প্রাথমিক প্রাগৈতিহাসিক মানুষ গাছপালা, ফল এবং বীজের জন্য ঘুরে বেড়াত – খাদ্যের উৎস যা হজম করতে প্রচুর শক্তি লাগত। হজমের জন্য এত শক্তি ব্যয় করে মানুষের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ছোট ছিল। তারপর প্রায় ২ মিলিয়ন বছর আগে, প্রথম হোমো প্রজাতি নিয়মিতভাবে খাদ্য হিসেবে মাংস খোঁজা শুরু করে। ক্রমান্বয়ে, এবং প্রধানত মাংস খাওয়ার ফলে রূপান্তরিত হয়ে মানুষের মস্তিষ্ক বড় হতে থাকে, বিশেষ করে অন্যান্য প্রাইমেটের বিপরীতে, যাদের মস্তিষ্ক আজ পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে ছোট। “কিছু বিজ্ঞানী যুক্তি দেন যে মাংসই আমাদের মানুষ করেছে,” বলেছেন মার্তা জারাস্কা, “মিথুকড: দ্য হিস্টোরি অ্যান্ড সায়েন্স অফ আওয়ার ২.৫-মিলিয়ন ইয়ার অবসেশন উইথ মিট”। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, আমাদের তুলনামূলকভাবে বড় মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের মোট শক্তির ২০ শতাংশ খরচ করে এবং মাংস আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান দিনেও মাংস আমাদের খাদ্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দৈনিক কতটুকু মাংস খাওয়া উচিৎ বা আদৌ মাংস খাওয়া উচিৎ কিনা সেটি নিয়ে মত দ্বিমত থাকলেও এটা অনস্বীকার্য যে, মাংসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে দৈহিক গড়ন এবং শক্তি সরবরাহে অবদান রাখে। পৃথিবীতে সাধারণত মুরগী, গরু, শুকর, ভেড়া, ছাগল এবং মহীষের মাংস খাওয়া হয়। শুকরের মাংস, বা গৃহপালিত শুয়োর বিশ্বের সর্বাধিক খাওয়া (৩৬%) প্রাণী (সূত্র: UN-FAO)। শুয়োরের মাংসকে সাধারণত সাদা মাংস বলে মনে করা হয়, কিন্তু এটি আসলে ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (USDA) দ্বারা লাল মাংস হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এর দুটি প্রধান কারণ রয়েছে: প্রথমত, শুয়োরের মাংসে পোল্ট্রি এবং মাছের চেয়ে বেশি মায়োগ্লোবিন থাকে, যা এটিকে হালকা লাল বা গোলাপী রঙ দেয়। দ্বিতীয়ত, গরুর মাংস এবং ভেড়ার মাংসের মতো শুকরকে পশুসম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং সমস্ত পশুসম্পদকে লাল মাংস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভক্ষণ করা মাংসের তালিকায় শুকরের মাংসের পরেই রয়েছে মুরগীর মাংস এবং এরপর আসে গরুর মাংস। গরুর মাংস, বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক বহুল ব্যবহৃত মাংস, মোট মাংস খরচের ২৫% প্রতিনিধিত্ব করে (সূত্র: UN-FAO)। ২০১৮ সালের হিসাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং চীন ছিল গরুর মাংসের বৃহত্তম উৎপাদক। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভক্ষণ করা হয় মুরগীর মাংস এবং এরপর রয়েছে গরুর মাংস। বছরে মাথাপিছু মাংস ভক্ষণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই নাজুক। বাংলাদেশ বছরে মাথাপিছু মাত্র ৪.২৭ কেজি মাংস ভক্ষণ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের চেয়ে দরিদ্র দেশ পাকিস্তানে মাথাপিছু মাংস ভক্ষণের হার ১৬.২৭ কেজি। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দরিদ্র দেশ নেপালও এদিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভারতের অবস্থান খারাপ হওয়া একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে— ভারতের অনেক অঞ্চল নিরামীষভোজী, ফলে গড় হার তাদের বাংলাদেশেরও নিচে। কেন বাংলাদেশের মানুষ এত কম মাংস খায়। এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের মাংসের দাম তুলনামূলক পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা উক্ত দুই দেশের তুলনায় বেশি হলেও গড় মাংস ভক্ষণ হার কম। বাংলাদেশে মাংসের দাম যে বেশি সেটি বিশ্বব্যাপী গরুর মাংসের দামের তুলনামূলক আলোচনা থেকে বোঝা যেতে পারে। গরুর মাংসের দাম দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। প্রধানত উচ্চমূল্যের কারণেই বাংলাদেশে মাথাপিছু মাংস ভক্ষণ হার কম।বৈশ্বিক গড় থেকে দেশে গরুর মাংসের দাম ৩২ শতাংশ বেশি, মূলত অপর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, ভারত থেকে গরু পাচার না হওয়া এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির কারণে এ দাম বেশি বলে বাজার পর্যালোচনাকারীরা মত দেন। তবে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি নয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে লাল মাংসের দাম বেশি কিন্তু পাকিস্তানে সস্তা, জীবনযাত্রার খরচের ইন্টারনেট ডাটাবেস Numbeo-এর মতে। বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ, চাহিদার অনুপাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি।
বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণের জন্যে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে গরুর মাংস সবচেয়ে দামি হয়েছে। ভারতের গরুর মাংস রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশে উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং গবাদি পশুর খাদ্যের উচ্চ মূল্যের মতো কারণগুলি বাস্তবিকভাবে গরুর মাংস উচ্চ মূল্যের দিকে পরিচালিত করেছে। ঈদ-উল-ফিতরের ঠিক আগে (২০২২), গরুর মাংসের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬৫০-৭০০ টাকা, এর এক মাস আগে মার্চ মাসেও ছিল প্রতি কেজি ৬০০ টাকা। কিন্তু এখন কসাইরা ঢাকায় প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায় গরুর মাংস খুচরা বিক্রি করছে, যেখানে খাসির মাংসের দাম প্রতি কেজি ৮৫০-১০০০ টাকা।
কলকাতায় মুসলমানরা সাধারণত শুধু গরুর মাংস খায়, তাই সেখানে মাটনের দামের তুলনায় গরুর মাংসের দাম অনেক কম। তাই ভারতে গরুর মাংসের দামের সাথে বাংলাদেশে দাম তুলনীয় নয়। পাকিস্তানে এক কেজি গরুর মাংসের দাম প্রায় ৮২৫ টাকা, টাকার মূল্যমান হিসেবে যা বাংলাদেশের ৪০০ টাকার সমান, এবং প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম ১,৩৪০ টাকা, যা ৬৫০ টাকার সমান। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের গড় দাম প্রায় প্রায় ৬ ডলার। কিন্তু বাংলাদেশে এই দাম প্রায় $৭ থেকে $৭.৫০ ডলার। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে ভারত বাংলাদেশে গবাদি পশু রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ঢাকার বাজারে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। নিষেধাজ্ঞার আগে চোরাচালান করা ভারতীয় গরু বাংলাদেশের চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করত। একটি অনুমানে দেখা গেছে যে, চোরাচালানের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন গরু বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। ২০১৩-১৫ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী গরুর মাংসের গড় মূল্য ছিল $৪.৬৩ ডলার, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিময় হারের ভিত্তিতে প্রতি কেজি প্রায় ৩৬০ টাকা।
গবাদি পশু রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে প্রাণিসম্পদ খাতে বাংলাদেশে ঈর্ষণীয় সাফল্য সত্ত্বেও গত ৭-৮ বছরে বাংলাদেশে গরুর মাংস ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার বাংলাদেশে গবাদি পশু রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং এটি দেশটিকে (বাংলাদেশকে) তার পশুসম্পদ খাতকে অনেকাংশে বিকাশে সহায়তা করেছিল। তবে বাংলাদেশ এখনো যে পরিমাণ গরু উৎপাদন করছে তা চাহিদার তুলনায় কম। যদিও বিবিএস-এর জরিপ বলছে— গরু ছাগলের উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষিশুমারির প্রাথমিক ফলাফলে জানা যায়, এক যুগের ব্যবধানে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। গরুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ লাখ, আর ছাগল বেড়েছে প্রায় ৬১ লাখ।
বিবিএসের শুমারি অনুযায়ী, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩। এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০। এক যুগ আগে ছাগলের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯। গরু-ছাগল ছাড়াও বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে ভেড়া ও মহিষের হিসাবও দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভেড়া উৎপাদন বেশ বেড়েছে। এর ফলে ভেড়ার সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬১৯ হয়েছে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭। অন্যদিকে মহিষের সংখ্যাও বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। দেশে এখন ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৪০টি মহিষ আছে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজারের মতো। চার বছর আগেও শুধু কোরবানির ঈদের সময় প্রায় ২২ লাখ গরু-ছাগল ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসেছিল। গত ঈদে (২০২২) এসেছিল মাত্র দেড় লাখ। গত তিন বছরে চিত্র এমনই পাল্টেছে যে গত কোরবানির ঈদের হাটে প্রায় ১২ লাখ গরু-ছাগল অবিক্রীত ছিল। এই তথ্য বিবেচনায় নিলে মাংসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সিন্ডিকাটের কারসাজ্জি হিসেবে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে।
