মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, জাতির জন্য এটা খুবই লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক হচ্ছে যে এখনো অ-মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রয়ে গেছে। আদালতের আদেশের কারণে এসব অমুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে একাত্তরের ৪ বছরের শিশুকেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখতে হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের একাধিক সম্পুরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী এভাবেই তাঁর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখনো ওই সকল অমুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি ভাতা দিতে হচ্ছে। তবে আমরা আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সংসদের মাধ্যমে আদালতের প্রতি আহ্বান জানাবো, যেন ওই সকল আদেশ দ্রুত পুনর্বিবেচনা ও প্রত্যাহার করা হয়।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবিষয়ে সরকারি আইনজীবীদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনার আইনজীবীকে বলুন, বিষয়টি যেন আদালতে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করতে যেন দ্রুত আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেন।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ৩৩ হাজার লোকের একটা তালিকা করে। তারা কোনো প্রকার নীতি নৈতিকতা ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রায় ৩৩ হাজার লোকের একটা তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ দিয়েছিল। যাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। অনেকেই আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীতা করেছিল। এটা জাতির জন্য দু:খজনক। কোনো রকম তথ্য উপাত্তের ব্যতিরেকেই তারা তালিকা করেছিল। তারা ইচ্ছামত তালিকা করেছিল।
মন্ত্রী বলেন, আদালতে মামলা থাকার কারণে এসব অমুক্তিযোদ্ধাদের এখনো তালিকা থেকে আমরা বাদ দিতে পারিনি। এ বিষয়ে আদালতে ১১৬টি মামলা হয়। আমরা চেষ্টা করছি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করে স্ব স্ব উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করতে।
তিনি আরো বলেন, আদালত ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু আমরা বলছি যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কেবলমাত্র তিনিই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবেন, এটা কেবলমাত্র প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মৌলিক অধিকার, সবার নয়। আদালতের আদেশের কারণে ১৯৭১ সালে যার বয়স ৪ বছর ছিল তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
তিনদিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ওয়েভ সাইটে: সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের সম্পুরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক জানান, দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে সরকার কাজ করছে। অধিকাংশ উপজেলার তালিকা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২টি উপজেলার তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। আগামী তিন দিনের মধ্যে সমস্ত উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ওয়েভ সাইটে পাওয়া হবে। তবে এখনো যেসমস্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত হননি, তারা আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে তালিকাভূক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।
আওয়ামী লীগ দলীয় আরেক সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খুবই দু:খজনক এবং বেদনাদায়ক ব্যাপার যে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সঠিক তালিকা এখন পর্যন্ত নেই। আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা বলতে কি বুঝি তার একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা বলতে যারা ভারতবর্ষে ট্রেনিং নিয়েছেন তাদের একটা তালিকা করি। সেখানে দেখা গেছে কিছু কিছু সেক্টরের তালিকা তখন সঠিকভাবে সংরক্ষিত ছিল না বা আমরা বাংলাদেশে আনতে পারিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটি তালিকা করে, যেটা লাল তালিকাভুক্ত বলে পরিচিত। সেখানেও অনেক অভিযোগ আছে।