ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ সম্পাদন করেছে কেউ— এমন খবর শোনা যায় খুব কমই। যার প্রতিফলন পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। দুদক বলেছে ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি কর, ভূমি রেকর্ড, খাস জমি, পরিত্যক্ত ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া সেবা পায় না। দুদক এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে সত্যতাও পায়। এসব ক্ষেত্রে ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও কারো বিরুদ্ধে স্থায়ী কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্তদের মধ্যে কাউকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও নতুন কর্মস্থলে গিয়েও সে দুর্নতির সম্রাজ্য গড়ে তোলে। আবার অনেকে বছরের পর বছর একই অফিসে চাকরি করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। জানা গেছে ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো নামজারি হয় না। বিশেষ করে অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দালাল চক্র মিলেমিশে বিছিয়ে রেখেছে দুর্নীতির এ জাল। ঘুষের বিনিময়ে খাস জমি, পরিত্যক্ত জমি বা অর্পিত সম্পত্তি ইচ্ছেমতো কারো নামে বন্দোবস্ত দিচ্ছে দুর্নীতিবাজ চক্র। এদের সহায়তায় সরকারি ভূমি বছরের পর বছর অবৈধভাবে দখলে রেখেছে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি।
এরই মধ্যে ভূমি অফিসের দুর্নীতি দ্রুত দূর করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এ ছাড়া দখলকৃত খাসজমি, জলমহাল ও অন্যান্য সরকারি জমি উদ্ধার করে নদীভাঙনে গৃহহীণ হওয়া মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়।
বলা হচ্ছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ভূমি অফিসসহ প্রায় সব সরকারি দপ্তরে ঘুষ-দুর্নীতি একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই সুপরিশ আর পরিকল্পনার মধ্যে আটকে না থেকে এখন বাস্তবিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো প্রয়োজন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল চক্রের মূলোৎপাটন করতে সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সাধারণ সেবা গ্রহীতাদেরও। তাদেরকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, সরকারি অফিসগুলো জনগণকে সেবা দিতে বাধ্য। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়া হয় এই সেবা দেওয়ার জন্যই।