“বাংলাদেশে যত পেশা আছে, তার মধ্যে সাংবাদিকতার মান সবচেয়ে নিচে। ভালা-বোধবুদ্ধিসম্পন্ন সাংবাদিক একেবারে যে নেই তা নয়, তবে বেশিরভাগই কর্মটির মাধ্যমে শুধু বেকারত্ব ঘুচিয়েছে।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেছিলেন, আমি তখন ক্যাম্পাসে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করতাম। কথা প্রসঙ্গে তিনি উক্ত উক্তিটি করেছিলেন।
এর কারণও হয়ত বোধগম্য। সাংবাদিকতাকে এখনো পেশা মনে কারি না আমরা, যে কোনো কাজ পায় না সে হয় সাংবাদিক, এমন একটা কথা বাজারে প্রচলিত আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা সত্য কিনা জানি না, তবে সাংবাদিকতা যে একটি মহৎ কর্ম এবং তিক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং সাহসের বিষয়, তা সম্ভবত আমাদের গণমাধ্যম দেখে বোঝা কঠিন । কেউ কেউ বিভিন্ন কারনে সাংবাদিক, ক্ষমতায় জন্য, নিরাপত্তার জন্য, ইত্যাদি অনেক কারণ রয়েছে। লক্ষ্য নিয়ে সাংবাদিক বা পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেছে নিয়েছে এমন খুবই কম।
আমাদের সাংবাদিকতা যে খুব বেশি মানসম্পন্ন নয়, তার প্রমাণ মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের ঐ ভিডিওটি। কোনোভাবেই ছেলে-মেয়েদের ক্যামেরার সামনে ওভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা ঠিক হয়নি, করা যায় না। যায় কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর পারলে ভালো হত, তবে তা না পারা মানেই সে মস্ত খারাপ স্টুডেন্ট এমন উপসংহারে আসা যায় না। তাছাড়া একজন সাংবাদিকের ঐ প্রশ্নগুলো অন রেকর্ড করার অধিকারই বা থাকে কীভাবে? জিপিএ’র সাথে ভালো স্টুডেন্টের সম্পর্ক খুব বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই, তা বোঝার জন্য ঐ ভিডিওটি লাগবে কেন?
এ ধরনের ক্যামেরা ট্রায়াল অত্যন্ত নিন্দনীয়, যদিও জনগণ গিলছে হুজুগে। আমি যখন এসএসসি পাস করি, আমিও তখন কিছুই জানতাম না। অপারেশন সার্চলাইট জানতাম না, রাষ্ট্রপতির নাম জানতাম না, সম্ভবত ‘২১ শে ফেব্রুয়ারি বাদে আর কোনো দিবসের কথাও জানতাম না। কেন জানতাম না? কারণ, আমাকে কেউ জানায়নি। মানুষ আকাশ থেকে এসব জানবে না।
ওদের (শিক্ষার্থী) কথা বাদ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সিলেবাস পড়ে যারা ফাস্ট হচ্ছে তারাই বা কতটুক কী জানে? বুকে হাত রেখে সত্য বললে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে।
আমাদের পড়াশুনার কালচারটা হচ্ছে মুখস্থ বিদ্যার কালচার। এতে খুব বেশি শেখা যায় না কোনো পর্যায়েই। শুধু শুধু ছোট ছোট ঐ ছেলেমেয়েদের এভাবে অপমান করা রীতিমত দণ্ডনীয় কাজ হয়েছে।