২৫/১২/২০২০ তারিখে ফরিদপুরে গঠিত হয়েছে “শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুর”। কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপের উপস্থিতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, চরভদ্রাসন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আজীজুল হক (আজীজ মাস্টার)-এর জেষ্ঠ পুত্র এবং শহীদ রাজনীতিক সৈয়দ আহমদের নাতি সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদকে আহ্বায়ক এবং সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর গ্রামের ঈশান সরকার বাড়ীর (বধ্যভূমি) পঞ্চম প্রজন্মের সন্তান উৎপল সরকার সাগর কে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন নূর মোহাম্মদ, জাকারিয়া মাতব্বর এবং সৈয়দ হাসানুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ দিদারুজ্জামান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা পরিচালনা করে। শিশু ও নারী সহ ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে। পাঁচ লক্ষাধিক নারীকে তারা বর্বরভাবে নির্যাতন করে। ইতিহাসের জঘন্যতম এ গণহত্যার বিচার হয়নি, বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষিত হয়নি সকল বধ্যভূমি। বেসরকারি হিসেবে দেশে পাঁচ হাজারের উপর বধ্যভূমি রয়েছে, যেখানে নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে ডেকে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিলো।
শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি শহীদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি শহীদ দিবসগুলো স্মরণ, গবেষণা গ্রন্থ প্রণয়ন, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ এবং দু:স্থ শহীদ পরিবারের কল্যাণে কাজ করবে। পাশাপাশি নিরলসভাবে তারা গণহত্যাকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তানের বিচার দাবী করবে।
এ বিষয়ে “শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ বলেন, “আমরা এখানে কেউ নেতা হতে আসিনি। আমরা এসেছি পঞ্চাশ বছর ধরে আমাদের জমাটবদ্ধ বেদনার কথা বলতে, শুনতে। আমরা এসেছি হত্যাকারীদের বিচার চাইতে। আমরা শহীদ পরিবারের সদস্যরা পরস্পর পরস্পরের পাশে দাঁড়াব। শহীদস্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করব। প্রতিটি বধ্যভূমিতে যে দিনে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিলো দিনটি আমরা স্মরণ করব। আমরা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।”
কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেন, “কোনো একটি হত্যাকাণ্ডও যেখানে বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারে না সেখানে ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা, কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে আমরা তাদের বিচার এখনও দাবী করতে পারিনি। এর চেয়ে লজ্জ্বার আর কিছু হতে পারে না। আমরা শিকড়হীন জাতি নই, আমরা চাই গণহত্যাকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তানের বিচার হতে হবে। হত্যামামলা কখনো তামাদি হয় না, ফলে পঞ্চাশ বছর অতিবাহীত হয়েছে একথা বলে বিচারের দাবী পাশ কাটানোর সুযোগ নেই। বিচার হতে হবে। পাশাপাশি শহীদস্মৃতিগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় সংরক্ষণ করতে হবে। দু:স্থ শহীদ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। এখানে বীরমাতা চারুবালা উপস্থিত রয়েছেন। তার কান্না আমরা শুনেছি। একজন চারুবালার কান্না সমগ্র জাতির কান্না। কিন্তু কান্নায় কিছু হবে না। শোককে শক্তিতে পরিণত করে দুবৃত্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। শহীদ পরিবারের সদস্যরাই সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক দিব্যেন্দু দ্বীপ:
বক্তব্য রাখছেন “শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুর”-এর আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ: