গতকালকের দুটি খবর আমার নজর কেড়েছে–
আমিও যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি তাই অনেক কথা বলতে পারি—কীভাবে একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সারা দেশ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাছাই করে নিয়ে এরপর পাঁচবছর ধরে বিভিন্ন কায়দায় তাদের নষ্ট করে—সেসব কথা বলতে গেলে মহাকাব্য হবে।
সত্য হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূলত শিক্ষকদের বেতন ন্যায্য করে আর কিছু শিক্ষার্থী ক্ষমতাসীন দলে রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়। এর মধ্য দিয়ে ভালো যা কিছু হয় তা রবার্ট ব্রুসের ফের যুদ্ধে ফেরার মতো গল্প। অর্থাৎ জাকির হোসেনের আত্মহত্যাই স্বাভাবিক, আমাদের বেঁচে থাকা, ভালো থাকা পাশবিক চেষ্টার ফসল, মানবিক নয়।
জাকির হোসেনের মৃত্যুটা আমি উপলব্ধি করছি, কারণ, আমি জানি একদিকে ‘মেধাবী খেতাব’ অন্যদিকে মারাত্মক দারিদ্র্য কীভাবে লাগাতারভাবে পিষ্ঠ করে। কেউ সয়ে যায়, কেউ পারে না, জাকির হোসেন পারেনি—এই ‘না পারাটাই’ বরং বেশি মানবিক।
আমাদের দেশে ‘নিজের ভালো বোঝে না’ এমন মানুষ খুবই আক্রান্ত অবস্থায় থাকে সবসময়। ‘নিজের ভালো বোঝা’ মানে এখানে সবকিছু দাপিয়ে মাড়িয়ে যাওয়া—সেটি যে পারে না সে এখানে আক্রান্ত হবেই। দেশটা হচ্ছে– “হয় আক্রমণ করো, না হয় আক্রান্ত হও।” ফলে শিশু, বৃদ্ধ, নারী, মানসিক ভারসাম্যহীন যারা তারা এ সমাজে সবসময়ই আক্রান্ত। তালিকায় নারীদের নামটা আসছে, কারণ, আমাদের সমাজে এখনও বেশিরভাগ নারী ‘নিজের ভালো’ বুঝতে সক্ষম নয়, সুযোগ পায় না।
হত্যাকাণ্ডের শিকার এই হাকিম কবিরাজ যদি মিনমিনে পাগল না হয়ে হিংস্র পাগল হতো তাহলে কিন্তু সে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতো না, বরং ‘সুস্থ’ মানুষগুলো সব পালাতো তাকে দেখলে, বিপদটা তার হয়েছে নম্রতায়। এমনিতে ‘পাগলকে ঢিল’ মারা তো আমাদের সমাজে প্রবাদসম। দুর্বল পাগল হলে তাকে ঢিল দেয়, আক্রামণাত্মক পাগল হলে তাকে দেখে খিলখিল করে হাসতে হাসতে পালায়!
রেল, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান উন্নয়ন খুব হচ্ছে, কিন্তু সমাজ তলাচ্ছে, এবং সেটি হচ্ছে নীরবে। সামাজিক সংঘাত খুবই স্পষ্ট, হয়ত অদূরবর্তীও। দার্শনিক দ্বান্দ্বিকতার নিরসন না করলে কোনো উন্নয়ন টেকে না, পৃথিবীতে কোনো উন্নয়ন কোনোদিন টেকসই হয়নি জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় স্পষ্ট না করে। এখানে কি ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে?