আমি এখানে ‘আজমদের’ বলেছি সচেতনভাবে। ওনারা একটি চক্র— অবশেষে তারা এ দায়িত্বও নিয়েছেন যে, রবীন্দ্রনাথকেও যেকোনো মূল্যে ছোট করতে হবে, এবং বাংলাদেশী বাঙালিদের মন থেকে রবীন্দ্রনাথকে তাড়াতে হবে। অর্থাৎ, মোহাম্মদ আজমরা সাগর সেঁচতে বসেছেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অশিক্ষিত ভোঁতা কলম নিয়ে।

ফলোআপ নিউজ প্রথমত অধ্যাপক আজমের অজ্ঞতাপ্রসূত এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে প্রতীয়মান এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করছে। এবং একইসাথে ফলোআপ নিউজ রবীন্দ্র রচনাবলী, রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম থেকে উদাহরণ টেনে স্বার্থান্বেষী এ চক্রকে বুঝাতে চাইছে— রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মানবতাবাদী, গণমুখী এবং বিজ্ঞানমনস্ক কালোত্তীর্ণ এমন একজন লেখক, যিনি মোহাম্মদ আজমদের মুখস্থবিদ্যার অনেক উর্ধের মানুষ।
রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও সাহিত্য মানুষকে এক গভীর আধ্যাত্মিক ও মানবিক আশ্রয় দেয়, যেখানে মানুষ নিজের আত্মিক সত্তাকে খুঁজে পায় এবং জাগতিক দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করে, বিশেষত যখন দেশপ্রেম বা অন্য কোনো জাগতিক আশ্রয় ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ, রবীন্দ্র সাহিত্য হচ্ছে ব্যক্তির শেষ আশ্রয়। এরপর রবীন্দ্রনাথকে আর বর্ণনা করার প্রয়োজন পড়ে না। তদুপরি সুক্ষ্মতার ছদ্মবেশে সমাজে বিষ ছড়ানো স্থুল এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অশিক্ষিত অধ্যাপক আজমদের বুঝাতে ফলোআপ নিউজ-এর এই লেখাটি।
প্রথমেই ফলোআপ নিউজ-এর হয়ে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান তুলে ধরছি। বাংলাদেশে এখন জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা করে টিকে থাকা যেমন কঠিন, তখনো ব্রিটিশ রাজের বিরোধিতা করে সমাজে অগ্রগতি ছিলো অসম্ভব। টিকে থাকাই কঠিন ছিলো। তবুও সে ঝুঁকি রবীন্দ্রনাথ বারে বারে নিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান
১. স্বদেশী আন্দোলন ও ব্রিটিশ বিরোধিতা
-
“ঘরে-বাইরে” (১৯১৬) উপন্যাসে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি সমাজে গড়ে ওঠা স্বদেশী আন্দোলনের দ্বন্দ্ব, উচ্ছ্বাস ও ভ্রান্তি ফুটে উঠেছে। নিকিলেশ, বিমলা ও সন্দীপের চরিত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন কীভাবে ইংরেজের আধিপত্যের বিরুদ্ধে দেশীয় আন্দোলন সৃষ্টি হলেও অনেক সময় তা হিংসা ও ব্যক্তিস্বার্থে কলুষিত হতে পারে।
-
এখানে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অসন্তোষ যেমন আছে, তেমনি আন্দোলনকে সঠিক পথে না চালালে জাতির ক্ষতির আশঙ্কাও তিনি প্রকাশ করেছেন।
২. রাজনৈতিক প্রবন্ধ ও বক্তৃতা
-
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ “বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন”-এ সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে রচনা করেন বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” (যা পরে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হয়)।
-
তার প্রবন্ধ “স্বদেশী সমাজ”-এ তিনি ব্রিটিশ প্রশাসনিক দমননীতির সমালোচনা করে বলেছেন, আমাদের নিজেদের সমাজব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় বিদেশী শাসন আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করছে।
-
“জাতীয়তাবাদ” (Nationalism) নামক বক্তৃতায় তিনি ইংরেজ জাতির আধিপত্যবাদী নীতিকে আক্রমণ করেছেন এবং প্রকৃত মানবিক জাতীয়তার ধারণা দিয়েছেন।
৩. ব্রিটিশ সন্মান বর্জন
-
১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। তার সেই বিখ্যাত চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন—
“সমস্ত ভারতবাসী আজ অপমানিত; এই অপমানে আমি আর গৌরবের অলঙ্কার ধারণ করতে পারি না।”
এটি ছিল তার ব্রিটিশবিরোধী অবস্থানের সবচেয়ে স্পষ্ট রাজনৈতিক প্রকাশ।
৪. ছোটগল্পে উপনিবেশবিরোধী সুর
♦ ছোটগল্প “ডাকঘর”-এ প্রতীকের ভেতর দিয়ে দমিয়ে রাখা, বন্দী সমাজ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, যা অনেক সমালোচক ব্রিটিশ উপনিবেশিক দমননীতির প্রতিবাদ হিসেবেই দেখেন।
-
আবার “সমাপ্তি” গল্পে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার অন্ধ অনুকরণ ও ব্রিটিশ ধাঁচের জীবনধারার প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
৫. কাব্যে ব্রিটিশবিরোধী বক্তব্য
-
তার দেশাত্মবোধক কবিতা যেমন “বন্দে মাতরম্”-এর সমর্থনে লেখা কবিতা বা “স্বদেশি যুগের গানসমূহ”-এ সরাসরি ব্রিটিশবিরোধী চেতনা ফুটে উঠেছে।
-
“জনগণমন” কবিতায় তিনি ভারতবর্ষের জনগণ ও তাদের অধিকারকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন, যদিও তা পরে নানা ব্যাখ্যার জন্ম দেয়।
রবীন্দ্রসংগীতেও রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধিতা। তা প্রকাশ পেয়েছে স্বদেশপ্রেম, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় ঐক্যের জাগরণ হিসেবে।

রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে মানবতাবাদ
“আমরা সবাই রাজা” কবিতায় রবীন্দ্রনাথের মূল বক্তব্য হলো মানুষের অন্তর্নিহিত মর্যাদা ও স্বাধীনতার চেতনাকে উদযাপন করা, এবং দেখানো যে ক্ষমতা বা সমাজের পদপদবী মানুষকে মানুষের চেয়ে বড় করে না। এর চেয়ে বড় অসাম্যের সুর আর কী হতে পারে?
আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে—
নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে? ।।
‘মানুষ’ কবিতায়ও একই সুর— “আমরা সবাই রাজা” কবিতায় যেমন বলা হয়েছে, “প্রত্যেক মানুষের অন্তরে রাজা হয়ে থাকার অধিকার আছে,” তেমনি “মানুষ” কবিতায় বলা হয়েছে, “প্রত্যেক মানুষ যদি নিজের মানবিক গুণ বিকাশ করে, তাহলে সত্যিকারের শক্তি ও মর্যাদা তারই।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্ত্রীর পত্র‘ ছোটগল্পটিতে তৎকালীন সমাজের নারী-পুরুষের বৈষম্য, নারীর পরাধীনতা এবং সমাজের গোঁড়ামির নেতিবাচক দিকগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এই গল্পে, মৃণাল নামের এক নারী তার স্বামীর প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে একটি চিঠি লিখে বাড়ি থেকে চলে যায়, যা তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকারের সংকটকে তুলে ধরে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী কাব্য হলো “গীতাঞ্জলি”। এই কাব্যে তিনি মানুষের সেবা, প্রেম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলেছেন এবং আধ্যাত্মিকতার সাথে মানবতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
মুসলমানদের জন্য রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্র সাহিত্যে মুসলিম চরিত্রঃ
১. কাবুলিওয়ালা (গল্প)
-
এখানে আফগান মুসলমান ফেরিওয়ালা রেহমতের চরিত্রটি মানবিকতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
-
ছোট্ট মেয়ে মিনি’র সঙ্গে তার যে আন্তরিক সম্পর্ক, তা পিতৃত্ববোধ ও মমতার এক অনন্য প্রতিচ্ছবি।
-
ধর্ম, জাতি, ভাষা সব ভেদাভেদ ভুলে গল্পটি দেখায়— মানুষের আসল পরিচয় তার মানবিকতা।
২. মুসলমানীর গল্প (গল্প)
-
মুসলিম সমাজের এক নারীর জীবনকথা রবীন্দ্রনাথ সহানুভূতির সঙ্গে বর্ণনা করেছেন।
-
গল্পে সমাজের অবহেলিত এক মুসলিম নারীর কষ্ট, স্বপ্ন ও বেদনা ফুটে উঠেছে।
-
এর মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান—সবাই সমানভাবে মানবিক মর্যাদার দাবিদার।
৩. গোরা (উপন্যাস)
-
উপন্যাসে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব ও ভেদাভেদ গভীরভাবে ফুটে উঠেছে।
-
শেষ পর্যন্ত গোরা উপলব্ধি করে— ধর্ম নয়, মানুষই আসল সত্য।
এ উপন্যাসে মুসলিম চরিত্রদেরও সমানভাবে সমাজের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
৪. অন্যান্য প্রভাব
-
রবীন্দ্রসাহিত্যে মুসলিম সংস্কৃতির ছোঁয়া—ফারসি শব্দ, ইসলামী সংগীতের সুর, মুসলিম গ্রামীণ জীবনের চিত্র—এসবই তার উদার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
-
তার গান ও কবিতায় মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা লক্ষ্য করা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু সাহিত্যেই মুসলমানদের মানবিক চিত্র অঙ্কন করেননি, তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও মুসলমান সমাজের জন্য বাস্তব কিছু কাজ করেছিলেন।
১. শিক্ষার প্রসারঃ
-
রবীন্দ্রনাথ তার জমিদারি এলাকায় (শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরে) কৃষক ও প্রজাদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে হিন্দু–মুসলমান সবাই সমানভাবে পড়াশোনার সুযোগ পেত।
-
তিনি মুসলিম কৃষকদের সন্তানদের শিক্ষায় উৎসাহ দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আশ্রম ও পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম অধ্যাপক, ছাত্র এবং শিল্পীদের স্থান দিয়েছিলেন।
২. সামাজিক সংহতির জন্য কাজঃ
-
তিনি জমিদারি পরিচালনায় মুসলমান প্রজাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতেন, তাদের দুর্দশা জানতেন এবং সাহায্য করতেন।
-
রবীন্দ্রনাথ মুসলিম প্রজাদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে বিশেষ উদ্যোগ নেন। জমিদার হয়েও তিনি মুসলমান প্রজাদের সঙ্গে সমান ব্যবহার করতেন, যা তৎকালীন সময়ে বিরল ছিলো।
৩. মুসলিম শিল্পী ও পণ্ডিতদের সম্মানঃ
-
রবীন্দ্রনাথ মুসলিম কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সম্মান করতেন। তিনি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেছিলেন এবং তার কবিতায় হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের বার্তাকে সমর্থন করেছিলেন।
