বের হইছিলাম ঈশপের জন্য খেলনা কিনতে। যে দুএকটা দোকান বনশ্রীতে খোলা আছে, তারা দাম চায় উল্টাপাল্টা, অগত্যা গাড়ি না কিনে কিনলাম একখান ম্যাজিক স্লেট।
সেখানেও ঝামেলা, পিছনে স্টিকার লাগানো, তাতে লেখা ১৫০/=, সামনের স্টিকারে লেখা ১৭০/=, বললাম, ভাই, আপনারা পিছনের স্টিকারটা খুলতে ভুলে গিয়েছেন। লজ্জ্বা পাইলো বলে মনে হলো না, এটা ভালো আলামত যে, চোর ডাকাতরা এখন আর লজ্জ্বা পায় না। উল্টে আমি লজ্জ্বিত হইলাম এবং একশো সত্তর টাকা দিয়ে ম্যাজিক স্লেটটা কিনলাম।
সেটি বিষয় না, বিষয় হইল, দোকান থেকে বেরোনোর সময় দেখি একজন লোক মাথা থেকে একটা গামলা মতো নামালো। বলে, স্যার, মাছগুলো কেনেন, অনেকক্ষণ ধরে ঘুরতাছি এই শেষ পাঁচটা মাছ বিক্রি করতে পারতাছি না।
লোকটা বয়স্ক, দুপুরের সময়ে বাইরে লোকজন নেই বললেই চলে, ফলে মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে না। আমি দুটো কিনতে চাইলাম। বলে, পাঁচটা একবারে কিনতে হবে। দাম- বাইশশো টাকা, একদাম। আমার তখন দরদ দেখানোর টাইম নাই, করোনার ভয় করতেছে।
অনেকদিন ইলিশ মাছ কিনি না, তাই দামও জানি না। কিনব না বলে বললাম, ৮০০ টাকায় দিবেন? বলে হাঁটা দিলাম। কিছুদূর চলে আসছি, দেখি লোকটা পিছন পিছন আসছে, কয়, স্যার আর দুইশো টাকা দেন। এবার আমার সন্দেহ হলো, মাছ পঁচা নাকি!
বললাম, নামান, টিপেটুপে দেখলাম, কিছু বুঝলাম না, নষ্ট মনে হলে না। বললাম, ঐ আটশো টাকাই দিব, দিলে দেন, না দিলে জান। বলে, স্যার কেনা দামটাও তো হইতেছে না।
জিজ্ঞেস করলাম, কেনা কতয়? বলে, পিচ দেড়শো টাকা। মুখ ফসকে বলে ফেলছে, পিচ দুইশো টাকা বললে ঠিক ছিল। বুঝলাম, আসলেই তার বেঁচা দরকার, এজন্য সত্যি কথা বলছে।
জিজ্ঞেস করলাম, কিনছেন পাঁচটা মাছ ৭৫০ টাকা দিয়ে, তাহলে ২২০০ টাকা দাম চাইলেন ক্যান? বলে, স্যার দেড়গুণ না বেঁচলে পোশায় না। দাম যা চাই সবাই তো তার অর্ধেক কয়।
যাইহোক, সে হিসেবে আমি আর গেলাম না। আবার হাঁটা দিলাম। এবারও সে পিছন পিছন, এসে বলে, স্যার, মাছ নিলেন না? বললাম, ৮০০ টাকায় দিলে দেন, না হলে জ্বালাতন কইরেন না। মুখ কালো করে পলিথিনে ভরে দিয়ে দিল। আমার মানি ব্যাগে আছে পাঁচশো টাকা, এবার কী হবে?
মুখ ফসকে বলে ফেললাম, আপনার বিকাশ আছে? সেও বেশ স্মার্ট। বলে, দোকানে চলেন। বুঝলাম যে, আজকে কোনোভাবে আমার নিস্তার নাই। আমার কাচুমাচু ভাব দেখে বলে, স্যার, আপনার কাছে কি টাকা নেই?
এবার আমার ‘মানসম্মানে’ লাগছে, ধমক দিয়ে বললাম, টাকা থাকবে না ক্যান? টাকা আছে। মোবাইল থেকে বের করতে হবে। এবার সে হাঁটা ধরছে বিকাশের দোকানের দিকে। ‘অসহায় স্যার’ পিছন পিছন হাঁটতাছে।
বিকাশের দোকানের একটু আগে তাকে দাঁড় করালাম, বললাম, আপনি এখানে দাঁড়ান। জোরের সাথে বললাম, যাতে সে পাল্টা কোনো প্রশ্ন না করে।
বিকাশ একাউন্ট চেক করে দেখি ৪৬০ টাকা আছে। দোকানে গিয়ে বললাম, ক্যাশ আউট করতে হবে, বলে, ‘কত?’ সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ঘটাঘট বিকাশ অ্যাপ থেকে ৪০০ টাকা আউট করে দিলাম।
লোকটা ব্লান্স দেখে একটু হতাশ হয়ে শুধু আমার দিকে একবার তাকালো। পাঁচশো টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিল। এবার একশো টাকা ফেরৎ দেব কীভাবে? চারশো টাকা খুচরো চাওয়ার তো আর মুখ নেই।
হাত দিয়ে ইশারা করে মাছআলারে ডাকলাম, দুই খান পাঁচশো টাকার নোট ধরায়ে দিয়ে দুইশো টাকা ফেরৎ চাইলাম। সে নানান ভঙ্গি করে আমাকে ফেরৎ দেয় একশো টাকা। বলে, স্যার, রোজ তো এই অবস্থায় বের হতে পারব না, একশো টাকা আপনার কাছ থেকে চেয়ে নিলাম। বাকী একশো টাকা বিকাশের দোকানে দিয়ে জোর পায়ে বাসায় চলে আসলাম।
বেশি গতিতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে দেখি দম বন্ধ বন্ধ লাগতেছে। খানিকক্ষণ দাঁড়ায়ে থেকে আবার উঠলাম। ম্যাজিক স্লেটটা ঈশপের হাতে দিয়ে মাছ পাঁচটা সিঙ্কের মধ্যে রাখলাম।
ঈশপের মা’র সাথে কথা বন্ধ, তাই কিছু আর বললাম না। কিছুক্ষণ পর উঁকি দিয়ে দেখি সিং মাছ রান্না হচ্ছে। ইলিশ মাছগুলো চালান হয়ে গেছে ফ্রিজে।
দুঃখ ভোলার জন্য ঈশপকে লেখাতে গেলাম। গিয়ে দেখি, স্লেট ভাঙা শেষ। বিভিন্ন অংশ জোড়লাগানোর চেষ্টা করতেছে …