Headlines

জাহানারা ইমামের ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে নির্মূল কমিটির অনলাইন সম্মেলন

অনলাইন সম্মেলন

৩ মে (২০২০) শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্র এবং দেশ ও বিদেশের ৪৫টি শাখা এক অনলাইন আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছে। সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুই পর্বের এ স্কাইপে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব। দ্বিতীয় পর্বের প্রধান বক্তা ছিলেন চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: উত্তম কুমার বড়ুয়া। সম্মেলনে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘করোনা ভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় নির্মূল কমিটির চলমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচী’।

সম্মেলনে নির্মূল কমিটির কেন্দ্র ও জেলা/উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বহির্বিশ্বের শাখাসমূহের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড এবং ভারতীয় শাখার নেতৃবৃন্দ মূল বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ  চলাকালে জামায়াত ইসলামীর একাংশের নতুন আত্মপ্রকাশের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সম্মেলন থেকে ৬টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে—

১) বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীজনিত বিরাজমান মহাসংকটের কারণে মার্চ ২০২০-এ অনুষ্ঠিতব্য নির্মূল কমিটির জাতীয় সম্মেলন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সম্মেলনের পুরো তহবিল করোনা মহামারীর কারণে বিপন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করা হবে।

ক) বিভিন্ন জেলা/উপজেলা গত দেড় মাস যাবৎ নিজস্ব উদ্যোগে যে প্রচার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করছে সেগুলো অব্যাহত রাখার জন্য কেন্দ্র ও বৈদেশিক শাখাসমূহকে সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

২)  করোনা মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেশে সরকার, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও নাগরিক সমাজ কী করছে এসবের পাশাপাশি দেশে দেশে সংকট মোকাবেলায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার উদাহরণসমূহ তুলে ধরার জন্য নির্মূল কমিটি সাপ্তাহিক ‘জাগরণ’ নামে একটি বহুভাষিক অনলাইন বুলেটিন প্রকাশ করবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এই বুলেটিনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন ও আসীফ মুনীর তন্ময়। সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বে থাকবেন শেখ আলী শাহনেওয়াজ, সাঈফ উদ্দিন রুবেল ও দিব্যেন্দু দ্বীপ। বিভিন্ন ভাষায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন (১) জুলিয়ান ফ্রান্সিস (ইংরেজি), (২) প্রকাশ রায় (ফরাসী), (৩) তাপস দাস (হিন্দি), (৪) মুনাজা সিদ্দিকী (উর্দু), (৫) সাব্বির রহমান খান (সুইডিশ), (৬) ড. মুজিবুর দফতরি (ফিনিশ), (৭) খোরশেদ আহমেদ (নরওয়েজিয়ান), (৮) শাকিল রেজা ইফতি (তুর্কি), (৯) সোগোল বার্দি (ফার্সি) ও (১০) মহসিন আইরিশি (আরবী)। বুলেটিনের উপদেষ্ঠা সম্পাদকের দায়িত্বে থাকবেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

(৩) বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী করোনা যুদ্ধকালে সর্বত্র যখন সরকার ও জনগণ সকল ভেদাভেদের উধ্বে উঠে সম্মিলিতভাবে এক অভূতপূর্ব লড়াইয়ে নিয়োজিত সেই সময়ে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ধর্ম বর্ণ জাতিসত্তবিরোধী ঘৃন্য বক্তব্য প্রদান করে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-নাগরিক সংগঠন করোনা সংক্রমন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে তখন ’৭১-এর গণহত্যাকারী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা কিছু সংগঠনের নেতৃত্বের একাংশ নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশ ও এই জাতীর মহা দুর্যোকালে মানুষকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে মৌলবাদী সন্ত্রাসী জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের এ ধরনের তৎপরতার উপর কঠোর নজরদারির পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানাচ্ছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। 

(৪) করোনা মহাসংকট মোকাবেলার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসচ্ছল কর্মজীবী মানুষের জন্য যে বিশাল প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তা প্রত্যন্ত এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট পৌছাচ্ছে কিনা এবং এই ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি হচ্ছে কিনা তার উপর নজরদারি এবং স্বাস্থ্যসেবা ও ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সব রকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমরা নির্মূল কমিটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

