দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে গভীর রাতে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অধ্যাপক নূর উন নবী

দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পুলিশি পাহারায় মধ্যরাতে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী।
 
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত শুক্রবার গভীর রাতে তার বাসভবনের পেছনের দরজা দিয়ে একটি ভাড়াকরা মাইক্রোবাসে করে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
 
গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়ে যায় উপাচার্য যেকোনো সময় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যাবেন। এরপরই গণমাধ্যম কর্মীরা ক্যাম্পাসে তার বাসভবনের সামনে ভিড় করতে থাকেন। বেশ কয়েকবার অধ্যাপক নূর-উন-নবী বের হওয়ার চেষ্টা করলেও ক্যামেরা দেখে আবার বাসায় ফিরে গেছেন।
 
অবশেষে রাত ১২টা ২৮ মিনিটে তার বাসার পেছনের ছোট্ট দরজা দিয়ে বের হয়ে পুলিশি প্রহরায় একটি ভাড়াকরা মাইক্রোবাসে উঠে চলে যান। গণমাধ্যম কর্মীরা অনেক চেষ্টা করলেও তিনি কারও সঙ্গেই কথা বলেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সের অধ্যাপক নূর-উন-নবীকে বেরোবির তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে ২০১৩ সালের ৬ মে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার। গত শুক্রবার শেষ হয় তার মেয়াদ।
 
ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে তার সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাবেক সভাপতি আপেল মাহমুদ, শিক্ষক জোবায়ের ইবনে তাহের ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. নাজমুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ শাখার দুই সহকারী পরিচালক মোতালেব হোসেন, আশরাফুল হক ও সহকারী প্রক্টর ড. শফিক আশরাফসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে বিদায় জানাতে বাসভবনে যান।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, উপাচার্য চলে যাওয়ার আগে তার সমর্থক শিক্ষকদের খালি থাকা ডিন ও বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন বলে মনে করা হলেও তিনি তা করেননি। ফলে তার সমর্থক শিক্ষকরা অনেকেই দেখা করতে আসেননি। অন্যদিকে বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীর চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত শুক্রবার থেকে উপাচার্যের পদটি শূন্য হয়ে গেল।
 
আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শূন্য রয়েছে উপ-উপাচার্য পদটি। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই। এ অবস্থায় বেরোবি এখন অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উপ-উপাচার্যের পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে উপাচার্য পদটি শূন্য হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালনেরও কেউ থাকছেন না।
 
অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদটি শূন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ না দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। এতে অর্থ সংক্রান্ত সব কাজ, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পরীক্ষার কমিটি গঠন ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ থমকে যাবে। এ ছাড়া দফতরগুলোর গতি মন্থর হয়ে পড়বে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টরা চরম বিড়ম্বনায় পড়বেন। চরম বিঘ্নিত হতে পারে শিক্ষা কার্যক্রম।
 
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বলেন, উপাচার্য পদটি শূন্য হওয়ার বিষয়টি নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করা হবে। উল্লেখ্য, বেরোবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি ৬টি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির গঠিত সবশেষ কমিটি বেরোবির উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভর্তি পরীক্ষা ও আপ্যায়নের টাকা নিয়ে অনিয়ম, সরকারি গাড়ি ব্যবহারে স্বেচ্ছাচারিতা, উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, একসঙ্গে ১৪টি পদ ধরে রাখা ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করা। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন উপাচার্য একেএম নূর-উন-নবী।
#সংবাদটি সকালের খবর থেকে নেওয়া হয়েছে।