রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি বাসা থেকে স্বর্ণময়ী বিশ্বাস নামে এক নারী গণমাধ্যমকর্মীর ঝুলন্ত লাশ গত শনিবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা স্ট্রিম’-এর গ্রাফিক ডিজাইনার ছিলেন।
স্বর্ণময়ী বিশ্বাস (২৮) নামের ওই তরুণী সম্প্রতি তার সহকর্মী আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। আলতাফ শাহনেওয়াজ ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা বিভাগের প্রধান।
প্রথম আলোর প্রডাক্ট এই আলতাফ শাহনেওয়াজ সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছেঃ
তিনি একজন কবি। দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক সাহিত্য সম্পাদক। বর্তমানে ঢাকা স্ট্রিম/ বাংলা স্ট্রিম নামক পত্রিকার অন্যতম মালিক ও শীর্ষ কর্তা।
আলতাফ শাহনেওয়াজ।
আলতাফ শাহনেওয়াজ বা নির্লিপ্ত নয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন প্রতিবন্ধী কোটায়। প্রয়াত অধ্যাপক ডক্টর সেলিম আল দীনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় পড়ালেখা শেষ করেন।
রেজাল্ট ভালো ছিলো। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিখিত একটি রেওয়াজ হলো—কোটায় ভর্তি হওয়া কোনো ছাত্রের রেজাল্ট যত ভালোই হোক তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। ফলে নয়ন শিক্ষক হতে পারেননি।
শিক্ষক হতে না পেরে তার গুরু সেলিম আল দীনের কুৎসা রটানো শুরু করেন। গুরুমারা শিষ্য হয়ে যান। জাহাঙ্গীরনগরের অনেকেই তাকে নিমকহারাম বলে।
এক সময় সাহিত্য সাংবাদিকতায় যোগ দেন। আনুগত্যের চর্চায় অভ্যস্ত, কবি হলেও, মননে নিজ ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও বিপরীতে ঘৃণা— প্রথম আলোর অলিখিত সম্পাদকীয় নীতিমালার সাথে সেয়ানে সেয়ানে মিলে যাওয়ায় প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক হয়ে যান। এরপর বিভিন্ন লোকের সান্নিধ্যে যেতে থাকেন এবং অবারিত সুযোগ কাজে লাগান।
কবিতা লেখেন, এই সুবাধে সাবেক প্রভাবশালী আমলা ও উপদেষ্টা, বর্তমানে কারাবন্দি কবি কামাল চৌধুরীর স্নেহধন্য হয়ে উঠেন। কামাল চৌধুরীর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে লালমাটিয়ায় সরকারি ফ্ল্যাট লিজ নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এখানেও প্রতিবন্ধী কোটা কার্যকর হয় বলে জানা যায়। কামাল চৌধুরী কারাগারে কিন্তু চাটুকার নির্লিপ্ত নয়ন এখনো মাদাসক্ত।
প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক থাকাকালীন ধানমন্ডিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন। কিন্তু বসবাস করেন লালমাটিয়ায় লিজ নেওয়া ফ্ল্যাটে।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পক্ষে তরুণ কবি সাহিত্যিকদের মাঠে নামাতে নয়নের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তার হাত দিয়ে অঢেল টাকা বিলিবণ্টন হয়েছে। আন্দোলনে এটাই ছিলো নয়নের প্রধান দায়িত্ব, যা তিনি বিগত সরকারের প্রতি ক্ষোভ না থাকলেও বিশ্বাস থেকে পালন করেছেন।
নয়ন প্রথম আলো ছেড়ে দিয়েছেন। ঢাকা স্ট্রিম/বাংলা স্ট্রিম নামে নতুন পত্রিকার শেয়ারহোল্ডার বা অন্যতম মালিক হয়েছেন। এই পত্রিকার সিংহভাগ শেয়ারের মালিক নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি।
নয়নের স্ত্রী ফাতেমা আবেদীন নাজলা, অফিস-বাসায় খাবার সরবরাহের ব্যবসা করতেন। নাজলা’স কিচেন নামে।
৫ আগস্টের পরে বাংলা একাডেমির ক্যান্টিন বরাদ্দ নেন। কোনোরকম টেন্ডার, কোটেশন বা জামানত ছাড়াই এই ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন নাজলা।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। পর্যটন করপোরেশন সরকারি সকল প্রোগ্রামে হালকা বা ভারী সকল খাবার সরবরাহ করে। এটাই নিয়ম। পর্যটন করপোরেশন এই খাবারগুলো ক্রয় করে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে, কোটেশন ও বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নির্ধারিত তালিকাভুক্ত ক্যাটারিং সার্ভিসের কাছ থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে এই খাবারগুলো এককভাবে সরবরাহ করে আসছে নাজলা’স কিচেন। নাজলার বোনের নামে এই অর্ডার ইস্যু হয়।
ধানমন্ডি ৬/এ নম্বর রোডে বিশাল এক রেস্টুরেন্ট চালু করেছে নাজলা। যার মাসিক খরচ প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে— প্রথম আলো মার্কা আলতাফ শাহনেওয়াজরা যে জীবন এবং রাজনীতির চর্চা করে সাহিত্য সেখানে না নান্দনিকতা, না শিল্প, না বিদ্রোহ; ওদের সাহিত্য মানে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিপণন। প্রথম আলো তো আলতাফ শাহনেওয়াজদের তাইই শেখায়।