খুলনার ইটভাটাগুলোতে শিশু শ্রমিকদের কাজ করানো হচ্ছে বর্বরভাবে

Khulna

Khulna

রাজনৈতিক ক্ষমতা, সাংবাদিক-প্রশাসন সবাই নিশ্চুপ খাকে উতকোচে।

এস এম নূর:

আর্শ্বিন থেকে চৈত্র ইটভাটার মৌসুম। এর মধ্যে হেমন্ত, শীত ও বসন্তকাল পড়ে। শৈত্য প্রবাহ, চৈত্রের দাবদাহ এ সময়ের মধ্যে। প্রতিদিন ভোর ৪টায় কর্মঘন্টা শুরু। যার শেষ সন্ধ্যা ৭টায়। টানা ১৫ ঘন্টা ইটভাটা শ্রমিকদের কর্ম দিবস। যুগ্ম শ্রম পরিচালক কখনোই এদিকে দৃষ্টি দেয় না। কোন শ্রমিক নেতারও পদার্পণ ঘটে না বছরের পর বছর। কাজের চাপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ভাটা শ্রমিকরা। জেলার ইটভাটাগুলোতে এবার লক্ষাধিক শ্রমিক শ্রম দিয়েছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, খুলনা জেলায় ১০৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে রূপসায় ৪২টি, ২ নং শ্রীফলতলায় ৪০-৫০টি, বটিয়াঘাটায় ২, তেরখাদায় ৫, দিঘলিয়ায় ২, কয়রায় ২, ফুলতলায় ১০, ডুমুরিয়ায় ৩১ ও পাইকগাছা উপজেলায় ১০টি। এসব ইট ভাটারমধ্যে অনেক ইট ভাটায় শ্রমিকদেরকে আটকে রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে এমনকি কোন কোন ইট ভাটার পাষন্ড মালিকরা শিশুদের পায়ে শিকল লাগিয়ে মধ্য যুগীয় দাস প্রথা কায়দায় কাজ করায়। সরেজমিনে কতিপয় ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমে প্রত্যেক ইটভাটায় সহস্রাধিক শ্রমিক কাজে নিয়োজিত থাকেন। শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, মাঝ-বৃদ্ধ বয়সী ভাটায় কর্মরত এসব শ্রমিকরা ভিন্ন ভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত থাকেন।

শ্রমিকদের ভাষ্যনুযায়ী কেউ গোড়ায় জাপ করে (মাটি কাটা), কেউ গোড়ায় টপ টানে আবার কেউ আগায় টপ টানার কাজ করেন। এছাড়া কতিপয় শ্রমিক ইট কাটা, খাড়ি দেয়া, চুলায় নিয়ে আসা, সেখানে সাজানো, রাবিশ দিয়ে কাঁচা ইট ঢেকে দেয়া, আগুন দিয়ে ইট পোড়ানো ও কতিপয় পাকা ইট তুলে নিয়ে আসার কাজে নিয়োজিত থাকেন। কর্মভেদে এসব শ্রমিক ভিন্ন মজুরি পান। ইট পাকানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা দৈনিক ৩শ’ টাকা, ইট কাটা, ঝাপ করা, টপ ও গোড়া টানাসহ বাকীরা দেড়শ’ টাকা এবং কতিপয় ১১০ টাকা হারে মজুরি পান।

কর্মরতদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। কৈয়া বাজার সংলগ্ন এনকেবি ভাটায় কর্মরত শ্রমিক তাসলিমা বানু জানান, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার লাউতলায় তাঁর বসতি। পেটের টানে এখানে কাজে এসেছেন প্রায় বছর চারেক আগে। আর ফিরে যাওয়া হয়নি তার। ভাটা মৌসুমে অন্যান্যদের মতন ভোর ৪টা থেকে চলে কাজ । শিশু শ্রম সরকারি ভাবে বন্ধ রাখলেও বাস্তবে তার ভিন্ন রূপ।