হয়েছ। ইউরোপের এ দেশটি ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে অনেক প্রাচীন।

denmark

৬। ডেনমার্কও অনেকটা নেদারল্যান্ডের মত, সেখানে ৫৬৬ ফুট উঁচু সমতল জায়গা যেমন রয়েছে আবার সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৩ ফুট নিচু জায়গাও বাসযোগ্য করা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে ডেনমার্কও প্রাচীন একটি দেশ।

gamibia

৭। গাম্বিয়া আফ্রিকার একটি ছোট দেশ, এটি মাত্র ১১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। পশ্চিম আফ্রিকার কৃষিপ্রধান এক দেশ গাম্বিয়া।

এরপর অবশ্য খুব নিচুতে অবস্থিত কোনো দেশ নেই।

estonia tallin

৮। ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়া ২০০ ফুট উঁচুতে অবিস্থিত। দেশটি বাল্টিক সাগরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। অপরদুটি বাল্টিক রাষ্ট্র হচ্ছে লাটভিয়া ও লিথুনিয়া।

senegal Africa

৯। আফ্রিকার দেশ সেনেগাল ২২৫ ফুট উঁচুতে, এবং সেনেগালের প্রায় পুরো এলাকা একই রকম উঁচ্চতায় অবস্থিত। গাম্বিয়া ও গিনি-বিসাউয়ের মত এটিও পশ্চিম আতলান্তিক মহাসাগরের তীরবর্তী একটি দেশ।

guinea bissau

১০। আফ্রিকার আরেক দেশ গিনিবিশাউ অবস্থিত ২৩০ ফুট উঁচ্চাতায়। গাম্বিয়ার মত এটিও আফ্রিকা মহাদেশের ক্ষুদ্র একটি রাষ্ট্র। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পর্তুগালের নিকট হতে ১৯৭৪ সালে দেশটি স্বাধীন হয়। দেশটির ১৫ লক্ষ মানুষের বেশিরভাগ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে।

ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো

১১। ত্রিনিদান ও টোবাগো অবস্থান করছে ২৭০ ফুট উঁচুুতে। দক্ষিণ ক্যারিবীয় সাগরের এ দেশটির ইতিহান ৭০০০ বছরের পুরনো। ১৫০০ শতাব্দিতে দেশটি স্পেনের উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। এর আগে এটি আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাঝখানে বিভিন্ন হাত বদল হয়ে দেশটি স্বাধীনতা পায় ১৯৬২ সালে।

দেখা যাচ্ছে, মালদ্বীপ বাদে সহসাই কোনোদেশ সমুদ্র পৃষ্ঠের নিচে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এবং মালদ্বীপও যে ডুবে যাবে এমনটি নয়, কারণ, বাঁধ তৈরি করে সমুদ্র পৃষ্ঠের চেয়ে অনেক নিচে বসবাস করার নজির পৃথিবীতে রয়েছে।


ফলোআপনিউজ ডেস্ক