বাংলাদেশের বাম রাজনীতির সবচে’ বড় সংকট হচ্ছে জনসমর্থনের জন্য এখনো তাদের বিএনপি-জামাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। গণজাগরণ মঞ্চও শেষ পর্যন্ত সেই ভুল পথে হেঁটেছে। অনেকের মতে রসদটা যেহেতু ঐখান থেকে আসে, তাই কিছু করার থাকে না। তাহলে এই বামপন্থা শেষ পর্যন্ত আসলে কার পালে হাওয়া দেয়?
বাংলাদেশের রাজনীতির এখন সমাধান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ঠেকানো, এবং তার জন্য অধিকতর ভালো আওয়ামী লীগ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সে পথে গণজাগরণ মঞ্চ হাঁটেনি, তাতে কিন্তু দুর্বত্তদের লাভই হয়েছে। সরকার বিরোধী হওয়ার কতটুকু ক্ষমতাইবা গণজাগরণ মঞ্চের আছে, যেহেতু তারা জনগণের একটা অংশের সমর্থনপুষ্ঠ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য লড়াই করেছে। জামাত তো নয়ই, জামাতের মডারেট অংশ বা বিএনপির কট্টর অংশও কি গণজাগরণ মঞ্চকে কখনো আপন ভাববে, তাতে যতই ইমরান এইচ সরকার শফিক রেহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করুক না কেন?
এই গেফতারের প্রতিবাদ গণজাগরণ মঞ্চের কাছ থেকে জনগন আশা করেনি। এমনকি যারা বিএনপির সমর্থক তারা অনেকেও না। থানার যে দালাল কয়দিন আগে জনসমক্ষে এক মহিলাকে পিটিয়ে আহত করলো সেখানে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিবাদ করার কথা। আসলে এরকম আলাদা আলাদাভাবে ব্যক্তি মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে, তাতে কিছুটা কাজ হয়, কিন্তু বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না।
গণজাগরণ মঞ্চের বৃহত্তর রাজনৈতিক লক্ষ্য থাকার কথা ছিলো। সে লক্ষ্য কখনই বিদ্যমান বাম দলগুলোর সাথে অভিন্ন ছিলো না। একটু বিশ্লেষণ এবং খেয়াল করলেই বোঝা যায়, বর্তমান বাম দলগুলো সাইড লাইনে থাকতে এবং মাঝে মাঝে কিছু ইস্যুতে আন্দোলন করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে পছন্দ করে, এর বাইরে বিশেষ কোনো লক্ষ্য তাদের নেই বলেই মনে হয়।
অলিগার্কির সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো আমাদের বাম রাজনীতি, কতিপয় মানুষকে নেতা বানিয়ে রাখার জন্য মাঠপর্যায়ে খেটে মরে তরুণদের একটা অংশ। তাদেরকে এবং বিভিন্নভাবে কাজ করে চলা স্বতন্ত্র মানুষগুলোকে একত্রিত করে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ছিলো গণজাগরণ মঞ্চের, কিন্তু মঞ্চ সেই পথে না হেঁটে বামের নেতৃত্ব অংশের পরামর্শ মেনে চলছে বলেই মনে হয়। তাতে আসলে কী হয়েছে, বাংলাদেশ নতুন একটি বামদল পেয়েছে, যেটি নতুন এবং পূর্বেরগুলোর তুলনায় খর্বকায়। এই গণজাগরণ মঞ্চ জাতির পাশে দাঁড়াবে তাহলে কি করে, যেখানে সিপিবি-বাসদ-জাসদরা পারছে না, একত্রিত হয়ে তারা পারতে চাচ্ছেও না?