(৫) বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে চলমান লকডাউন প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সরকার ও প্রশাসনের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের সর্বত্র এখন পর্যন্ত এই মহামারীর বিস্তার ঘটছে। আমরা মনে করি কোনোভাবে ৩১ মের আগে লক ডাউন প্রত্যাহার করা উচিৎ হবে না। এ বিষয়ে জনমত তৈরির ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। 

(৬) করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাকর্মী, গণমাধ্যকর্মী, ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহ যারা  অকালে প্রয়াত হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভরি শ্রদ্ধা জানাবার পাশাপাশি যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।

হাইলাইটস্

বহুভাষিক বুলেটিন ‘জাগরণ’

করোনা মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেশে সরকার, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা ও দেশে দেশে সংকট মোকাবেলায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার উদাহরণসমূহ তুলে ধরার জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সাপ্তাহিক ‘জাগরণ’ নামে একটি বহুভাষিক অনলাইন বুলেটিন প্রকাশ করবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এই বুলেটিনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন।

উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্বে থাকবেন সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির।

যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন ও আসিফ মুনীর তন্ময়। সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বে থাকবেন শেখ আলী শাহনেওয়াজ, সাইফ উদ্দিন রুবেল ও দীব্যেন্দু দ্বীপ।

বিভিন্ন ভাষায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন জুলিয়ান ফ্রান্সিস (ইংরেজী), প্রকাশ রায় (ফরাসি), তাপস দাস (হিন্দি), মুনাজ্জা সিদ্দিকী (উর্দু), সাব্বির রহমান খান (সুইডিশ), ড. মুজিবুর দফতরী (ফিনিশ), খোরশেদ আহমেদ (নরওয়েজিয়ান), শাকিল রেজা ইফতি (তুর্কি), সোগোল বাদ্রি (ফার্সি) ও মহসিন আইরিশি (আরবি)।

টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম অব্যহত রাখা

চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: উত্তম বড়ুয়া বলেছেন, করোনা মহামারীর এ সংকটকালীন সময়ে নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটি ১০৮ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে যে সেল গঠন করেছে সেখানে ফোন এবং অনলাইনের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত অথবা অন্য যেকোনো সংকটাপন্ন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হবে, পাশাপাশি যে কোনো হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে।

এবি পার্টির কার্যক্রম নজরদারি

নবগঠিত এবি পার্টির কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে আনার আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

সংগঠনটির মতে, দেশ যখন করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে তখন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের একাংশ নতুন দলের আত্মপ্রকাশ করে মানুষকে প্রতারিত করছে।

সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটা জামাতের ‘আল বদর পার্টি’, কোনোভাবেই তাদের সহ্য করা হবে না। এই তাজুল ইসলামকে আমি চিনি, এ তো ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন।  

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসবিরোধী যুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর একাংশের নতুন দলের আত্মপ্রকাশের ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেতারা।

শাহরিয়ার কবির বলেন, বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সব রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী-নাগরিক সংগঠন করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে তখন একাত্তরের গণহত্যাকারী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনা কিছু সংগঠনের নেতৃত্বের একাংশ নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি নির্মূল কমিটির বিভিন্ন স্তরের সকল নেতাকর্মী এবং সমমনা সংগঠনগুলোকে এই দলের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারী করতে বলেছেন।

নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য বক্তব্য/দেশ

শাহরিয়ার কবির, কেন্দ্রীয় সভাপতি: সম্মেলন থেকে নেওয়া ছয়টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। (উপরে লিপিবদ্ধ হয়েছে)।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, উপদেষ্টা, কেন্দ্রীয় কমিটি: করোনার এই দুর্যোগাকালীন সময়ে ১০৮ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সহায়ক সেল গঠন করায় চিকিৎসা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক উত্তম বড়ুয়া, এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সংগত কারণেই হাসপাতালগুলোও অনেক ক্ষেত্রে এ সময়ে ব্যর্থ হচ্ছে, কিন্তু নির্মূল কমিটির চিকিৎসা সহায়ক কমিটি জাতির এ দুর্যোগকালে এগিয়ে এসেছে। আমরা প্রতিদিন অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব এবং অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়ার লেখা পড়ছি, আমরা উপকৃত হচ্ছি। তিনি আরো বলেন. জাতির এ দুঃসময়ে, যখন সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাস সামাল দিতে ব্যস্ত, তখন কয়েকজন জামাতি আল বদর  ‘আমার বাংলা পার্টি’ নামে হঠাৎ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন,  এটা জামাতের ‘আল বদর পার্টি’, এটা নতুন বোতলে পুরনো মদ, কোনোভাবেই তাদের সহ্য করা হবে না। এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ইনি বিএনপির আমলে চার বছরে ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে সচিব হয়েছিলেন,  মজিবুল রহমান রঞ্জু —যিনি এক সময় শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন এবং এই তাজুল ইসলামকে আমি চিনি, সে একজন কট্টর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী লোক, আমি যখন আপলি বিভাগে যুদ্ধাপরাধীদের মামলা পরিচালনা করছিলাম তখন এই তাজুল ইসলাম ব্যারিস্টার রাজ্জাকের সাথে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। এ দলের উপদেষ্টা রয়েছেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক, যে পালিয়ে চলে গিয়েছেন, যখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সে নিজেও একজন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাজ করেছেন ১৯৭১ সালে। এই দলটি আর কিছু নয়, এটা জামাতেরই সৃষ্টি, জামাতের আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্যই এ দলের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ, তারা জানে জামাত আজ গণধিকৃত দল, এই দলটি হয়ত শীঘ্রই নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে, সেই অবস্থায় যাতে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য তারা এ দলটি গড়ে তুলেছেন।

কাজী মুকুল, সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটি: করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করার জন্য লিফলেট এবং বর্ণীল ফেস্টুন করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে, যেগুলো সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শাখায় পাঠানো হয়েছে, নেতাকর্মীরা সেগুলো বণ্টন করেছেন। কেন্দ্রের সহ সভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে কয়েকটি পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। চাপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, রাজশাহী, নোয়াখালীর রামগতি খুব ভালো কাজ করছে। কুড়িগ্রাম সহ অনেক শাখা কেন্দ্রের সহযোগিতা চেয়েছে। 

আরোমা দত্ত এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা: ‘আমার বাংলা’ নামের জামাতের নতুন যে পার্টিটা হলো, এটা যেন নির্বাচন কমিশন থেকে কোনোভাবে নিবন্ধন নিতে না পারে। আর যেটা বলব, এই যে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে —এটার বণ্টন নীতি কীভাবে পালিত হচ্ছে তার কোনো পরিষ্কার ফ্রেমওয়ার্ক নেই, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ পরিবার তারা ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে কিনা, তাছাড়া ত্রাণগুলো দেওয়া হচ্ছে শহরকেন্দ্রীকভাবে ভেতরে যাওয়া হচ্ছে না। আমি বলব, জেলাভিত্তিকভাবে আমরা একটি তালিকা করে যাতে প্রধানমন্ত্রীর অফিশে পাঠাতে পারি।

শওকত বাঙালি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক, চট্টগ্রাম থেকে: শহীদ জনীন জাহানারা ইমামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অনেক পরিবার— এখন পর্যন্ত এক হাজার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেগুলো আমরা নির্মূল কমিটির মাধ্যমে বণ্টন করেছি। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

কামরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী থেকে: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের জন্মদিন উপলক্ষে মতিহার থানা ইউনিট পঁচিশ জন লোককে নগদ অর্থ সহযোগিতা এবং খাদ্য সহযোগিতা করেছে। আমরা সাধারণত এই দিনে প্রোগ্রাম করে থাকি, এবার একটু ভিন্নভাবে পালিত হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে পাঠানো লিফলেট এবং বিলবোর্ড বিতরণ করা হয়েছে, আমাদের রাজশাহী কমিটির উদ্যোগেও বিলবোর্ড ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। নবাবগঞ্জ জেলা এবং নঁওগা জেলা কমিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে, আমরা রাজশাহী নির্মূল কমিটি খাদ্যের মজুত সংগ্রহ করে রেখেছি, কারো প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছে পৌঁছে যাব। রাজশাহীর মেয়র মহোদয়কে আমরা ইতোমধ্যে এক টন চাল দিয়েছি। কিছু মানুষকে আমরা বিকাশ করে টাকা দিয়েছে যারা আমাদের কাছে সশরীরে পৌঁছাতে পারেনি। আমাদের কমিটির মধ্যে কিছু লোক আছে যারা সমস্যায় পড়েছেন, আমরা তাদের পাশেও দাঁড়াচ্ছি। রাজপাড়া থানা মানুষের মধ্যে সাবান এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে। আমাদের স্টুডেন্ট ফ্রন্টের বিথি এবং মিঠু তাদের নিজ নিজ এলাকাতে ত্রাণ বিতরণ করেছে। আমাদের মহিলা কমিটির সেক্রেটারি মুন্নী, তিনি খুব কর্মোদ্যামী, তিনি নির্মূল কমিটির হয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এ পর্যন্ত চারশো জন মহিলাকে সহযোগিতা করেছেন। কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা এখন পর্যন্ত আমাদের তেমন প্রয়োজন নেই, তবে আমাদের মহিলা ইউনিটগুলোর জন্য ভবিষ্যতে সহযোগিতা লাগতে পারে। আমাদের মেয়র এখানে খুব ভালো কাজ করছেন, তিনি গোষ্ঠীভিত্তিকভাবে সহযোগিতা করছেন— শিল্পীদেরকে, সংস্কৃতিকর্মীদেরকে, কৃষকদেরকে, এভাবে।   