-
বিশ্বভারতীতে তিনি মুসলিম শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, যেমন— সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো ব্যক্তিত্ব পরে বিশ্বভারতীতে শিক্ষকতা করেন।
৪. গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রমঃ
-
পতিসর ও অন্যান্য অঞ্চলে তিনি কৃষকদের কল্যাণে সমবায় আন্দোলন শুরু করেন। এতে মুসলমান কৃষকরাও ব্যাপকভাবে উপকৃত হন।
-
মুসলমানদের জীবিকা উন্নয়নের জন্য কৃষি, খাল খনন, রাস্তা তৈরি ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজ করিয়েছিলেন।
৫. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রচারঃ
-
রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মকে বিভেদ নয়, মিলনের উপাদান হিসেবে দেখেছেন। মুসলমানদের সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবে তিনি অংশ নিয়েছেন এবং নিজেও মুসলিম বন্ধুদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
-
তিনি বহু লেখায় মুসলমান চরিত্রকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রভাবনা
১. রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক
- রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন রাষ্ট্রের মূল কাজ হলো মানুষের মানসিক ও নৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
- তিনি রাষ্ট্রকে মানুষের সৃজনশীলতা ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা না হয়ে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছেন।
- রাষ্ট্রের কার্যক্রমকে শুধু আইন-কানুন ও শাসনব্যবস্থা হিসেবে নয়, বরং মানবতার সেবা ও নৈতিক আদর্শের রক্ষক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
২. শাসন ও ন্যায়
- তিনি যেকোনো ধরনের অধিকৃত ক্ষমতা বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে সমালোচনা করেছেন।
- রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা তখনই স্থায়ী ও কার্যকর হবে, যখন তা ন্যায়পরায়ণ, সহনশীল এবং জনমুখী হবে।
- ক্ষমতা ও শাসনের ক্ষেত্রে তিনি সততা, দায়িত্ব ও নৈতিকতা জোর দিয়েছেন।
৩. শিক্ষার গুরুত্ব
- রাষ্ট্র ও জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষাকে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে করতেন।
- শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিকভাবে বিকশিত হয়, যা শক্তিশালী ও মানবিক রাষ্ট্রের ভিত্তি গঠন করে।
- তার মতে, শুধুমাত্র আইন-কানুনের মাধ্যমে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়; মননশীলতা ও নৈতিক চেতনাই রাষ্ট্রকে সত্যিকারের শক্তি দেয়।
৪. স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়
- রবীন্দ্রনাথ রাষ্ট্রের লক্ষ্যকে মানুষের স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রসার হিসেবে দেখেছেন।
- তিনি বিশ্বাস করতেন, জনগণ সচেতন ও নৈতিকভাবে উদার হলে রাষ্ট্র অচিরেই শক্তিশালী ও স্থায়ী হবে।
- রাষ্ট্রগঠন শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম নয়, বরং মানবতার বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণের প্রক্রিয়া।
৫. রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা
- রবীন্দ্রনাথ স্বীকার করতেন যে রাষ্ট্র কখনোই সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়; এটি মানুষের ত্রুটি ও স্বার্থপরতার প্রভাবেও পরিচালিত হয়।
- তাই তিনি রাষ্ট্রের পরিবর্তনের জন্য সৃজনশীল নাগরিক ও নৈতিক সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্ব দেন।
পরিশেষে—
শেষ কথা হিসেবে বলবো— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সব সময় ধর্মের চেয়ে মানবতাকে বেশি স্থান দিয়েছেন। তিনি ঈশ্বরকে মানুষের মধ্যে ও মানুষের সেবার মধ্যেই দেখেছেন। ধর্মীয় গোঁড়ামি, ভণ্ডামি ও সংকীর্ণতাকে নিন্দা করে মানবতাবাদ, সর্বজনীন প্রেম, ও ভ্রাতৃত্বের ধারণাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন, প্রকৃত ধর্ম হলো মানবতা, এবং এজন্য মানুষকে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও ভালোবাসাপূর্ণ হতে হবে।
