”বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙা মানে পুরো বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে দেওয়া” // রোকেয়া প্রাচী

ধানমন্ডি ৩২

ধানমন্ডি ৩২ (বঙ্গবন্ধুর বাড়ি এবং স্মৃতি জাদুঘর) আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! এটা সারা বিশ্ব দেখেছে। বঙ্গবন্ধু ডাক না দিলে ১৯৭১ হত না, আমরা এই বাংলাদেশ পেতাম না। আমরা অকৃতজ্ঞ না, আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, আমরা এই বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমি যাবো, আমরা যাবো, আমরা সবাই যাবো। ঐ পোড়া বাড়িতে গিয়েই আমরা শ্রদ্ধা জানাবো। এখন আমাদের সামনে শুধু ১৫ আগস্ট, আমরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাবো। আমরা সবাইকে ডাকছি, আসুন। এ বছর কোনো ব্যতিক্রম হওয়ার কারণ নেই, এ বছর আরো জোরালোভাবে যাবো। কেউ যদি নাও যায়, আমি একা যাবো। আমার কাছে মনে হয় যে, সবাই আসবে। বঙ্গবন্ধু তো শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের না। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্র্রের না, বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বের। বঙ্গবন্ধু বিশ্বের মহান রাষ্ট্রনায়কদের একজন। এমন একজন মহান রাষ্ট্রনায়ককে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে কিছু মানুষ! আমি দেখছি, দেখতে পাচ্ছি— বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে অবশ্যই মানুষ আসবে।

বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো এরা। এখন সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর সকল স্মৃতি ধ্বংস করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর ধ্বংস করেছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে ওরা সপরিবারে হত্যা করেছিলো। আমরা এই বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রেখেছিলাম। এই স্মৃতি ধরে রাখাটা হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। ধানমন্ডি ৩২ ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে— ভাবার কোনো কারণ নেই, এই পোড়া ৩২ নম্বরের, এই ভাঙা ৩২ নম্বরের কোনো শক্তি নেই। এই ছাইভস্ম থেকে আমরা আবার জেগে উঠবো, আমরা ৩২ নম্বরে যাবো। সবাই আসবে, বাংলাদেশে এরকম অনেক কর্মী আপনি পাবেন, যারা বলবে— কেউ না আসুক আমি একা যাবো। বাঁচি মরি একাই যাবো, এটা আমাদের সম্মান, আমাদের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লড়াই। এখানে আওয়ামী লীগ বিএনপি বলে কিছু নাই, এখানে রাজনীতি বলে কিছু নাই। এখানে একমাত্র কথা হচ্ছে বাংলাদেশ, একমাত্র কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনের সময় কতদিন অনশন করেছিলেন এই প্রজন্ম জানে না। বঙ্গবন্ধু ডাক না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হত না, এই বাংলাদেশ হত না। আমরা অকৃতজ্ঞ না, আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আমি যাবো, আমরা যাবো, ঐ পোড়া বাড়িতে গিয়েই আমরা শ্রদ্ধা জানাবো। দিগুণ হবো, তিনগুণ হবো, একশো গুণ হবো। আপনি দেখবেন কেউ ঠেকাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ কি শুধু নেতাকর্মীর দল? নেতাকর্মীরা যদি জেলে থাকে, লুকিয়ে থাকে, তাতে কিছু যায় আসে না। বঙ্গবন্ধু —এই একটি নামই যথেষ্ট, বঙ্গবন্ধু মানে তো একটা শক্তি। সকল স্তরের জনসাধারণ আসবে। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধু —এই তিনটি কিন্তু আমাদের ঐশ্বর্য, কোহিনূর। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে কোনো আপোষ নেই। ধানমন্ডি ৩২-এর স্মৃতি আছে, ইতিহাস আছে, বঙ্গবন্ধুর প্রাণশক্তি সেখানে রয়েছে। ১৫ আগস্ট আমরা সবাই সেখানে মিলিত হবো। বঙ্গববন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাবো, এই শোক থেকে, এই অসম্মান থেকে আমরা নতুন করে শক্তি আহরণ করবো। নতুন আওয়ামী লীগ আবার পথ চলবে। আজকে যারা প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে আছে, এটা সাময়িক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে এটা ঘটে। বাংলাদেশে অনেক মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, বাংলাদেশকে ভালোবাসে। এর জন্য কারো সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগ করতে হবে না।

জনগণ আমাদের সাথে আছে, মুক্তিযোদ্ধারা আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে। আবার জেগে উঠবে মানুষ। ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আমরা আবার প্রাণ ফিরে পাবো। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়ার জন্য আমরা সবাইকে ডাকছি, আসুন। গন্তব্য একটাই, ধানমন্ডি ৩২, ১৫ আগস্ট।

এটা কি রোকেয়া প্রাচীর বাড়ি? বাড়িটা ভাঙলাম, আবার রংটং করে, দু’একটা সোফা কিনে ঠিক করে সাজিয়ে দিলাম। এটা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি, সারা পৃথিবীর ঐশ্বর্য দিয়েও আপনি আগের ৩২ ফিরে পাবেন না। বঙ্গবন্ধুর সেই পাঞ্জাবিটা পাবেন? বঙ্গবন্ধুর সেই চশমাটা আপনি কোথায় পাবেন? বঙ্গবন্ধু যে ফোনে কথা বলেছে, সেই ফোনটা, যে ফোনে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্ম ঘোষণা করেছে, সেই ফোনটা আপনি কোথায় পাবেন? সারা পৃথিবীর ঐশ্বর্য দিয়ে ওটা আপনি কিনতে পারবেন? যোগাড় করতে পারবেন? এটা তো এমন কারো বাড়ি নয় যে, আপনি আবার বানিয়ে দেবেন। এক্ষেত্রে এরকম করা হলে, এর মানে হচ্ছে আপনাকে মেরে আবার জুতোর বাড়ি দেওয়া। এটা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, আমরা মুষড়ে পড়েছি। আপনি বুঝতে পারছেন—বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙা মানে পুরো বাংলাদেশকে জ্বালিয়ে দেওয়া।