ছোট শিশুদের খেয়াল করেছেন? করেছেন নিশ্চয়ই। যা-ই করবে, তাদের বাহবা দিতে হবে। একদিনের একটি ঘটনা বলি। দিদির বাসায় একজন বেড়াতে এসেছে। সাথে ওনার বাচ্চারাও এসেছে। ছোটজন খুব ছোট, মাত্র আট মাস বয়স, বড় জন চার বছরের।
খুব সহজে চার বছরের শিশুটির সাথে আমার খাতির হয়ে যায় । কাছেই কাগজ কলম পেয়ে আমরা আঁকতে বসলাম। আমি একটি পাখি এঁকে ওকে দেখলাম। আমি আঁকতে জানি না, কিন্তু ওকে দেখানোর মত একটা কিছু তো হয়েছিল নিশ্চয়ই।
ও খুশি হল না, বলে—তুমি পারো নাই, দাও, আমি আঁকি। ‘আমি আঁকি’ বলে ও যা আঁকল, তা যে কী হয়েছিল, না পাখি, না গরু-মহিষ; ওটা আমাকে দেখিয়ে বলে—কেমন হয়েছে বলো তো? কিচ্ছু হয় নাই, বলার সুযোগ কি ছিল? ছিল না। তা যদি বলতাম, তাহলে ও উৎসাহ হারাত, একটার পর একটা এঁকে এঁকে দেখাতো না, ওভাবেই তো ও শিখছিল, নাকি?
আসলে শৈশব মানুষের মধ্যে চিরকালই থাকে। আমরা ভেতরের শিশুটিকে মেরে ফেলি। বাস্তবতায় পোড় খেয়ে মানুষ নিষ্পাপ শিশুটিকে নিজের মাঝে লুকিয়ে ফেলে, কেউ কেউ একেবারে হারিয়ে ফেলে হয়ত। যার মাঝে শৈশব নেই, তার চেয়ে অভাগা আর কেউ নেই।
তো যে কথা বলছিলাম—কাউকে নিরুৎসাহিত করা যাবে না, ‘হয় নাই’ বলা যাবে না। প্রথমে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তারপরে ধীরে ধীরে ভুল শুধরে দিতে হবে।
একজন ব্যর্থ মানুষকে ব্যর্থ বলে আপনি আসলে কী অর্জন করতে চাইলেন? তাকেই বা কী দিতে চাইলেন? উন্নত বিশ্বে অপরাধীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও এখন অত্যন্ত মানবিক। আগের দিনের মত জেলখানা মানে সেখানে কোন নিকৃষ্ট জায়গা নয়, তারা ওটিকে সংশোধনাগারে পরিণত করতে পেরেছে।
একজন স্বীকৃত অপরাধীকেও যখন মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে বলা হচ্ছে, সেখানে ‘না পেরে ওঠা’ একজন মানুষকে আমরা ধুয়ো দিই সবসময়! কী নির্মম!!
প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার করতে হবে। এভাবে নিজেও ভাল থাকা যায়। মানুষকে টেনে তুলতে হবে, টেনে তুলতে না পারলেও কোনমতে ‘তুমি পড়ে আছ’ বলা যাবে না; বরং বলতে হবে—“ভাই, তুমিও পড়ে আছ, আমিও পড়ে আছি, ব্যাপার না, উঠব নিশ্চয়ই। আসলে জীবনে পড়ে থাকা বা খুব জেগে বলে কিছু তো নেই। আমরা তো একটা বৃত্তের মধ্যে ঘুরি আসলে।”