বাগেরহাট সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক শেখ আব্দুর রহমান দেশ ত্যাগের পর যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে সৈয়দ অজিয়র রহমান বাগেরহাটের উপরে তার নিয়রন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারাই ছিল তার ক্ষমতার উৎস। তার দক্ষ নেতৃত্বের ফলে বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষভাবে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিল, স্বাধীনতা শক্তির নিকট তা অজানা ছিল না। তাই ডা: মোজাম্মেল হক এবং তার সহযোগীরা সৈয়দ অজিয়র রহমানকে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।
২৮ এপ্রিল বুধবার, সেদিন ছিল বাগেরহাটে হাটবার। সকলের খোঁজখবর নিতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয় স্বজনদের সাবধানে থাকতে বলার জন্য তিনি সেদিন বাগেরহাট এসেছিলেন। বাগেরহাট এসে রহমত হোটেলের মোড়ে বেলায়েতের রেস্টুরেন্টে মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনের সঙ্গে একত্রে নাস্তা করেন।
স্বাধীনতা বিরোধীদের নিকট তার উপস্থিতির এই খবরটা পৌঁছে যাওয়ামাত্র স্বাধীনতা বিরোধীরা চেষ্টা করতে থাকে যাতে সৈয়দ অজিয়র রহমানকে অ্যারেস্ট করা হয় এবং পাকিস্তানী বাহিনীর নিকট সোর্পদ করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বেলা এগারোটার দিকে বাগেরহাট ডাকবাংলোর সামনে আজাদ রেস্টুরেন্ট থেকে সৈয়দ অজিয়র রহমানকে পুলিশ অ্যারেস্ট করে। অজিয়র রহমান তখন এখানে চা খাচ্ছিলেন। অ্যারেস্ট করার পর অজিয়র রহমানকে বাগেরহাট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
অজিয়র রহমানকে গ্রেফতারের খবর সবখানে ছড়িয়ে পড়ার পর শেখ কামরুজ্জামান টুকু থানা আক্রমণ করে অজিয়র রহমানকে বের করে আনতে চান। তার এই প্রস্তাবে সম্মত হন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম খোকন এবং মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন।
তিনজনের বাহিনী তিন দিক থেকে থানা আক্রমণ করে ৩০ এপ্রিল রাত বারোটায়। কামরুজ্জামান টুকু জেলখানা আক্রমণ করে অজিয়র রহমানকে বের করে আনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরিকল্পনা মতো আক্রমণ করা হয়, এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। কামরুজ্জামানের বাহিনীর দুজন সদস্য আহত হয়ে মারা যায়। পরিস্থিতির দাবিতে কামরুজ্জামান টুকু তার দল নিয়ে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন, ফলে অজিয়র রহমানকে সেদিন আর উদ্আর করা হয় না।
এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই অজিয়র রহমানের উপর অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে যায়। স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে পরামর্শ করে পুলিশ প্রসাশন খুলনায় অবিস্থত সেনাবাহিনীর নিকট সৈয়দ অজিয়র রহমানকে হস্তান্তরের সিদ্আন্ত নেয়। ১ মে বাগেরহাট থানার পুলিশ শারিরীক নির্যাতনে মৃতপ্রায় সৈয়দ অজিয়র রহমানকে একটা জিপে করে খুলনার সেনানিবাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
কীভাবে অজিয়র রহমানের মৃত্যু হয়েছিল সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। অনেকের ধারণা খুলনা সেনানিবাসে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে, অথবা খুলনার সেনানিবাসে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, এবং এক পর্যায়ে হত্যা করা হয়।