ছাত্রলীগ হয়েছে এখন বলির পাঠা। তারা দোষ করে, কিন্তু দোষ ঢাকতে পারে না। ফলে দোষের ভাগীদার শুধু তারাই। অথচ রাজনীতির দুধমধু বেশি পান করে আওয়ামী লীগ তথা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ব্যাংক লীগ, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী লীগ, পুস্তক ব্যবসায়ী লীগ, শ্রমিক লীগ ইত্যাদি আরো যারা লীগ। ছাত্রলীগে থাকে তরুণরা, তারা ভাবে চলে। সন্ত্রাসী হয় কতিপয়, তারা দাপিয়ে বেড়ায়, তারা ব্যবহৃত হয়। এই ছাত্রলীগের উপর রাজনৈতিক দায়িত্বও কম নয়। শিবির তাড়াতে হবে, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিছিল করতে হবে, এসব করতে হয় তাদের উপরের নির্দেশনায়। সাধারণ ছাত্রদের জিম্মি করে নীতিহীন রাজনীতির মিছিলে ভেড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারপাশ থেকে চাঁদা নিয়ে ছেলেপুলে পোষার টাকা ম্যানেজ করার ঝুঁকিও কম নয়। এসব তাদের করতে হয়, এসব করেই রাজনীতিতে টিকে থাকতে হয়। ছাত্রলীগ করে রাজনীতির শীর্ষপদে যাওয়ার হার এখন খুবই কম, ঝড়ে পড়ে বেশিরভাগ, চাকরি নিয়ে চলে যায় কিছু, কিছু ক্যাডার হয়, কিছু ব্যবসাপাতি করে।
রাজনীতি কলুষিত বলে ছাত্রলীগ কলুষিত, বিএনপি-আওয়ামী লীগ কলুষিত বলেই ছাত্রদল-ছাত্রলীগ কলুষিত। সরকার বিপাকে পড়লে গালি খায় ছাত্রসংগঠন, কারণ, এদের গালি দেওয়া সহজ, ছেলেপুলেদের একটু গালাগলি করাই যায়! বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিপাকে আছে। অন্তঃকোন্দলই এখন তাদের প্রধান সমস্যা। অনুপ্রবেশকারীরা তো আছেই, তবে অনুপ্রবেশকারীর প্রয়োজন হয় না, প্রবেশকারীরাই ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কোন্দল বাধিয়ে খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে সরকার ফাঁপড়ে পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে জনগণ সমালোচনামুখর হয়েছে। সামাজিক গণমাধ্যমে সরকারের সমালোচনায় জনগণ এখন সরব। হোক না হোক গ্রেফতার করায় জনগণ খেপেছে। সর্বশেষ সাংবাদিক প্রবীর শিকদার কে গ্রেফতার করায় সরকার আরো বিপাকে পড়েছে। এরসাথে যুক্ত রয়েছে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের মত নৃশংস কিছু বিষয়, সেখানেও সরকারের প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়ে দিয়েছে কেউ কেউ। এমতাবস্থায় সরকার তার ইমেজ রক্ষায় ক্রসফায়ারের মত সহজ পথ বেছে নিয়েছে। গত দুই দিনে ছাত্রলীগের তিনজকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে মাগুরায় মা এবং শিশুগুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার অভিযুক্ত আসামী আজিবর শেখ। মোবাইল চুরির অভিযোগে হাজারীবাগে শিশু রাজা হত্যায় জড়িত অাসামী আরজু এবং শোক দিবসের দিন কুষ্টিয়ায় মিছিলে গুলি এবং ছুরিবিদ্ধ হয়ে সবুজ মারা যাওয়ার ঘটনার অনত্যম অাসামী জাকির হোসেন। এই তিনটি ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনার সাথে রাজনীতির যোগসূত্র নেই। বাকী দুটি ঘটনাই আওয়ামীলীগের স্থানীয় রাজনীতির অন্তঃকোন্দলের ফলাফল। নিঃসন্দেহে এসব কোন্দলের সাথে জড়িত থাকে স্থানীয় এবং অস্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাছাড়া কুষ্টিয়ার ঘটনায় বন্দুক হাতে মিছিলে যাকে দেখা গিয়েছে সে ছিল এক সময় পুলিশের এএসআই। মাদক মামলায় সে বরখাস্ত হয়েছে, বাইরে এসে আবার অপকর্ম শুরু করেছে, বিচারে দৃষ্টান্তমূল সাজা হওয়া উচিৎ তার। অভিযোগ আছে- ক্রস ফায়ারের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে যাদের মাথার উপর ছাতা নেই তাদেরকে। মাগুরায় ঘটনায় আজিবরকে না পারলে সরকারের প্রভাবশালী কেউ ফেঁসে যেত পারত বলে মত দিয়েছে ছাত্রলীগেরই কয়েকজন।
যাদের ক্রস ফায়ারে দেওয়া হয়েছে তারা হয়ত সন্ত্রাসী, কিন্তু সেটি প্রমাণ হওয়ার আগে কেন রাষ্ট্র তাদের মেরে ফেলবে? এরা তো খুনের মামলার ফেরারি আসামিও ছিল না। মামলার তদন্ত হওয়ার আগেই তাদের ক্রস ফায়ারে দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের ভাবমুর্তি পুনরুদ্ধার হবে, নাকি দুর্বলতাই ফুঁটে উঠছে শুধু? নিন্দ জানাই রাষ্ট্রীয় এ হত্যাকাণ্ডের।