আসীফ মুনীর তন্ময়, সভাপতি, আইটি সেল, কেন্দ্রীয় কমিটি: সাপ্তাহিক যে অনলাইন বুলেটিন বের করার কথা হয়েছে, সে বিষয়ে বলছি— যারা লেখা পাঠাবে তাদের কী কী নির্দেশনা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। আপাতত সময় মতো বুলেটিন বের হওয়া দরকার।

নাহিদা ফরিদা মুনমুন, সাধারণ সম্পাদক, রামগতি, নোয়াখালি: কেন্দ্র থেকে পাঠানো সচেতনতামূলক লিফলেটগুলো বিতরণ করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে। এক হাজার পরিবারকে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। একশো পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সরকারি ত্রাণ বিতরণে রামগতিতে অসন্তুষ্টি রয়েছে।

দিলীপ মজুমদার, আহ্বায়ক, কুমিল্লা: কুমিল্লার করোনা পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, দেবিদ্বার, হোমনা, বুড়িচং সহ কয়েকটি উপজেলায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, ত্রাণের চেয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদি বিতরণের দিকে আমরা বেশি মনোযোগ দিয়েছি।

পিণ্টু সাহা, সংস্কৃতিকর্মী, কেন্দ্রীয় কমিটি: গার্মেন্টস্ শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাউল এবং লোকশিল্পীরা খুব অসহায় অবস্থায় আছে— লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮৯ জন শিল্পীর তালিকা আমরা করেছি, ১৯টি গুরুগৃহ রয়েছে, তারা কোনো সহযোগিতা পায়নি। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগযোগ করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া আমরা পাইনি। সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দুস্থ ভাওয়াইয়া ও বাউল শিল্পীদের জন্য উদ্যোগ নিতে জনাব পিন্টু সাহাকে নির্মূল কমিটির লালমনিরহাট জেলা শাখার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন এবং কেন্দ্র থেকে এই শিল্পীদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান।

মইনুল ইসলাম, সভাপতি, লালমনিরহাট: লিখিত প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, সরকার যে বিশাল প্রণোদনা দিয়েছে সেই প্রণোদনা দিয়ে কী হচ্ছে সে বিষয়ে আপনার (শাহরিয়ার কবির) রেফারেন্স দিয়ে আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। লোকশিল্পী, বাউল শিল্পী এবং ভাওয়াইয়া শিল্পীদের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে উদ্যোগ নিতে বলেন জনাব শাহরিয়ার কবির।

পোখরাজ আহমেদ, সদস্য সচিব, নোয়াখালি: নোয়াখালি এখনো খুব আক্রান্ত হয়নি। আরেকটা বিষয় বলতে চাই, ‘আমার বাংলা পার্টি’ নামে রাজাকারদের নতুন যে দলটি আত্মপ্রকাশ করল সে বিষয়ে অনলাইনে আরো বেশি কাজ হওয়া দরকার। লকডাউনে প্রসঙ্গে বলব শাহরিয়ার ভাই (লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির) যেটা বলেছেন ৩১ তারিখের আগে লক ডাউন তুলে দেওয়া কোনো অবস্থাতেই ঠিক হবে না। অনেক জায়গাতে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিষয়টিতে আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি। 

