কাশিয়ানীর ভূমি অফিস দুর্নীতির আখড়া

গোপালগঞ্জ

অবসরপ্রাপ্ত সেনা-সদস্য মো. সাহাবুদ্দিন মোল্যা। নামজারি করার জন্য এক বছর আগে উপজেলা ভূমি অফিসে চারটি ফাইল জমা দেন। জমার ৬ মাস পর কাগজপত্রে ত্রুটির কারণে অফিস থেকে ফাইল ফেরত দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে কাগজপত্র সঠিক করে পুনরায় সাহাবুদ্দিন মোল্যা উপজেলা ভূমি অফিসে ফাইল জমা দেন। এরপর শুরু হয় নানা অজুহাত ও দেন-দরবারের কথা। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রুহুল আমিন ও অফিস সহকারী মো. আশিকুল ইসলাম চারটি ফাইলের জন্য অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা-সদস্যের কাছে মোটা অঙ্কের ঘুস দাবি করেন। জমির নামজারি শেষ করে হজ পালন করতে যাবেন সাহাবুদ্দিন মোল্যা। তাই দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে বাধ্য হয়ে সার্ভেয়ার রুহুল আমিনকে ১৮ হাজার টাকা ঘুস দেন তিনি। এরপর শুনানির জন্য তাকে অফিসে ডাকা হয়। এভাবে নানা হয়রানির পর গত ২ সপ্তাহ আগে তার জমির নামজারি সম্পন্ন হয়। শুধু সাহাবুদ্দিনই নয়, এমন অসংখ্য সেবাগ্রহীতা প্রতিদিন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ভূমি অফিসে সার্ভে রিপোর্ট, ডিসিআর সংগ্রহ, মিসকেচ, খাজনা, দাখিলাসহ ভূমিসংক্রান্ত সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একজনের জমি অন্যের নামে ডিসিআর, অন্যের দলিল দেখিয়ে ভিপি সম্পত্তি নামে-বেনামে নামজারি ও কাক্সিক্ষত ঘুস না পেয়ে ফাইল গায়েবের মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সহকারী কমিশনারের টেবিলে ফাইল পৌঁছাতে নিুপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে হয় কয়েক দফা ঘুস। অন্যথায় দিনের পর দিন ঘুরেও কাজ হয় না। নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয় সেবাগ্রহীতাদের। কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে সেবাগ্রহীতাদের গুনতে হয় আরও কয়েক গুণ টাকা। অতিরিক্ত টাকা দিলে অনিয়মও যেখানে নিয়মে পরিণত হয়। অফিস সহকারী মো. আশিকুল ইসলামের নিয়ন্ত্রণে গোটা উপজেলা ভূমি অফিস। যিনি দীর্ঘদিন প্রায় এক যুগ ধরে ওই অফিসে কর্মরত রয়েছেন। মাঝে অন্যত্র বদলি হলেও পুনরায় একই অফিসে বদলি হয়ে চলে আসেন। এছাড়াও রয়েছে অফিসের সার্ভেয়ার রুহুল আমিন ও কানুনগো মনিমোহন ভুঁইয়ার ঘুস দৌরাত্ম্য।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জমির নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করার পর ফাইল অফিস সহকারী আশিকুল ইসলামের কাছে জমা দিতে হয়। আশিকুল ইসলাম ফাইল জমা নেওয়ার পর প্রতিস্বাক্ষরের জন্য স্ব-স্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ফাইলটি পুনরায় উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন। টাকা না পেলে এসব ফাইল সরিয়ে দেন অফিস সহকারী আশিকুল ইসলাম। আর ঘুস দিলে দ্রুত ও কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই কাজ হয়।

জেলা প্রশাসক বরাবর ভুক্তভোগী মো. ফয়েজ আহম্মেদ নান্টুর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, গত ৩ বছর আগে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী তথ্য গোপন করে মিথ্যা ওয়ারিশান সনদপত্র জমা দিয়ে দু’টি জমির নামজারি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ফয়েজ আহম্মেদ নামজারি দুটি বাতিল/সংশোধনের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। সংশোধনের জন্য অফিসের কানুনগো মনিমোহন ভুঁইয়া ও চেইনম্যান আলমগীর হোসেন ঘুস দাবি করেন। ঘুষ না দেওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঘুরছেন ভূমি অফিসে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সবাই তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সদ্য যোগদান করা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোরশেদুল আলম বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, এসব বিষয় আমার জানা নেই। যার কারণে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


১২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ।