আজ শুভ জন্মাষ্টমী। পৌরাণিকমতে এই তিথিতে অত্যাচারী রাজা মাতুল কংসের কারাগারে বন্দী দৈবকীর গর্ভ হতে আবির্ভাব ঘটে মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের। এ বিষয়ে ব্যাপক, বিস্তৃত পৌরাণিক, আধ্যাত্মিক, মহাকাব্যিক ব্যাখ্যা রয়েছে। অত্যাচারী কংসের হাত হতে শ্রীকৃষ্ণকে বাঁচানোর জন্য জন্মের পরেই পিতা বসুদেব ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ রাতে মহামায়ার নির্দেশে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে নন্দমহারাজার গৃহে তাঁর অচেতন স্ত্রী যশোদার পাশে রেখে আসেন এবং যশোদার সদ্য প্রসবিত কন্যা সন্তানকে নিয়ে দৈবকীর পাশে রেখে দেন।
শত নামের অধিকারী শ্রীকৃষ্ণ গোকুলে পালকমাতা গোপিনী যশোদার অপত্য স্নেহে বড় হতে লাগল বিচিত্রসব অলৌকিক লীলা ও কীর্তি নিয়ে যার হাতেই পরবর্তীতে অত্যাচারী কংসের বধ হয়। অপরদিকে হিংস্র কংস শিশু শ্রীকৃষ্ণকে হত্যার উদ্দেশ্যে কারাগারে প্রবেশ করে দৈবকীর পাশে থাকা শিশকে শ্রীকৃষ্ণ ভেবে তাকে হাতে তুলে হত্যার জন্য নিক্ষেপ করতে গেলে কংসের হাত হতে ঐ শিশু শূণ্যে মিলিয়ে যেতে যেতে তার কণ্ঠে ধ্বণিত হতে থাকে, “তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।” ঐ শিশুটিই আসলে মহামায়া। এ সবই পৌরাণিক ব্যাখ্যা।
যাহোক, এখানে কংস হচ্ছে সমস্ত অশুভ শক্তি, অন্যায়, অত্যাচারের প্রতীক। এই কংসরূপী সমস্ত অশুভ, দানবীয় শক্তিকে নির্মূল করার জন্যই শান্তি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে মহাবতার, পরমাবতার, পূর্ণাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। পরমেশ্বরের পূর্ণ প্রতিভূ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলেই তিনি পূর্ণাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মর্মে বিশ্বাস করা হয়। এটিই জন্মাষ্টমীর মূল তাৎপর্য। বিশ্বসংসারকে সমস্ত পাপ,তাপ, বিষাক্ত নি;শ্বাস থেকে মুক্ত করে শান্তি ও মানবতার সুশীতল স্পর্শে সিক্ত, উজ্জীবিত ও আলোকিত করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সর্বজনীন মানবতাবাদী বাণী অতীব গুরুত্ববহ।
বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা, সমারোহ এবং ভাব, গাম্ভীর্যের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলায় জন্মাষ্টমীর উৎসব পালিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ জন্মাষ্টমীর মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। সমস্ত অশুভ শক্তি দূরীভূত হয়ে সবার জীবন শান্তি ও কল্যাণে সমৃদ্ধ হোক।
সকলকে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা।