খুলনার বড়বাজার হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু। ভৈরব নদের পাড়ে অবস্থিত এ বাজারের জৌলুশ কিছুটা কালের পরিক্রমায় কমলেও অবৈধ ব্যবসায়ীদের দাপট বরং বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসা অবৈধ না হলেও ব্যবসাটা তারা করছে অবৈধভাবে। কাগজপত্র নেই, মালপত্র মজুদ করে অবৈধভাবে, ভ্যাট-ট্যাক্সে চরম ফাঁকি। জেলখানা ঘাট থেকে শুরু করে ৭ নম্বর ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন ভবনের নিচে-উপরে-ছাদে-চিলেকোটায় অভিযান চালালে চমকে ওঠার মতো বৈধ অবৈধ পণ্যের মজুদ পাওয়া যাবে। রয়েছে ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ি। প্যাকেট পরিবর্তন, সিল পরিবর্তন, মূল্য পরিবর্তন, অবৈধ প্যাকেজিং থেকে শুরু করে অবৈধ কাজের তালিকা বিশাল!

এ বাজারের বেশিরভাগ জায়গা সরকারি, অর্পিত অথবা দেবোত্তর সম্পত্তি। যুগ যুগ ধরে এই সম্পত্তিগুলো দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে শতাধিক ব্যবসায়ী। এরা শুধু নিজেরাই দখল করেনি, দখল করে ভাড়া দিচ্ছে, এমনকি দখল করা এসব পাবলিক প্রপার্টি বিক্রি করেও দিয়েছে।
অনেক সম্পত্তি অর্পিত এবং দেবোত্তর হওয়াতে এতদিন ডজন খানেক প্রভাবশালী হিন্দু ব্যবসায়ী এসব সম্পত্তির বিলিবণ্টন করতো। নিজেদের প্রভাব বলয় ঠিক রাখতে কালে কালে তারা সুবিধা ভাগ করে নেয় কয়েকজন মুসলিম ব্যবসায়ীর সাথে।
এরপর থেকে ক্রমান্বয়েই তারা বেপরোয়া হতে থাকে। দখল করা সরকারি, অর্পিত বা দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে বের হয়ে গেছেন— কয়েকজন এরকম ব্যবসায়ীরও সন্ধান পাওয়া গেছে। অনেকে বেঁচে কিনে ভারতে চলে গিয়েছেন, কিন্তু এসব সম্পত্তি তাদের নিজেদের ছিলো না। অনেকে দখল করা এসব সম্পত্তি বিক্রি করার পায়তারা করছেন।
পাবলিক প্রপার্টি দখল এবং হাত বদলের পাশাপাশি ব্যবসাগুলোও তারা করছে অবৈধভাবে। যুগের পর যুগ ধরে এভাবে করে আসলেও প্রশাসনিক নজরদারি নাই বললেই চলে। প্রকৃতপক্ষে প্রশাসন তারা ম্যানেজ করে।
রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তারা অবৈধ ভাড়ার টাকা ভাগাভাগি করে, তথ্য মতে ভাগ পায় প্রশাসন পুলিশও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, তেমন কোনো ব্যবসা না করেও শুধু প্রভাব খাটিয়ে এ জায়গা থেকে অনেকে কোটি কোটি টাকা বের করে নিয়ে যায়।
এসব জবরদখলের পাশাপাশি রয়েছে নদীদখল এবং নদীদূষণের মহোৎসব। নদীর পাড় দখল শেষ করে বিশ থেকে একশো ফুট ভেতর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে এসব দখলদারেরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ভূমিকা নেই, কারণ, প্রশাসন তারা ম্যানেজ করে।
