ফরিদপুরের মিঞাবাড়ী গণহত্যা দিবসে স্মরণসভা করেছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ

১৯৭১

১৭ আগস্ট ফরিদপুরের কোতোয়ালী থানাধীন কোমরপুর গ্রামের মিঞাবাড়ী গণহত্যা দিবস। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম হক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলার পৌর মেয়র অমিতাভ বোস। ফরিদপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কুদ্দুসুর রহমানের উপস্থাপনায় এ স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ পরিবারের সদস্য মো: খায়রুল ইসলাম সূজা মিঞা।

১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট দিবাগত রাত দেড়টায় পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় সেসময়ের কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজহার মিঞার বাড়ীতে নির্মম একটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে। বর্বরদের মেশিনগানের গুলিতে সেদিন আজহার মিঞার স্ত্রী তহুরা ইসলাম, তার মেয়ে রোজিনা ইসলাম (১৭) এবং কোলের শিশু সন্তান টকি ইসলাম (৬) মারা যায়। আহত হন আজহার মিঞার বোন শেলী ইসলাম সহ আরও কয়েকজন। এতটাই বেপোরোয়াভাবে পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন গুলি করেছিল যে, গুলিতে একটি গরুও মারা যায়। শিশু টকি ঘুম ছিল, গুলির শব্দে ঘুম থেকে উঠে দাঁড়াতেই একটি গুলি তার বুক ভেদ করে চলে যায়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন আমি খুবই ছোট। তবে কিছু জিনিস আমার মনে আছে। সেদিন মামাবাড়ীর ঘরটি রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। সেই ভয়ার্ত দিনের কথা কোনোভাবেই আমি ভুলতে পারব না। যাদের ইন্ধনে সেদিন গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল, ফরিদপুরে তারা এখনও সদর্পে ঘুরে বড়ায়। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আশরাফুজ্জামান মুরাদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মোল্যা। বক্তরা তাদের বক্তব্যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধাকালীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসরদের দ্বারা সংগঠিত সকল গণহত্যার বিচার দাবী করেন। এ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সহ শহীদ পরিবারের জন্য তারা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শহীদ পরিবারের সদস্য, এ স্মরণসভার সভাপতি মো: খায়রুল হক সূজা মিঞা বলেন, সেদিন রাতের আধারে এসে যেভাবে শিশু সন্তান সহ দু’জন নারীকে— যারা পরস্পর মা ও সন্তান, হত্যা করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সরকারের কাছে দাবী করছি সংলগ্ন সড়কটির নামকরণ যাতে শহীদদের নামে করা হয়। একইসাথে দাবী করছি— স্থানীয় প্রশাসন যাতে সরকারিভাবে প্রতিটি গণহত্যা দিবসে স্মরণসভা করে।