Headlines

ঢাকায় বাড়ছে উবার পাঠাও বাইক শেয়ারিং, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি …

পাঠাও বাইক দুর্ঘটনায়নিহত

যেহেতু আলাদা কোনো লেন নেই, ফলে উবার পাঠাও রাইড শেয়ারিং বাইকগুলো খুবই ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার রাস্তায় চলাচল করছে। ভাড়ায় চালিত হওয়ায় এরা খানিকটা বেপরোয়া হয়, উদ্দেশ্য থাকে যাত্রী নামিয়ে আবার দ্রুত যাত্রী তুলবে। ফাঁকফোকড় দিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ায় ঢাকার অনেক যাত্রীই এখন উবার পাঠাও বাইক পছন্দ করছে, সেই সাথে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। অনেক দুর্ঘটনার খবর জানা যাচ্ছে, অনেক আবার সংবাদে আসছে না। বলা যায়, দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা খবরের তুলনায় অনেক বেশি।  


ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরলে বোঝা যাবে যে দুর্ঘটনা কতটা বেড়েছে।

পাঠাও রাইড শেয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার সময় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) নামের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ২৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টার পর এই দুর্ঘটনা ঘটে।

রাজধানীর মতিঝিলে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-এর চালকসহ মোটর সাইকেলের এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। ২ সেপ্টেম্বর, রোববার, রাত ১০টার পর এই দুর্ঘটনা ঘটে।

ঢাকার জুরাইনে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন সেভ দ্য চিলড্রেন এর এইচআইভি কর্মসূচীর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৪৫)। শনিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও এর একটি মোটরসাইকেলে সোবহানবাগ থেকে পোস্তগলা যাবার পথে জুরাইন রেলেগেটের কাছে তিনি এ দুর্ঘটনার শিকার হন।

পরিসংখ্যান অনেক লম্বা। এগুলো কয়েকটা উদাহরণ মাত্র …ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়

এ বিষয়ে কথা বলছিলাম, গবেষক দিব্যেন্দু দ্বীপ-এর সাথে। তিনি জানালেন, ‍‍”আমার অভিজ্ঞতা মিশ্র। প্রথমত রাইডশেয়াারিং চালকদের আমার দক্ষই মনে হয়েছে, তবে অনেকে বেপরোয়া, অতিরিক্ত আয়ের লক্ষ্যে দ্রুত তারা গন্তব্যে পেঁৗছুতে চান, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া আলাদা লেন না থাকলে ঢাকা শহরে এত গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল নিরাপদে চালানো অসম্ভব। এছাড়া আরেক বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এরা যাত্রীদের জন্য যে হেলমেটটি রাখছে সেটি পরিপূর্ণ হেলমেট নয়। দুর্ঘটনা ঠেকাতে এটি যথেষ্ট হবে না। কোনোমতে দায়সারা একটি হেলমেট এরা পিছনে রাখছে। তাছাড়া অ্যাপ ব্যবহার না করে চুক্তিভিত্তিক যাওয়ায় মনিটরিং-এর বিষয়টি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কমিশনের ঝামেলা এড়াতে চালকরা এটি করছে। এক্ষেত্রে যাত্রীদের আরো সজাগ হতে হবে।”

ডা: দীপ্রা বলেন, ‍”আমাদের সংস্কৃতিতে মেয়েরা একপাশে পা দিয়ে মোটর বাইকে বসে, ফলে মেয়েদের জন্য বাইকে চড়ার ঝুঁকিটা সবসময়ই একটু বেশি। অপরিচিতি কারো বাইকে চড়লে এই ঝুঁকিটা আরো বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ধরে বসার সুযোগ না থাকায় যেকোনো সময় সে বাইক থেকে ছিটকে যেতে পারে। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লাবণ্যের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটিই হয়ত হয়েছে। “

মঙ্গলবার বিকাল ৪টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কয়েকজন মোটরসাইকেলচালক দাঁড়িয়ে আছেন। চালকরা লোকাল গাড়ির হেলপারের মতো যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন, যাত্রীরা বুঝে নিচ্ছেন পিছনে একটি অতিরিক্ত হেলমেট থাকায়। এরকমই একজন বাইক চালক এক যাত্রীর কাছে ফার্মগেট যেতে ১০০ টাকা ভাড়া চাইলেন। যাত্রী রাজি না হওয়ায় পাশের আরেক চালক ৮০ টাকায় যেতে রাজি হলেন। এভাবেই ‘রাইড শেয়ারিং’ মোটরসাইকেল চালকরা বেশি লাভের আশায় অ্যাপস ব্যবহার না করে চুক্তিভিত্তিক যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে যাত্রী ও চালক দুই পক্ষের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এছাড়া বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ, ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করা এবং যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে সেবা প্রদানকারী সংস্থাটির কল সেন্টারে ফোন করলেও তেমন লাভ হয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

আবার যাত্রীদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রশংসাও আছে। তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত এবং স্মার্ট হওয়ায় এরা ভালো সার্ভিস দিচ্ছে বলে জানালেন কয়েকজন যাত্রী। তারা বললেন, একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে পারলে ঢাকা শহরে চলাচলের একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে মোটর বাইক। এজন্য আলাদা লেন থাকা জরুরী বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।