মোয়াজ্জেম হোসেন লাভলু, সাধারণ সম্পাদক, রংপুর: আমরা কয়েকটি সংগঠন মিলে আট লক্ষ টাকা যোগাড় করে ১২০০ কর্মহীন মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এছাড়া কেন্দ্রের লিফলেট বিতরণ করেছি, বিভিন্ন স্থানে জীবানুনাশক ছিটানো হয়েছে। 

মহেন্দ্র নাথ সেন, সাধারণ সম্পাদক, খুলনা: লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, উপজেলাগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কর্মহীন মানুষদেরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। 

কাজী আজাদ জাহান শামীম, সদস্য সচিব, ময়মনসিংহ: নির্মূল কমিটির চিকিৎসক সহায়তা কমিটির সভাপতি উত্তম বড়ুয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মামুন আল মাহতাব —তাদের সাথে আমি ময়মনসিংহে একসাথে ছাত্ররাজনীতি করেছি, তাদেরকে অনলাইনে পেয়ে আমি খুব আনন্দিত। করোনা ভাইরাসের এ সংকটকালে আমরা কয়েকটি সংগঠন মিলে ময়মনসিংহে আলোচনা করেছি— আমরা একযোগে একসাথে কাজ করার জন্য একমত হয়েছি, আমরা স্ব স্ব সংগঠনের ব্যানারে প্রচারণা চালাচ্ছি, অনলাইনে প্রাচরণা চালাচ্ছি। আমাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, আমাদের জেলা প্রশাসকের সহায়তায় তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ রিপোর্টে তার করোনা নেগেটিভ এসেছে। জেলা প্রশাসক, এবং মেয়র মহোদয়ের সহযোগিতায় আমরা ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, আমরা বাড়িতে বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। ২৬ মার্চ থেকে রাস্তার অভুক্ত মানুষকে আমরা রান্না করে প্যাকেট খাবার দিচ্ছি। রোজার মাস থেকে আমরা ইফতার দেওয়া শুরু করেছি। প্রশাসনের সাথে লক ডাউন এবং হোম কোয়ারেন্টিন করার ব্যাপারেও আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা সহায়তা করছে।  

রাশেদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক, বগুড়া: বগুড়াতে যারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে, তারা ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে– আক্রান্ত অনেকে পালিয়ে বেড়ান, তার থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। কেন্দ্র থেকে পাঠানো লিফলেটগুলো বিভিন্ন উপায়ে আমরা বিতরণ করেছি মানুষের মধ্যে। বগুড়া শহরে কিছু পরিবারের মধ্যে আমরা খাদ্য সহায়তা দিয়েছি, একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে ষাটজন শিশুর মধ্যে আমরা সহায়তা প্রদান করেছি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের মধ্যে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি আমরা ৬৫টি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছি, তবে সেখানে অন্তত আরো এক হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা প্রয়োজন।  

আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক, ঝিনাইদহ:  শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯১ তম জন্মদিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে পাঠানো সকল লিফলেট, জেলা, উপজেলা এমনিক ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। ঝিনাইদহে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি,  দুঃস্থ অসহায় মানুষদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

মমতাজ বেগম, সাধারণ সম্পাদক, কুমারখালি, কুষ্টিয়া: জাহানারা ইমামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, কুমারখালিতে আমরা মাস্ক এবং স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি, ব্যক্তিগতভাবে নির্মূল কমিটির হয়ে কিছু মানুষকে ত্রাণ দিয়েছি। কুমারখালিতে আমি সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি, আমাদের এমপি সাহেব এবং মেয়র সাহেব খুবই হেল্পফুল, কুমারখালিতে পর্যাপ্ত কাজ হচ্ছে।

ইস্রাফিল খান বাপ্পী, সাধারণ সম্পাদক, নঁওগা জেলা: জাহানারা ইমামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নঁওগা জেলা কমিটি শহরের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক লিফলেট বিতরণ করেছি, এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পঞ্চাশটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

মীর নাসিরুদ্দীন উজ্জ্বল, সাধারণ সম্পাদক, মুন্সিগঞ্জ: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবরাখবর বুলেটিনে আসবে জেনে আমরা আনন্দিত।  পত্রিকার খবর মোতাবেক শ্রীনগরের কুমার পরিবারগুলোর খবর আমরা নিচ্ছি, কিন্তু এ ছাড়াও এখানে জেলে পরিবার রয়েছে, কামার সম্প্রদায়ের লোক আছে, দলিত সম্প্রদায়ের আরো কিছু পরিবার রয়েছে, যাদেরকে খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।  সরকারি ত্রাণ সামগ্রী তাদের কাছে পৌঁচাচ্ছে না। এইসব পরিবারের কাছে আমরা কোনো ত্রাণ সহায়তা দিতে পারি কিনা। 

 

নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য বক্তব্য/বিদেশ

পার্থ দে, কোলকাতা: কোলকাতা লাল তালিকায় আছে, তবে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়বে বলে আশংকা করা হয়েছিল ততটা বাড়েনি। কিছু কিছু চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন, মূল সমস্যাটা হচ্ছে নিচুতলার মানুষদের খাদ্য সমস্যা নিয়ে— ফলে সেদিক থেকে একটা চাপ আসছে লকডাউন তুলে দেওয়ার জন্য। আমরা সাংগঠনিকভাবে কিছু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।

বিদ্যুৎ দেবনাথ, কোলকাতা: ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, কোলকাতায় মানুষ এখন ভেদাভেদ ভুলে গিয়েছে, হিন্দু মুসলিম পরস্পর পরস্পরের পাশে দাঁড়াচ্ছে —মানবতাই যে মূল ধর্ম সেটি করোনার এই সংকটকালে প্রমাণিত হচ্ছে। 

মৌসুমী মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক, মুর্শিদাবাদ: করোনা ভাইরাস নিয়ে লোক শিল্পীদের দুটি গান কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আমরা লোকশিল্পী এবং বাউল শিল্পীদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি।

সাব্বির খান, সুইডেন: সুইডেনের সুশীল সমাজ, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী —সকলের সাথে যোগাযোগ করে সুইডেনের পরিস্থিতি বুলেটিনে তুলে ধরা সম্ভব হবে। সুইডেন লকডাইনে না গিয়ে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এবং সেখানে বয়স্ক মানুষ মারা যাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির জনাব সাব্বির খানকে বিষয়টি নিবন্ধে তুলে ধরতে পরামর্শ দেন।

তরুণ কান্তি চৌধুরী, সুইডেন: স্ত্রীর (করোনা ভাইরাস আক্রান্ত) অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, সুইডেন দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখার ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। বাজারটাও আমরা ফোনে করছি এবং দুই মিটার দূরত্বে থেকে গ্রহণ করছি। সামাজিক দূরত্ব সুইডেনে খুব কড়াকড়িভাবে মানা হচ্ছে। পিপিই-এর সংকট সুইডেনেও রয়েছে, কারণ, পিপিই একবারই ব্যবহার করা যায়, ফলে চাহিদার তুলনায় সংকট আছে। 

রানা খান, সুইডেন: লকডাউন ব্যতিরেখে সুইডেন কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে সে বিষয়ে ডাঃ রানা বলেন, সুইডনে লকডাউনে না গিয়ে হয়ত ভালোই করেছে, লকডাউন দিলে এর চেয়ে ভালো কিছু হতো না। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। সুইডেন গত ৩ তারিখ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে মৃত্যু সংখ্যা (দুহাজারের কিছু বেশি) উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুইডেন চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে খুব বেশি কিছু করতে পারছে তেমনটি নয়, তবে মানুষ সেখানে তুলনামূলক বেশি সচেতন, এবং সুইডেন এ বিষয়টির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে। লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির যোগ করেন— সকল দেশের পরিস্থিতি একরকম নয়, ফলে সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত নয়, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত লক ডাউনের কারণেই সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে। জনাব শাহরিয়ার কবির ডা: রানা খানকে সুইডেনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বুলেটিনে নিবন্ধ প্রকাশ করতে পরামর্শ দেন, যেটি সুইডিশ ভাষায়ও প্রকাশিত হবে।  

