Headlines

অজয় রায় আর নেই

%e0%a6%85%e0%a6%9c%e0%a7%9f-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a7%9f

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান আমলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ভূমিকা পালনকারী কমরেড অজয় রায় আর নেই।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৮৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের সমন্বয়ক ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

অজয় রায় নিউমোনিয়া, কিডনি, হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

আগামী বুধবার (১৯ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অজয় রায়ের প্রতি নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হবে। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মরদেহ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।

অজয় রায় ১৯২৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার বনগ্রামে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অজয় রায় জ্যেষ্ঠতম। তাঁর বাবা ড. প্রমথ নাথ রায় ভারতের বারানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ভাষার অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর মা কল্যাণী রায় ছিলেন গৃহিণী।

১৯৩৭ সালে ভারতের যুক্ত প্রদেশের বারানসিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং অ্যাংলো–বেঙ্গলি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি বারানসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি পাস করেন ১৯৪৫ সালে।

বারানসিতে অজয় রায়ের পরিবার যে এলাকায় বসবাস করত, সেটা ছিল কমিউনিস্ট-অধ্যুষিত। আবার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বাঙালি। ফলে স্কুলজীবন থেকেই কমিউনিস্ট নেতাদের সংস্পর্শে এসে একজন সক্রিয় কমিউনিস্ট কর্মী হয়ে ওঠেন। আইএসসি পাস করার পর তিনি বারানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন।

১৯৪৪ সালে তাঁর বাবা এবং এর এক বছর তাঁর মা মৃত্যুবরণ করলে চলে আসেন বনগ্রামের পিত্রালয়ে। এরপর মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে বিকম শ্রেণিতে ভর্তি হন ১৯৪৬ সালে। জেলখানা থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যুক্ত হন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৪৬ সালে তদানীন্তন বাংলায় যে পৃথক নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের ফুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল থানা নিয়ে গঠিত আসনে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে কমরেড মণি সিংহ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে অজয় রায় কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেন এবং নিজ এলাকা বনগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ছাত্র ফেডারেশনে সংগঠিত করার সফল প্রচেষ্টা চালান।

১৯৪৮ সালে ছাত্রাবস্থাতেই জেলে যান তিনি, তখন তিনি মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এরপর নানা সময়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক কারারুদ্ধ হয়েছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেপ্তার হয়ে সর্বমোট জেল খেটেছেন ১৫ বছর।

অজয় রায় সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন এবং এই পদে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছিলেন।

কমরেড অজয় রায় রচনা করেছেন বেশ কটি গ্রন্থ; তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: বাঙলা ও বাঙালী, বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাংলাদেশের ভূমিব্যবস্থা, রাজনীতি কি ও কেন?, পুঁজিবাদী অর্থনীতি, বাংলাদেশের কৃষক বিদ্রোহ, গণ-আন্দোলনের নয় বছর, বীরকন্যা প্রীতিলতা, আমাদের জাতীয়তার বিকাশের ধারা, বাংলাদেশের বামপন্থী আন্দোলন ১৯৪৭-৭১, শিক্ষানবিশীর হাতেখড়ি, সাম্প্রতিক তীরের অন্বেষায়।

 

সূত্র: সিলেট টুডে থেকে নেওয়া।