“উপদেষ্টা সাখাওয়াতকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ— তিনি ‘কথা’ বলেছিলেন, যা সমন্বয়কদের পছন্দ হয় নি। এ ঘটনায় বার্তা দেয়া হলো— মন্ত্রীরা অপছন্দের কথা বলতে পারবেন না। বলতে হবে শুধু পছন্দের কথা। কাজে ব্যর্থ হোক, আপত্তি নেই, কিন্তু কথায় ব্যর্থ হওয়া যাবে না!
সরকার যদি মন খুলে কথা বলতে না পারে, যদি ভয় পায়— কী বললে কী হয়, তাহলে সরকারের গতিবিধি জনগণ বুঝতে পারবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরের অসুখ আড়ালে থেকে যাবে। এটি বিপজ্জনক। আওয়ামী লীগ মন্ত্রীরা শেখ হাসিনাকে ভয় পেতো, ইউনূসমন্ত্রীরা সমন্বয়কদের ভয় পাচ্ছে— এমন চিত্র যেই লাউ সেই কদুর অংশ। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নয়।
সাখাওয়াত সাহেব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আন্দোলনে নিহতদের শরীরে ‘সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু’ বুলেট পাওয়া গেছে। ডাক্তারদের প্রদর্শিত সত্যের ভিত্তিতেই তিনি কথা বলেছেন। বানিয়ে বা একা একা বলেন নি। বহু মানুষের উপস্থিতিতে বলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন— এ রাইফেল নিষিদ্ধ, সিভিল পোশাকে তা ব্যবহার করা হয়েছে। কারা ব্যবহার করলো? কাদের হাতে কীভাবে এলো? তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সিভিলিয়ানদের আর্মড করা হয়েছে, সত্য উদঘাটনে ‘ম্যাসিভ ইনভেস্টিগেশন’ দরকার।
এখানে সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা ছাড়া আপত্তিকর কিছু নজরে পড়ে নি। মন্ত্রীরা সত্য খুঁজতে কাজ করতে পারবেন না? তারা এ কাজের শপথই তো নিয়েছেন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এমন গোপন তথ্য ছাড়া মন্ত্রীদের সত্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে-প্রক্রিয়ায় সাখাওয়াতের মুখ বন্ধ করা হলো, এটি ফ্যাসিবাদী আক্রমণ। অন্য উপদেষ্টারা আর সত্য জানানোর সাহস করবেন না। যে-রাষ্ট্রে মন্ত্রীর বাকস্বাধীনতা নেই, সে-রাষ্ট্রে জনগণের বাকস্বাধীনতা থাকবে— এ প্রশ্ন আমি তুলছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলীয় সরকার নয়। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করার সুযোগ তাদের নেই। তাদের প্রধান কাজ দ্রুত অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। আওয়ামী লীগ নির্মূল করা, বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলা তাদের দায়িত্ব নয়। সাখাওয়াত আওয়ামী লীগ কর্মীদের দল গোছানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এটি দোষের কিছু নয়। অরাজকতা বাদ দিয়ে দল গোছানোর পরামর্শ তিনি যেকোনো রাজনীতিক দলকে দিতে পারেন। কোনো দলের প্রতি হোস্টালিটি উৎপাদন করা, এটি তার কাছে কীভাবে আশা করি?
সাখাওয়াতকে যারা নিয়োগ দিয়েছিলেন, তাদের বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। তারা কি শর্ত দিয়েছিলেন— ‘সবসময় আমাদের মন জুগিয়ে চলতে হবে? আমাদের মতো করে কথা বলতে হবে’? শপথ নেয়ার পর তিনি স্বাধীন মন্ত্রী। দেশের কল্যাণে যা ভালো মনে হবে, তা করবেন, এমনটিই হওয়ার কথা। যে-মন্ত্রী কথা বলতে ভয় পাবেন, সে-মন্ত্রী যে কাজ করতে ভয় পাবেন না, সেটি বলি কী করে? কাজের স্বাধীনতার সাথে বলার স্বাধীনতার সম্পর্ক সমানুপাতিক।”
—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
পর্যালোচনা / ১৭ আগস্ট / ২০২৪