বিশেষ সম্পাদকীয়: আজহারী-মাজাহারীদের সাথে রাষ্ট্রের ‘পাতানো দ্বন্দ্ব’, দিনশেষে ক্ষতির শিকার জনগণ …

মিজানুর রহমান আজাহারী

ধর্ম ব্যবসা, ধর্মীয় সম্রাজ্যবাদ, ধর্মীয় উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা হচ্ছে টেরোরিজম। রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম, যতদিন না টেরোরিজম বন্ধ হবে ততদিন কাউন্টার টেরোরিজম বন্ধ হবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আদর্শবাদী অংশটুকু ঐতিহ্যগত, দুবৃত্তায়িত অংশটুকু ঐ কাউন্টার টেরোরিজম— যেটি বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া ঠিকই, হয়ত বৈশ্বিক রাজনীতির বাধ্যবাধকতা।

একজন সভ্য-সুশীল লোক ‘জামাতের’ সাথে লড়তে যাবে না, এজন্য একজন ‘দুবৃত্তই’ প্রয়োজন হয় দিনশেষে। যতদিন এইসব আজাহারীরা ইসলামী জুজুর ভয় দেখাতে থাকবে ততদিন সুসঙ্গত গণতন্ত্র এদেশে আসবে না, এরকম কোনো দেশেই আসবে না। আজহারীদের অবশ্য তাতে কিছু যায়ও আসে না, তাদের আয় উপার্জন হলেই হলো, অন্ধদের কাছে জনপ্রিয় থাকতে পারলেই হলো।

হৃদয়বৃত্তিতে এরা বিশ্বাসী নয়, এরা বিশ্বাসী স্বস্তা জনপ্রিয়তায়। মানুষকে ভালোবাসায় এরা বিশ্বাসী নয়, এরা সৃষ্টিকর্তার নামে মানুষকে উন্মাদ বানিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করে। ফলে নিশ্চিত থাকেন সামনের দিনগুলোতে টেরোরিজমও বাড়বে, কাউন্টার টেরোরিজমও বাড়বে।

‘ওয়্যার এন্ড টেরর’ —এতে প্রকৃতপক্ষে কতিপয় মানুষ লাভবান হয়, একপাশে লাভবান হয় আজাহারীরা, অন্যপাশে লাভবান হয় ধর্মমন্ত্রী এবং আরো সহজ করে বললে এই মেয়র নির্বাচনে যারা জয়লাভ করলেন তারা— আমলা, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা; জনগণ হয় বলির পাঠা।

‘ওয়্যার এন্ড টেরর’ রাজনীতিতে উভয় পক্ষের বুদ্ধিজীবীদেরও বিশেষ রোল থাকে, তাই তারাও ভালো থাকে। এখানে আরেকটা মজার বিষয় ঘটে– ক্ষমতার মোহে অনেক সময় প্রায় একই চরিত্রের দুজন মানুষও বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে পারে। ঠিক সেই জিনিসটিই ঘটেছে আমাদের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এবং মিজানুর রহমান আজাহারীর বেলায়।

এতে ‘ওয়ার এন্ড টেরর’ গেমটা আরো বেশি জমে ওঠে। জনগণ একদিকে বঞ্চিত এবং ক্ষুধার্ত হতে থাকে, আরেকদিকে গভীর মনোযোগে এসব গিলতে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সেটি আরো অনেক সহজ হওয়ায় এখন এই অন্ধ জনগণ শুধু বিভ্রান্তই হচ্ছে, দোদুল্যমান হচ্ছে, একটুও বিকশিত হচ্ছে না।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বেঁচাবিক্রি কিন্তু হুহু করে বাড়ছে— সেটি ডাটা প্যাকেজ বলেন, আর ইউটিউব ফেসবুকের বিজ্ঞাপনই বলেন। রাষ্ট্রের কাছে এই তথ্যটা কি আছে যে এদেশের মানুষ ফেসবুকে এবং ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিয়ে কতটাকা খরচ করে, আর কত টাকা আয় করে?

আমি নিশ্চিত যে খরচের অংকটা অনেক বেশি। তার মানে কী দাঁড়াল? মানে দাঁড়াচ্ছে— বাংলার মানুষ এখন ধান বেঁচে মোবাইল ডাটা কিনছে— সেটি আজাহারীর ওয়াজ শুনতে আবার মমতাজের পাল্টা জবাব শুনতেও। পকেট ভারী করছে সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো, আবার ওরাই একদিন শান্তিমিশন পাঠাবে এই অশান্তি বন্ধ করতে!

যেমন ছিল তেমনই থেকে যাচ্ছে দেশের চিকিৎসার অপব্যবস্থা, শিক্ষার অব্যবস্থাপনা, নীতি-দুর্নীতির প্রশ্ন এবং মানুষের নানামুখী সীমাহীন দুর্ভোগ এবং দারিদ্র্য।