পাঠকের প্রশ্ন: অভিজিৎ রায় কি নাস্তিক ছিলেন?

অভিজিৎ রায়

প্রশ্নটি করেছেন সাভার থেকে দিদারুল ইসলাম।

Avijit Roy
অভিজিৎ রায়।

আসলে এ ধরনের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হয় না। প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে নাস্তিকতা কী এবং আস্তিকতাই বা কী। একজন ব্যক্তিরূপ (যাকে আমরা ব্যক্তি হিসেবে বিচার না করলেও ব্যবহারীক দৃষ্টিকোণ থেকে তা আমিত্বেরই প্রতিরূপ হয়ে ওঠে সমাজে) মহা শক্তিশালী কেউ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন, এটাই তো আমাদের প্রচলিত আস্তিকতা, নাকি?

যদিও ঈশ্বরের ব্যক্তিসত্তা নেই বলে বলা হয়, কিন্তু ঈশ্বরের যে প্রকৃতি আমাদের সমাজে দেখি তা আসলে মহা পরাক্রমশালী একজন ব্যক্তিই নয় কি? সকল প্রাণের মিলিত এক মহান সত্তা হিসেবে কি আমরা ঈশ্বরকে চিন্তা করি? করি না। আমাদের ঈশ্বর সামষ্টিক নয়, সাম্প্রদায়িক; প্রাকৃতিক নয়, খুব বেশি লৌকিক।

এই লৌকিক ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবে না বলে যখন কেউ ঘোষণা দেয় তাকে আমরা বলি নাস্তিক। আচ্ছা, প্রকৃতি যে বিশাল এবং মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সীমার বহুদূরের এক শক্তিশালী অজানা সত্তা, তা কি অভিজিৎ রায়েরা অস্বীকার করেন?

তাঁরা তা অস্বীকার করেন না, তাঁরা যথসম্ভব জানতে চান অজানাকে, জানাতে চান, দূর করতে চান লৌকিক অন্ধত্ব, বিজ্ঞানমুখী-মানবিক জীবনযাপন করতে চান, ভালোবাসতে চান। এইসব গুণাবলী দ্বারা পরিচালিত হয়ে অভিজিৎ রায় ঘোষণা করেছিলেন “আমি নাস্তিক।” অর্থাৎ প্রাণ এবং জড় প্রকৃতির মিলিত সত্তাই অভিজ্ৎি রায়ের ঈশ্বর, ভালোবাসার শক্তিই অভিজিৎ রায়ের ঈশ্বর।

এবং তিনি সামাজিক এবং কারাবন্দী অতিকায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন, যে ঈশ্বর মানুষকে দাস বানিয়ে রেখেছে, অন্ধ বানিয়ে রেখেছে, যে ঈশ্বর আসলে ঈশ্বর নয়, যে ঈশ্বর সাম্প্রদায়িক নেতৃত্বের অবলম্বন শুধু, সাধারণ মানুষ তার গোলাম। সেই ঈশ্বরকে অভিজিৎ রায় খারিজ করেছিলেন। এজন্যই সাম্প্রদায়িক নেতৃত্ব তাকে হত্যা করেছে, নাস্তিকতা সেখানে একটি অজুহাত মাত্র।


প্রশ্নটির উত্তর তৈরি করেছেন শেকস্ রাসেল, লন্ডন যুক্তরাজ্য থেকে।