খলিলুর রহমান, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড: শহীদ জননী জাহানার ইমামের ৯১ তম জন্মদিনের জন ঘরোয়া আয়োজনের তথ্যটি দিয়ে তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডে প্রথম আক্রান্তের ঘটনা গঠেছে ৫ মার্চ, ১৬ মার্চ থেকে লক ডাউনে যায় সরকার। শুধু মুদি দোকানগুলো খোলা আছে, রেস্টুরেন্টগুরো বন্ধ, কিছু টেক অ্যাওয়ের অনুমোদন আছে। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ত্রিশ হাজার ছাড়ালেও মৃতের সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। বাঙালি সম্প্রদায় থেকে জেনেভায় দুইজন আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা সুস্থ হয়েছেন। খুব কঠিন লক ডাউনে সুইজারল্যান্ড যায়নি, কিছু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলছে, তবে সামাজিক দূরত্বের ওপর কড়াকড়ি আছে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো বন্ধ আছে। জেনেভার ক্যান্টনের সোস্যালিস্ট পার্টির সাথে নির্মূল কমিটির নেতাকর্মীদের যোগাযোগ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সোস্যালিস্ট পার্টি নির্মূল কমিটির কার্যক্রমকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে। সুইজারল্যান্ড থেকে একটি প্রতিবেদন বুলেটিনের প্রথম সংখ্যায় পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। সুইজারল্যান্ড কীভাবে করোনা মোকাবেলা করছে —বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে পারমর্শ দেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।  

এমএম মোর্শেদ, বেলজিয়াম: আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের দেশ সম্পর্কে, আমাদের সেক্যুলার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে ভুল বুঝানো হয়েছে, ফলে আমাদের চিন্তাভাবনা ভালোভাবে নিতে পারেনি তারা। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, বুলেটিন আরবী ভাষায়ও প্রকাশ করা যায় কিনা। 

খোরশেদ আহমেদ, নরওয়ে: নরওয়েরর লোকসংখ্যা সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন, আয়তনে দেশটি বাংলাদেশের তিনগুণ— করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি নরওয়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। ঘনবসতীপূর্ণ না হওয়াতে নরওয়েতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ, আমি মনে করছি বাংলাদেশে এটা খুব কঠিন হচ্ছে। নরওয়ের পরেস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত নিবন্ধ লিখতে জনাব খোরশেদ আহমেদকে পরামর্শ দিয়েছেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।  

মুজিবুর দফতরি, ফিনল্যান্ড: করোনা পরিস্থিতিতে ফিনল্যান্ডের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে তাদের ইতিবাচক কাজগুলো বর্ণনা করে তা ফিনিশ এবং বাংলা ভাষায় বুলেটিনে প্রকাশ করার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। 

স্বীকৃতি বড়ুয়া, নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কের পরিস্থিতি ভয়াবহ, এখানে সংক্রমিত হয়েছেন এখন পর্যন্ত তিন লক্ষের বেশি, মারা গিয়েছেন প্রায় বিশ হাজার, বাঙালি মারা গিয়েছেন ২২৬ জন। আমি নিজেই অসুস্থ ছিলাম, দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। নিউইয়র্ক নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা কবি হাসান আল আব্দুল্লাহ অসুস্থ হয়েছিলেন, এখন সুস্থ হয়েছেন, ওনার স্ত্রী, আমাদের সহ সভাপতি কবি নাজনীন শিমনও অসুস্থ ছিলেন, উনি সুস্থ হয়েছেন, আমাদের আরেকজন সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেনের স্ত্রী করোনা ভাইরাসে মারা গিয়েছেন। নির্মূল কমিটির নিউইয়র্কের অন্য সবাই ভালো আছেন। জনাব শাহরিয়ার কবির এরকম সংকটকালের মধ্যেও শহীদ জননী, নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা জাহানারা ইমামের জন্মদিন পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় নিউইয়র্ক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।

শাকিল রেজা ইফতি, তুরস্ক: তুরস্কে মৃত্যুর হার অনেক কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তুরস্ক কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং-এর ওপর গুরুত্ব আলোপ করেছে। ঈদকে ঘিরে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে অর্থনৈতিক একটা বিষয় আছে ফলে বাংলাদেশ নিয়ে আমরা ভাবনা হচ্ছে বাংলাদেশ যেন এই ভুলটি না করে । করোনাকালীন সময়ে এবং পরে আমরা যেন কিছু মানবিক দায়িত্ব পালন করতে পারি। এটি যার যার তরফ থেকে করা যায় কিনা। সাগঠনিকভাবেও করা যায়। গার্মেন্টস্ শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক, পাহাড়ী জনগোষ্ঠী সম্পর্কে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জনাব শাহরিয়ার কবির শাকিল রেজা ইফতিকে তুর্কী ভাষায় বুলেটিন প্রকাশের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রথম সংখ্যায় তুরস্কের উল্লেখযোগ্য লেখকদের লেখা যাতে সেখানে যুক্ত হয়।