গরুর মাংসের দাম নিম্ন ও মধ্যম আয়ের গ্রাহকদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সাধারণত ঢাকা সিটি করপোরেশন রমজান মাসের আগেই গরু ও মাটনের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ২০২১ এবং ২০২২ সালে সিটি করপোরেশন দাম নির্ধারণ করেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কিছু সরকারি পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা বাংলাদেশে মাংসের দাম ২০-২৫% কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে সবার আগে কমাতে হবে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম। পাকিস্তান ও ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে গবাদি পশু পালনে খরচ বেশি। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে অপর্যাপ্ত চারণভূমি রয়েছে, এবং বছরের পর বছর ধরে তা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। ভৌগলিকভাবে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই বাংলাদেশের চেয়ে যথাক্রমে ২৫ এবং সাত গুণ বড়। তাই উভয় দেশেই তৃণভূমি বাংলাদেশের তুলনায় ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।
করণীয় কী
বাংলাদেশে পশুখাদ্যের দামও বেশি। তবে টিসিবি পণ্যটি আমদানি করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করলে এই পণ্যটির দাম কমবে বলে ধারণা করা হয়। দুগ্ধ খামারের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাণিজ্যিক না হয়ে পরিবারের মতো একটি বিশেষ হারে থাকা উচিৎ। বর্তমান সরকারের নীতি গরু পালনকে উৎসাহিত করে, তাই বিদ্যুতের দাম বাণিজ্যিক নয়, স্বাভাবিক হওয়া উচিৎ। সরকারের উচিৎ দুগ্ধ খামারিদের ৩-৪% সুদে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা তৈরি করা। মাংসের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের উচিৎ দেশে ব্রাহ্মণ, সিমেন্টাল ও অ্যাঙ্গাসের মতো জাত আমদানিতে উৎসাহিত করা। একটি পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, আসাম, উত্তর উড়িষ্যা এবং বাংলাদেশে পাওয়া যায়, যার ওজন প্রায় ১৮-২০ কেজি এবং স্ত্রী প্রাপ্তবয়স্কদের ওজন ১৫-১৮ কেজি। সরকারের উচিৎ আফ্রিকান জাত যেমন বোয়ার বা কালাহারি এবং ভারতীয় জাতের তোতাপুরি ও যমুনাপারির মতো মাটনের উৎপাদন বাড়াতে আমদানির অনুমতি দেওয়া। ছোট ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের তুলনায় একটি হাইব্রিড ছাগলের ওজন ৫০-৬০ কেজি হতে পারে।
ডিপার্টমেন্ট অফ লাইভস্টক সার্ভিসেস (DLS) এর তথ্য অনুযায়ী, ’১০-এ, বাংলাদেশ প্রায় ১.৩ মিলিয়ন টন মাংস উৎপাদন করেছিল, যা ’২০-এ ৭.৫ মিলিয়ন টনে বেড়েছে। গত ৭/৮ বছরে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষিত তরুণ গবাদি পশু পালনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ গবাদি পশু পালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। আগে কোরবানির মৌসুমে আমাদের ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভর করতে হতো, কিন্তু এখন স্থানীয়ভাবে পালন করা ষাঁড় ঈদ উদযাপনে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে পারে। এ খাতের সম্ভাবনা অনুধাবন করেই এখন বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ এ ব্যবসায় প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর গবেষণা থেকে বলেন, সম্প্রতি প্রায় ৫০,০০০ লোক এই ব্যবসায় যোগ দিয়েছে যারা সবাই শিক্ষিত, তাদের মধ্যে অনেকেই স্নাতক।
বাংলাদেশে গবাদী পশুর উৎপাদন খরচ বেশি কারণ, এখানে বেশি দামে পশুখাদ্য কিনতে হয়। এ কারণে গরুর মাংসের দাম এখনও বেশি। দাম বেশি হলেও ভারতীয় গরু না আসায় বা কম আসায় বাংলাদেশ ধীরে ধীরে গবাদী পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। আগে গ্রামগুলিতে কৃষকদের দ্বারা ঐতিহ্যগত পদ্ধতি ব্যবহার করে গবাদি পশুর একটি সিংহভাগ উৎপাদন করা হত। কিন্তু এখন অনেক শিক্ষিত যুবক এবং ঐতিহ্যবাহী কৃষক কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উচ্চ মানের শাবক পালন শুরু করেছে। কয়েক বছর আগে মোটাতাজা ষাঁড়ের পরিসংখ্যান সংগ্রহ শুরু করা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে ৩.৩৪ মিলিয়ন মোটাতাজা ষাঁড় ছিল। ২০২১ সালে এটি প্রায় ১৬% বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৮৬ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যান দেখায় যে, ভারত থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্তে আনা গবাদি পশুর সংখ্যা ’১৪ সালে ২.১ মিলিয়ন ছিল। ’২০-এ এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২ লক্ষ। ডিএলএস-এর মতে, বাংলাদেশে এখন ৬৯৮,০০০ গবাদি পশু খামারি রয়েছে, যা ২০১৫ সালে ৩০০,০০০ ছিল। ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের মতে, গরুর মাংস নয়, মাংসের জন্য দেশীয় চাহিদার সিংহভাগই পোল্ট্রি দ্বারা পূরণ করা হয়।