Headlines

বাপু হে !! দেশের নাম বাংলাদেশ, পাকিস্তান নয় !!

এ ইতিহাস বলছি কেন ? বলছি এজন্য যে, বাংলাদেশেও এ ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। একটা দু:সময় এসেছিল যখন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে বলা হত “ভাই-ভাইয়ের দ্বন্দ”, স্কুলের সিলেবাসে একাত্তরের গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারী “পাকিস্তান বাহিনী” উঠিয়ে ঢোকানো হয়েছিল “হানাদার বাহিনী” – রাজাকার শব্দটা পর্যন্ত বলা যেত না যার জন্য হুমায়ুন আহমেদ তাঁর টিভি-নাটকে টিয়া পাখীর মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন – “তুই রাজাকার” ! আজ যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা কনফিউজড প্রজন্ম দেখি সেটা তারই কুফল।

হাসান মাহমুদ
হাসান মাহমুদ

হাসান মাহমুদ

ষড়যন্ত্র করে একটা পুরো জাতিকে কি তার ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়া যায়? যায়। পুরো পাকিস্তান জাতি বিশ্বাস করে জিন্না’র নেতৃত্বে, মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ভারতবর্ষের মুসলিম পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে। বিশ্বাস করে কারণ ১৯৪৭ থেকেই গত ৭০ বছর ধরে স্কুল কলেজের সিলেবাসে ওই মিথ্যাই জাতিকে গেলানো হয়েছে। বিশ্বাসটা আসলে কতবড় ঘোড়ার ডিম জাতি তা জানেও না। আমাদের প্রজন্মকে কি একাত্তর ভুলিয়ে দেয়া সম্ভব? ইতিহাসের শিক্ষা কি ?

১৯৪৬ সাল, পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছর আগে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে চলছে নির্বাচন যাকে বলা হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে-বিপক্ষে ইনফরম্যাল রেফারেণ্ডাম অর্থাৎ মুসলিম লীগ যদি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে জেতে তাহলে প্রমাণ হবে ভারতীয় মুসলিমেরা পাকিস্তান চায়। কি ফলাফল সেই নির্বাচনের ? পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবে স্যার সিকান্দর হায়াৎ খানের ইউনিয়নিষ্ট পার্টি মুসলিম লীগকে মাটিতে ফেলে তার হাড় ভেঙে দিয়েছিল। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গফফার খানের “লাল কুর্তা” পার্টিও মুসলিম লীগকে মাটিতে ফেলে হাড় ভেঙে দিয়েছিল। বাকী রইলো সিন্ধু, সেখানে কংগ্রেস আর মুসলিম লীগ টাই টাই, অর্থাৎ সমানে সমান। সংবিধান অনুযায়ী সিন্ধু সংসদের স্পীকার দয়া করে তাঁর ভোটটি মুসলিম লীগকে দিয়েছিলেন বলেই সেখানে মন্ত্রীসভা করেছিল মুসলিম লীগ। আর বাংলায় ? মুসলিম লীগের পক্ষে, পাকিস্তানের পক্ষে শতকরা ৯২ % ভোট !!

তাহলে পাকিস্তান এনেছিল কারা ? ওরা নয় ওরা নয়, পাকিস্তান এনেছিল এই বাংলার মুসলিম !! তারপর চব্বিশ বছর ধরে আমাদের ওপরে ওদের ক্রমাগত শোষণ অত্যাচারে যেখানে আমাদের প্রতিবাদ কাজে আসেনি, প্রতিরোধের ফলে নেমে এসেছে অত্যাচার, সেখানে আমরা একাত্তরে প্রতিবাদ প্রতিরোধ পার হয়ে চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিয়েছি – ওদের পশ্চাদ্দেশে লাথি মেরে বিদায় করেছি। একাত্তরের পর আবারো স্কুলের সিলেবাসে মিথ্যা ঢুকিয়ে ওদের পুরো প্রজন্মকে সত্যভ্রষ্ট করা হয়েছে, একাত্তর নাকি আমাদের জীবন-মরণ মুক্তিযুদ্ধ ছিলনা, ছিল ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ। সেই মিথ্যে গিলে গিলে ওদের প্রজন্ম বড় হয়েছে, এখন ওদের পুরো জাতি সেটাই বিশ্বাস করে।

এ ইতিহাস বলছি কেন ? বলছি এজন্য যে, বাংলাদেশেও এ ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। একটা দু:সময় এসেছিল যখন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে বলা হত “ভাই-ভাইয়ের দ্বন্দ”, স্কুলের সিলেবাসে একাত্তরের গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারী “পাকিস্তান বাহিনী” উঠিয়ে ঢোকানো হয়েছিল “হানাদার বাহিনী” – রাজাকার শব্দটা পর্যন্ত বলা যেত না যার জন্য হুমায়ুন আহমেদ তাঁর টিভি-নাটকে টিয়া পাখীর মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন – “তুই রাজাকার” ! আজ যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা কনফিউজড প্রজন্ম দেখি সেটা তারই কুফল।

কিন্তু বাপু হে !! দেশের নাম বাংলাদেশ, পাকিস্তান নয় !!
রবীন্দ্র-নজরুল-মাইকেল-লালন শাহের এ নৃত্ত্বাতিক জাতির নাম বাঙালী, পাকিস্তানী নয় !!!!

#লেখক: সাধারণ সম্পাদক, মুসলিম ফেসিং টুমরো